গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
টানা পাঁচ দিন দু’হাজারের ঘরে ঘোরাঘুরির পর রাজ্যে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ফের তিন হাজারে গিয়ে পৌঁছল। শনিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, এ দিন রাজ্যে নতুন করে তিন হাজারের বেশি মানুষ কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। তবে গত কয়েক দিনের মতো এ দিনও নতুন আক্রান্তের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে বেশি মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
স্বাস্থ্য দফতরের ওই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ১২ জন। তাতে রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৭৬৬। এর মধ্যে এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৯৯৬, যা শুক্রবারের তুলনায় ৩৫৩ কম। গত ২৩ অগস্ট থেকে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ধারাবাহিক ভাবেই কমে আসছে, যা যথেষ্ট আশাজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৫৩ জন করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। গতকাল এই সংখ্যাটা ছিল ৫৬। এখনও পর্যন্ত নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে ৩ হাজার ১২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন।)
আরও পড়ুন: বকেয়া জিএসটি মিটিয়ে দেওয়া হবে, চিঠি লিখে রাজ্যগুলিকে জানাল কেন্দ্র
তবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তার চেয়ে সুস্থতার হার অনেকটাই বেশি রাজ্যে, যা স্বস্তি জোগাচ্ছে প্রশাসনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৩১২ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সব মিলিয়ে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৬৪৪ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তার ফলে রাজ্যে সুস্থতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১.৪২ শতাংশ।
প্রতি দিন যত জন রোগীর কোভিড টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যক রোগীর কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকেই ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৪৩ হাজার ২৩২ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে, দৈনিক টেস্টের নিরিখে এখনও পর্যন্ত যা সর্বাধিক। পরীক্ষা বেশি হওয়াতেই এ দিন বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরে সংক্রমণ দরা পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে দৈনিক সংক্রমণ বাড়লেও, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সংক্রমণের হার ৬.৯৭ শতাংশে নেমেছে। গত দশ দিন ধরে লাগাতার সংক্রমণের এই হার নিম্নমুখী। সব মিলিয়ে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১৮ লক্ষ ১ হাজার ৯৬০ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে।
দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে গতকাল কলকাতাকে ছাপিয়ে গিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগণা। এ দিন ফের কলকাতা উপরে উঠে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শহরে ৪৭০ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫৬০ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন করোনা রোগী।
সুস্থতার নিরিখে যদিও জেলাগুলির মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনাই এ দিন এগিয়ে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬৩ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭৫৩ জন রোগী। প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এ দিন নতুন করে সংক্রমিত হন ১৮৪ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২৪৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৬ জন করোনা রোগীর।
হাওড়া এবং হুগলিতেও নতুন আক্রান্তের চেয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন এমন মানুষের সংখ্যা বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় হাওড়ায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪৯ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ১৮২ জন। করোনার প্রকোপে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। হুগলিতে এ দিন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১১৯ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩১৩ জন করোনা রোগী। প্রাণ হারিয়েছেন ৩ জন।
এ ছাড়াও, বাঁকুড়া, মালদহে ২ জন করে করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। দার্জিলিং ও কোচবিহারে মৃত্যু হয়েছে ২ জন করে করোনা রোগীর। ১ জন করে করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছেন পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারে।
তবে সব মিলিয়ে রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের চেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের সংখ্যা বেশি হলেও, বেশ কিছু জেলায় উল্টো ছবি ধরা পড়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পূর্ব মেদিনীপুর। এ দিন আলিপুরদুয়ারে ১৭৮ জন নতুন করে সংক্রমিত হেলও, সুস্থ হয়েছেন মাত্র ৭৮ জন। কোচবিহারে এ দিন আক্রান্তের নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১৪৫ জন মানুষ। সুস্থ হয়ে উঠেছেন মাত্র ৪২ জন রোগী। নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পূর্ব মেদিনীপুরে এই সংখ্যাটা যথাক্রমে ১১৪ ও ২৮, ২৯৩ ও ১৪৪ এবং ২০১ ও ১৩৩।
ব্যবধান কম হলেও আক্রান্ত ও সুস্থের সংখ্যায় ফারাক রয়েছে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং পূর্ব বর্ধমানেও। গত ২৪ ঘণ্টায় মালদহে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫৫ জন করোনা রোগী। মুর্শিদাবাদে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৯৯ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮১ জন। বীরভূম, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং পূর্ব বর্ধমানে এই ফারাকটা যথাক্রমে ৪৩ ও ৩১, ৫৭ ও ৪৬, ১৭ ও ৬ এবং ৫১ ও ৪৮।
আরও পড়ুন: অনুপ্রবেশের ছক বানচাল, পাক সীমান্তের কাছে ২০ ফুট লম্বা সুড়ঙ্গ!
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy