Advertisement
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus

ন’মাসের শিশুকে বাড়িতে রেখে রোগ যাচাই রাত্রিদিন

চিকিৎসক-মাইক্রোবায়োলজিস্ট অগ্নিভ মজুমদার জানান, সতর্কতা হিসেবে বাড়িতে কার্যত নিজেদের স্ব-আরোপিত কোয়রান্টিনে রেখেছেন নাইসেড-কর্মীরা।

নাইসেডে কর্মরত চিকিৎসক-গবেষকেরা। নিজস্ব চিত্র

নাইসেডে কর্মরত চিকিৎসক-গবেষকেরা। নিজস্ব চিত্র

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২০ ০৪:২০
Share: Save:

নামটা এখন বহুচর্চিত। আইসিএমআর-নাইসেড (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজ়িজ়েস)। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন যে-প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে গবেষকদল কাজ করে চলেছে, তা জানেন ক’জন!

ন’মাসের শিশুকে বাড়িতে রেখে হাসিমুখে কর্তব্যের টানে করোনা-পরীক্ষার গবেষণাগারে দায়িত্ব পালন করছেন মা। মাতৃত্বকালীন ছুটি তো দূরের কথা, সপ্তাহে এক দিনও কর্তব্যে বিরাম নেই রিসার্চ সায়েন্টিস্ট অনন্যা চট্টোপাধ্যায়ের। শিশুর দেখাশোনার জন্য পরিচারিকা রেখেছিলেন। কিন্তু করোনা-আতঙ্কে তাতে আপত্তি করেন ভাড়াবাড়ির মালিক। অসহযোগিতার এই আবহেও কর্তব্যে অবিচল তরুণী গবেষক। ডিসেম্বরে বিয়ে হয়েছে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট মধুমন্তী বিশ্বাসের। সামাজিক প্রতিকূলতাকে দূরে সরিয়ে মানুষের সেবায় ব্রতী নববধূও। বস্তুত, ওই কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থার ১৮ জন সদস্য আপাতত যুদ্ধক্ষেত্রের সৈনিক। করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের সরকারি চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের হাত শক্ত করে চলেছেন তাঁরা (দু’জন মেডিক্যাল মাইক্রোবায়োলজিস্ট, দু’জন সায়েন্টিস্ট, দু’জন রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট, দু’জন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, চার ল্যাব টেকনিশিয়ান, ছ’জন মাল্টি টাস্কিং স্টাফ)।

করোনা পরীক্ষায় ঝুঁকিও অনেক। চিকিৎসক-মাইক্রোবায়োলজিস্ট অগ্নিভ মজুমদার জানান, সতর্কতা হিসেবে বাড়িতে কার্যত নিজেদের স্ব-আরোপিত কোয়রান্টিনে রেখেছেন নাইসেড-কর্মীরা। চিকিৎসক-মাইক্রোবায়োলজিস্ট হাসিনা বানু জানান, নাইসেডে কাজ করেন বলে তাঁদের এক সহকর্মীকে বাড়ির মালিক ঘর ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। নাইসেড-কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত সেই বাড়ি-মালিক বিষয়টি বুঝতে পারেন।

নাইসেড-প্রধান শান্তা দত্ত বলেন, ‘‘রাজ্যবাসীর কথা ভেবেই আমাদের ছেলেমেয়েরা নিজেদের পরিবারের কথা ভুলে দিনরাত নমুনা পরীক্ষার কাজ করছেন। এত কিছুর পরেও যখন আমাদের ভিন্‌ গ্রহের বাসিন্দা ভাবা হয়, ভীষণ খারাপ লাগে।’’

৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সোমবার পর্যন্ত তারা ২৯৯টি ‘কোভিড১৯’ নমুনা পরীক্ষা করেছে নাইসেড। আক্রান্তদের দ্বিতীয় দফার পরীক্ষা আলাদা। সেই সংখ্যাটা হল ২০। সেই সব মিলিয়ে মোট করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৩১৯ জনের। কমিউনিটি স্তরে করোনা ছড়িয়েছে কি না, তা দেখতে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘সারি’ (সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস) প্রক্রিয়ায় পরীক্ষায় হয়েছে ১৩৭টি।

সন্দেহভাজনের শরীরে ভাইরাস বাসা বেঁধেছে কি না, দ্রুত সেই তথ্য পাওয়া খুব জরুরি। কারণ, ওই তথ্যের ভিত্তিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাদের আইসোলেশনে পাঠাতে হবে, কাদের কোয়রান্টিন প্রয়োজন, সেই তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্য দফতর। তাদের অনুরোধে মুর্শিদাবাদের এক করোনা-সন্দেহভাজনের লালারসের নমুনা রাত ৩টেতেও পরীক্ষা করতে দ্বিধা করেননি নাইসেড-কর্মীরা।

রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের আন্তরিকতা নিয়ে কিছুটা অনুযোগ রয়েছে নাইসেড-প্রধানের। তিনি জানান, ‘কোভিড ১৯’-কে হারাতে গেলে কেন্দ্র-রাজ্যকে একযোগে কাজ করতে হবে। শান্তাদেবী বলেন, ‘‘দিল্লির সঙ্গে কথা বলে সব সমস্যার সমাধান করতে দেরি হয়। রাজ্যের লোকেরা মিলে যদি সমাধানের পথ খুঁজি, তা হলে ভাল হয়। রাজ্যবাসীর স্বার্থে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই।’’ এ বিষয়ে প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কথা বলতে রাজি নাইসেড-প্রধান। তাঁর কথায়, ‘‘উনি তো মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যের প্রধান। আমাদের কোনও অসুবিধা হলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যেতে পারি না? কিন্তু চেয়েও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পাই না।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health NICED ICMR Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy