Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

কোভিড: প্রশ্ন ছুটি-নীতির প্রয়োগ নিয়ে

ফলতার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক প্রবাল গায়েনের মৃত্যু ঘিরে ছেলে সায়ন্তন যে প্রশ্ন তুলেছেন তাতেই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে কোভিড ছুটি-নীতি।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৪৬
Share: Save:

ছুটির সময় বেঁধে দিয়েছে আইসিএমআরের (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ) নির্দেশিকা। শয্যা সঙ্কটের সমাধানে সেই নির্দেশিকাকে স্বাগত জানাতে কার্যত কোনও রাজ্যই সময় নষ্ট করেনি। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে একাধিক রোগীকে অল্প দিনের ব্যবধানে ফের ভর্তি করতে হচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে ছুটি-নীতির বাস্তবসম্মত প্রয়োগ হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

ফলতার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক প্রবাল গায়েনের মৃত্যু ঘিরে ছেলে সায়ন্তন যে প্রশ্ন তুলেছেন তাতেই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে কোভিড ছুটি-নীতি। সায়ন্তন ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন। শনিবার তিনি জানান, গত ২৪ অগস্ট তাঁর বাবার দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলে। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। ১০ দিন পরে হাসপাতাল থেকে বেহালার বাড়িতে ফেরার পথেই বাবা অসুস্থ বোধ করেন। দুপুরে শ্বাসকষ্ট-সহ শারীরিক অসুস্থতার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সে দিনই চিকিৎসককে প্রথমে এসএসকেএম এবং পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করানো হয়। বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয় প্রবালবাবুর।

এ দিন সায়ন্তন বলেন, ‘‘১০ বছর আগে বাবার হার্টে অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে বাবাকে হাসপাতালে রেখেছিলাম। যে রোগী হাসপাতাল থেকে বেরিয়েই গুরুতর অসুস্থ হন, তাঁর ছুটি হল কী ভাবে! নিজে চিকিৎসক হয়ে কিছুতে মেনে নিতে পারছি না।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, হার্টের সমস্যার জন্য বাবা একটি ওষুধ খেতেন। বেসরকারি হাসপাতালে দু’দিন ওই ওষুধ দেওয়া হয়নি বলে প্রবালবাবু জানিয়েছিলেন। কোভিড আক্রান্ত কো-মর্বিডিটির রোগীর শেষ পরিণতির জন্য সেটিও একটি কারণ বলে সায়ন্তনের দাবি।

চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, গত ২২ মে বিজ্ঞপ্তি জারি করে আইসিএমআরের নির্দেশিকা যথাযথ ভাবে পালন করতে বলেছে স্বাস্থ্য ভবন। নির্দেশিকার অন্যথা হচ্ছে কি না দেখতে চালু হয়েছে ‘পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট স্কোর’। তাঁদের প্রশ্ন, দিনের সময়সীমা মানতে গিয়ে নির্দেশিকার অন্য বক্তব্যগুলি কি মানা হচ্ছে! কারণ, একই নির্দেশিকায় মাঝারি মাপের অসুস্থ রোগীকে ছুটি দেওয়ার আগে অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা, রোগীর শারীরিক সমস্যা কী রয়েছে, তা দেখতে বলা হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ রোগীর ক্ষেত্রে ছুটির আগে আরটি-পিসিআরে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট বাধ্যতামূলক। একমাত্র মৃদু অসুস্থতার ক্ষেত্রেই উপসর্গ দেখা দেওয়ার ১০ দিনের মাথায় শেষ তিন দিন জ্বর না থাকলে ছুটি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

মৃত চিকিৎসকের ঘটনা ব্যতিক্রম নয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে একাধিক রোগীকে ফের ভর্তি করানোর প্রয়োজন হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সম্প্রতি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ই এম বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের এসএনসিইউ বিভাগের প্রধান গোবিন্দচন্দ্র দাস। প্রোটোকল মেনে ওই চিকিৎসককে ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠানোর পরে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ফলে তাঁকে ফের সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, ফুসফুসের সংক্রমণের জেরে আশঙ্কাজনক হয়ে পড়েছিলেন ওই চিকিৎসক।

পিয়ারলেসের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার সুদীপ্ত মিত্রও বলেন, ‘‘ফুসফুসে ফাইব্রোসিস, রক্ত জমাট বাঁধার কারণে স্ট্রোক-সহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা নিয়ে সাত দিনের মধ্যে অনেক রোগী ফের ভর্তি হচ্ছেন। একটি ওয়েবিনারে এমসের চিকিৎসকেরাও একই কথা বলছিলেন। এ ধরনের দু’জন রোগীকে আমরা হারিয়েছি। কোভিডে সকল রোগীকে এক মাপকাঠিতে রেখে ছুটি দেওয়া যাবে না।’’

কোভিড রোগীর পরের দিকে যে ধরনের শারীরিক জটিলতা হচ্ছে তা আটকানোই এখন চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন রাজ্যের করোনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পালও। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে ফের রোগী ভর্তির বিষয়টি আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। এ সংক্রান্ত আরও কিছু চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্মত তথ্য পেলে কোভিড ম্যানেজমেন্ট প্রোটোকলে তার অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি ভাবা যেতে পারে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy