প্রতীকী ছবি।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অক্সিজেন, রেমডেসিভিয়ার, হাসপাতালের শয্যা নিয়ে এমনিতেই মানুষ দিশাহারা। তার উপরে খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠেছে মেডিক্যাল বিমা সংক্রান্ত হেনস্থা।
অভিযোগ, বিশেষ করে মাঝারি বা ছোট মাপের বহু বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে করোনা রোগীরা ‘ক্যাশলেস’ পরিষেবা পাচ্ছেন না। বিমা সংস্থার তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও অনেক হাসপাতাল প্রথমেই জানিয়ে দিচ্ছে, এই সময়ে তাদের পক্ষে বিমার আওতায় রোগী ভর্তি নেওয়া সম্ভব নয়। নগদ টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাতে রাজি থাকলে তবেই শয্যা মিলবে!
রোগীরা অসহায়। তাঁদের হাতে বিকল্পও নেই। কারণ, অধিকাংশ নামী হাসপাতালে (যারা ক্যাশলেস পরিষেবা দিচ্ছে) শত চেষ্টা করেও শয্যা মিলছে না। অভিযোগ, এই সুযোগেই প্রচুর টাকা দাবি করছে অনেক মাঝারি বা ছোট হাসপাতাল। অনেক ক্ষেত্রে নগদে সেই বিল মিটিয়ে নথি জমা দেওয়া সত্ত্বেও বিমা সংস্থা থেকে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য বিমা আন্দোলনের কর্মী চন্দন ঘোষাল জানান, পার্ক সার্কাসের একটি নার্সিংহোম সাধারণ শয্যায় শুধু অক্সিজেন দিয়ে করোনা রোগীকে রাখতে দিনে ১৯-২২
হাজার টাকা নিচ্ছে। তারা প্রথমেই জানাচ্ছে যে, বিমার আওতায় থাকা রোগীকে ভর্তি নেওয়া হবে না। একই কথা বলছে বেলেঘাটার একটি নামী নার্সিংহোম। কালীঘাটের একটি হাসপাতাল নিচ্ছে ২৬-৩২ হাজার টাকা। বেহালার একটি হাসপাতাল দৈনিক ৩০ হাজার চাইছে।
গত ২২-২৩ এপ্রিল ‘ইনসিয়োরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (আইআরডিএ) পরপর দু’টি নির্দেশিকায় জানিয়েছে, বেশ কিছু হাসপাতাল বিমার নগদহীন পরিষেবা দিচ্ছে না। অনেকে এলোপাথাড়়ি বিল করছে। এটা বন্ধ না-করলে তারা কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অভিযোগ, সেই হুঁশিয়ারিতেও বদলায়নি পরিস্থিতি।
রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাঝারি মানের হাসপাতালগুলি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অত্যন্ত সমস্যার সৃষ্টি করছে। প্রথম ঢেউয়ে মূলত বড় বা নামী হাসপাতালগুলিতে বিল নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছিল। মানুষ তাই এ বার ভয়ে সেগুলিতে যাচ্ছেন না বা জায়গাও পাচ্ছেন না। তাঁরা মাঝারি মানের হাসপাতালগুলিতে যাচ্ছেন এবং প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।’’
মাত্রাতিরিক্ত বিল ও গাফিলতির কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশন সম্প্রতি কলকাতার তিনটি মাঝারি মানের হাসপাতালে রোগী ভর্তি অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। কমিশন জানাচ্ছে, লিখিত অভিযোগ পেলে তাদের পক্ষে যতটা করা সম্ভব তারা করবে। তবে বিমার বিষয়ে অভিযোগ জানাতে হবে আইআরডিএ-র ‘ওম্বুডসম্যান’-এর কাছে। কিন্তু রোগী সামলে, আরও হাজারও ঝামেলা সামলে বেশির ভাগ মানুষের পক্ষেই এই অভিযোগ জানানো হয়ে ওঠে না। তাতে পার পেয়ে যায় হাসপাতালগুলি।
নার্সিংহোম অ্যাসোসিয়েশন কর্তা শেখ আলহাজউদ্দিন বলেন, ‘‘শুনছি, কিছু নার্সিংহোম ও হাসপাতাল অস্বাভাবিক হারে টাকা চাইছে। এই ধরনের অভিযোগ পেলে স্বাস্থ্য দফতরের উচিত, সেই নার্সিংহোমের লাইসেন্স বাতিল করা।’’
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার রিজিওনাল হেল্থ অফিসার চন্দ্রাণী মহলানবিশ বলেন, ‘‘হাসপাতাল ক্যাশলেস পরিষেবা দিলে আমরা নজরদারি রাখতে পারি, যা রিইম্বার্সমেন্টের ক্ষেত্রে রাখা যায় না। তখন অনেকেই ইচ্ছেমতো টাকা নেয়। যেটা করোনাকালে হচ্ছে। আমরা যত অ্যাডজাস্ট করার চেষ্টা করছি, তত মানুষকে লুটছে হাসপাতালগুলি।’’
সমস্যা দেখা দিয়েছে করোনার প্রথম ঢেউয়ে শুরু হওয়া ‘করোনা কবচ’ ও ‘করোনা রক্ষক’ পলিসি নিয়েও। করোনার চিকিৎসার খরচের কথা মাথায় রেখেই এই বিমা দু’টির অনুমতি দিয়েছিল আইআরডিএ। কিন্তু একাধিক বিমা সংস্থা (তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাও আছে) বেশি লাভ হচ্ছে না বলে এমন বিমার পুনর্নবীকরণ বন্ধ করেছে বা বিমা বন্ধ করে দিয়েছে। আইআরডিএ ১০ মে এ ব্যাপারে লিখিত হুঁশিয়ারি দিলেও পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি।
একটি বিমা সংস্থার হেল্থ অফিসার বলেন, ‘‘আমাদের করোনা রক্ষক পলিসি পুরোপুরি বন্ধ। কারণ, ক্লেম রেশিও খুব বেড়ে গিয়েছিল। তাতে সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছিল। আর করোনা কবচ রিনিউ হচ্ছে না। কেউ নতুন করে করতে চাইলে করতে পারবেন, কিন্তু পুরনো পলিসি রিনিউ হবে না। এটা কর্পোরেট সিদ্ধান্ত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy