প্রতীকী ছবি।
শুধু প্রতিষেধক কম পাওয়া নয়, সমস্যা তৈরি হয়েছে সময় মতো করোনার প্রতিষেধকের জোগান সংক্রান্ত তথ্য না-মেলায়।
সুপ্রিম কোর্টে সম্প্রতি হলফনামা দিয়ে কেন্দ্র জানিয়েছিল, রাজ্যগুলিতে কবে, কত করোনার টিকা পাঠানো হচ্ছে তা নির্দিষ্ট সময় অন্তর তারা আগাম জানাচ্ছে। কিন্তু তার পরেও বুধবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর দাবি করেছে, দিল্লি কত টিকা পাঠাচ্ছে বা আদৌ পাঠাচ্ছে কিনা, তা তারা ২৪ ঘণ্টা আগেও জানতে পারছে না! ফলে টিকা বণ্টন নিয়ে পরিকল্পনা করা যাচ্ছে না। ফলশ্রুতি, টিকার জন্য জেলায়-জেলায় মানুষের অবর্ণনীয় দুর্গতি।
টিকা পাঠানো নিয়ে রাজনীতির অভিযোগও উঠছে। গুজরাত, যেখানে বিজেপি-র সরকার তার তুলনায় অন্যত্র টিকা পৌঁছচ্ছে কম। কীসের ভিত্তিতে কোন রাজ্যে দৈনিক কত টিকা তা ঠিক করা হচ্ছে সে সম্পর্কে কেন্দ্র স্পষ্ট ভাবে কিছুই জানাচ্ছে না। মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জনসংখ্যার নিরিখে কোন রাজ্যে কত টিকা যাবে তা ঠিক হচ্ছে। কিন্তু সেখানেও বিস্তর প্রশ্নের জায়গা থাকছে।
মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এপ্রিলে গুজরাতে মোট জনসংখ্যার পরমাণের ১৬.৪% ডোজ় হিসাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, যা দেশের মধ্যে সব চেয়ে বেশি। এর ফলে ২০ এপ্রিলের মধ্যে গুজরাতে ১৪.৯% মানুষ অন্তত এক ডোজ় ভ্যাকসিন পেয়ে গিয়েছেন। অথচ, মহারাষ্ট্রে (যেখানে বিজেপি-বিরোধী সরকার) জনসংখ্যার পরিমাণের মাত্র ৮.৫% ডোজ় ভ্যাকসিন গিয়েছে। করোনা সেখানে গুজরাতের থেকে অনেক গুণ ভয়াবহ আকার নিলেও ২০ এপ্রিল পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে অন্তত ১ ডোজ় ভ্যাকসিন পেয়েছেন ৮.৬% মানুষ। যা গুজরাতের থেকে অনেক কম।
দিল্লি মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০.৪% ডোজ় ও পশ্চিমবঙ্গ মোট জনসংখ্যার ৮.৪% ডোজ় ভ্যাকসিন পেয়েছে। কেন রোগ সংক্রমণের মাত্রা কম থাকা সত্ত্বেও গুজরাতে জনসংখ্যার নিরিখে বেশি ভ্যাকসিন যাবে এবং কেন তার থেকে অনেক বেশি সংক্রমণ সত্ত্বেও মহারাষ্ট্র, দিল্লি বা পশ্চিমবঙ্গ কম ভ্যাকসিন পাবে, এর ব্যাখ্যা মেলেনি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লব আগ্রবালের অবশ্য দাবি ‘‘আমরা প্রতিটি রাজ্যকে সমান ভাবে দেখি। কারও প্রতি ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে কোনও পক্ষপাতিত্ব করা হয় না।’’
তবে রাজ্যর স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমি রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার শীর্ষ কর্তা হয়েও ২৪ ঘণ্টা আগে জানতে পারছি না, কেন্দ্র কত ডোজ় ভ্যাকসিন পাঠাবে। ওরা আগাম কোনও তথ্য জানাচ্ছে না।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘অনেক সময় টেলিভিশন দেখে জানতে পারছি যে, ভ্যাকসিন নিয়ে প্লেন আসছে। তখন তাড়াতাড়ি কর্মীদের তা আনতে পাঠাচ্ছি। ফলে, কোন কেন্দ্রে কখন কত ভ্যাকসিন থাকবে এবং সেই অনুযায়ী কত মানুষকে টিকা নিতে আসতে বলা হবে, তা ঠিক করা যাচ্ছে না। অথচ, ঠিকমতো ভ্যাকসিনের জোগান থাকলে দিনে ১০ লাখ ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষমতা রাজ্যের আছে। পশ্চিমবঙ্গের জনস্বাস্থ্যের পরিকাঠামো অত্যন্ত ভাল।’’ কেন্দ্র হলফনামায় দাবি করেছিল, প্রতি ১৫ দিনে ৪৫-এর ঊর্ধ্বে থাকা মানুষের ভ্যাকসিন কত পাঠানো হবে তা রাজ্যগুলিকে আগাম জানানো হচ্ছে। এবং ১৮-৪৫ এর নাগরিকদের জন্য এক মাসে কত ভ্যাকসিন পাঠানো হবে তা-ও আগাম বলা হচ্ছে। রাজ্যের পাল্টা দাবি, এমন কোনও তথ্যই তারা জানতে পারছে না।
স্বাস্থ্য অধিকর্তার কথায়, ‘‘মহারাষ্ট্র বা দিল্লির মতো যে সব জায়গায় করোনা মারাত্মক আকার নিয়েছে সেখানে বেশি ভ্যাকসিন দিতেই হবে। এতে কারও আপত্তি নেই। কিন্তু বাকি রাজ্যগুলিতে যতটুকু ভ্যাকসিন সরবরাহ হবে তার পরিমাণ এবং আসার সময় তো আগাম বলতেই হবে। তা না-হলে আমরা বণ্টন প্রক্রিয়া সাজাব কী ভাবে?’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ধরা যাক আগে থেকে কিছু না জানিয়ে এক দিন রাত ১০টায় ৪ লক্ষ ডোজ় ভ্যাকসিন চলে এল। তখন দূরবর্তী জেলাগুলিতে একটু বেশি টিকা পাঠানোর চেষ্টা হয়। কারণ, বার-বার দূরে টিকা পাঠানো সহজ নয়। সেখানে বেশি পাঠাতে গিয়ে কলকাতা ও আশপাশের জেলায় টিকা কম পড়়ল। তার পর তিন দিন স্বাস্থ্য মন্ত্রক আর টিকা পাঠাল না বা নামমাত্র পাঠাল। এ রকম পরিস্থিতিতেই টিকার চরম টানাটানি হচ্ছে। তবে যতটুকু ভ্যাকসিন আসছে তা সুষ্ঠু ভাবে বণ্টনের ব্যাপারে রাজ্যের তরফেও বেশ কিছু গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কোন কেন্দ্রে, কবে কত জন ভ্যাকসিন পাবেন বা আদৌ পাবেন কিনা সে ব্যাপারে তথ্যও মিলছে না। কলকাতা পুরসভা টিকাকরণে দুর্ভোগ কমাতে টোকেন দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেছিল। এত দিন স্বাস্থ্য দফতর সেটাও করেনি। এ সব নিয়ে কথা উঠতে বুধবার বিকেলে নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তাতে টোকেন ব্যবস্থা-সহ আরও কিছু নিয়ম চালু করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy