প্রতীকী ছবি।
করোনাকে রুখতে প্রতিষেধক নেওয়ায় গুরুত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু রাজ্যে সেই প্রতিষেধকের ঠিকঠাক জোগান কোথায়? আর তার ফলেই শেষ কয়েক দিন ধরে কার্যত ঢিমেতালে চলছে প্রতিষেধক দেওয়ার কর্মসূচি। এখন কেন্দ্র ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রশ্ন উঠেছে, এখনই প্রতিষেধক ঠিকঠাক দেওয়া যাচ্ছে না, ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে প্রবীণদেরও, তা হলে এর পর কী হবে? নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রাজ্যগুলি সরাসরি উৎপাদক সংস্থার কাছে থেকে টিকা কিনতে পারবে। কিন্তু সংশয়, পর্যাপ্ত উৎপাদন হবে তো?
কলকাতার এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘প্রথম দিকে প্রতিষেধক নিতে অনেকেই ভয় পাচ্ছিলেন। যখন আবার তাঁরা প্রতিষেধক কেন্দ্রমুখী হওয়া শুরু করলেন, তখন চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যে সমস্যা দেখা দিল। এটা খুবই দুর্ভাগ্যের।’’ প্রতিষেধক জোগানের সমস্যায় পূর্ব মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া-সহ আরও কয়েকটি জেলায় প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ় দেওয়া বন্ধ রয়েছে। কারণ, দ্বিতীয় ডোজ় যাঁরা নেবেন, তাঁরা যাতে নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিষেধকটি পেয়ে যান। প্রতিষেধকের জোগানের অভাবে কিছু জেলায় প্রতিষেধক দেওয়ার কেন্দ্রের সংখ্যাও কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি জেলারই দৈনিক মোটামুটি লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা থাকলেও সেই পরিমাণ প্রতিষেধকই মিলছে না। একই অবস্থা কলকাতাতেও। প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার সময় হয়ে গেলেও তা মিলছে না। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘প্রতিষেধকের ভাঁড়ে মা ভবানী হাল। এমন চললে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি কবে হবে, সেটাই ভাবার বিষয়।’’
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘দৈনিক ১ লক্ষের বেশি জনকে প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিলাম। কিন্তু প্রয়োজনমাফিক জোগান না থাকলে কী আর করা যাবে।’’ প্রতিষেধকের জোগানের বিষয়ে প্রতি নিয়ত কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে রাজ্য। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতি এখনও পুরো স্বাভাবিক হয়নি। যেমন হাওড়ায় প্রতি দিন ২৫ হাজারের চাহিদা থাকলেও প্রতিষেধক মিলছে ১০-১২ হাজার। ফলে সকলকে প্রতিষেধক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘আমরাও নিরুপায়!’’ একই হাল উত্তর ২৪ পরগনাতেও। আগে সোম থেকে শনিবার প্রতিষেধক দেওয়া হলেও এখন তা আর হচ্ছে না বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। শুক্রবারের পরে সোমবার সেখানে প্রতিষেধক দেওয়া হয়। তবে আজ, মঙ্গলবারের প্রতিষেধক দেওয়া জোগানের উপরে নির্ভর করবে বলেই জানান ওই হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো।
একই রকম ভাবে ডায়মন্ডহারবার স্বাস্থ্য জেলায় প্রাথমিক ভাবে ২২২টি কেন্দ্রে প্রতিষেধক দেওয়া হলেও, এখন অধিকাংশ বন্ধ। চালু রয়েছে মাত্র ৬০-৭০টি। দিনকয়েক প্রতিষেধক বাড়ন্ত ছিল হুগলিতেও। বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নোটিস ঝুলিয়ে তা জানানো হচ্ছিল। শেষ দু’দিন প্রতিষেধক এলেও তা সংখ্যায় অনেক কম। বীরভূমে ৪৫ বছরের বেশি বয়সি প্রায় ৬ লক্ষকে প্রতিষেধক দিতে হলেও, এখন পর্যন্ত ২ লক্ষ ২০ হাজার জনকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলাতেও ধীর গতিতে চলছে প্রতিষেধক দেওয়ার কর্মসূচি। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিষেধক দেওয়া হলেও সরবরাহের অভাবে পূর্ব বর্ধমানের অন্যান্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিষেধক দেওয়া
বন্ধ। যদিও জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানায়, আজ, মঙ্গলবার থেকে ওই সমস্ত জায়গাতেও প্রতিষেধক দেওয়া হবে।
আবার পুরুলিয়াতে দ্বিতীয় ডোজ় দিতে হবে ৫৩,১৬২ জন বাসিন্দা ও স্ট্রং রুমের পাহারায় থাকা কয়েকজন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। সম্প্রতি জেলায় কিছু প্রতিষেধক আসায় ৪৫ হাজার ডোজ় মজুত রয়েছে। তাই এ দিন থেকে দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া শুরু হয়েছে। বাঁকুড়া স্বাস্থ্য জেলাতে দৈনিক ১০ হাজারের চাহিদা থাকলেও এ দিন মাত্র ১৭ হাজার ডোজ় এসে পৌঁছেছে। প্রতিষেধকের ঘাটতি থাকায় মাঝে প্রায় এক সপ্তাহ সমস্যা হয়েছে পশ্চিম বর্ধমানেও। একই হাল পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরেরও। চাহিদার অনুপাতে প্রতিষেধকের জোগান না থাকায় পশ্চিম মেদিনীপুরে বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মানুষজন সকাল থেকে লাইন দিয়েও পাচ্ছেন না। খড়্গপুর, কেশিয়াড়িতে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভও হয়েছে। প্রতিষেধকের অভাবে নদিয়া জেলাতেও সব কেন্দ্র চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। যেগুলি চালু আছে তা থেকেও দৈনিক প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দিতে হয়েছে। যেমন জেলা হাসপাতালের দুটি সেন্টার থেকে যেখানে কম বেশি দৈনিক প্রায় এক হাজার প্রতিষেধক দেওয়া হত, সেখানে সংখ্যাটা কমিয়ে ছশো হচ্ছে। একটা সময় দৈনিক গড়ে প্রায় ২২ হাজার জনকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে সেই সংখ্যা তো কমছেই, পাশাপাশি প্রতিষেধক দেওয়ার কেন্দ্রের সংখ্যাও কমাতে হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy