Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

দু’মাস সতর্ক থাকুন: মমতা

লকডাউন প্রসঙ্গে এ দিন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘গবেষকেরা বলেছেন ৪৯ দিন লকডাউনের কথা। না-হলে এর বৃদ্ধির গতি বাড়বে। এপ্রিল এবং মে— এই দু’মাস সবাই সাবধানে থাকুন।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২০ ০৩:৫৬
Share: Save:

করোনা নিয়ে আগামী দু’মাস প্রত্যেককে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি-সহ প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে সব জেলার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্তদের করোনা-কেন্দ্রিক বিমার পরিমাণ ও মেয়াদ বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেন তিনি। পাশাপাশি, গরিবদের খাবার পেতে যাতে কোনও অসুবিধা না-হয়, তা-ও নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।

লকডাউন প্রসঙ্গে এ দিন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘গবেষকেরা বলেছেন ৪৯ দিন লকডাউনের কথা। না-হলে এর বৃদ্ধির গতি বাড়বে। এপ্রিল এবং মে— এই দু’মাস সবাই সাবধানে থাকুন। করোনাকে আমরা ভয় পাব না, করোনা আমাদের ভয় পাবে।’’ কোয়রান্টিন প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ডাক্তারের পরামর্শ মেনে কোয়রান্টিনে থাকতে হবে এবং চিকিৎসা করাতেই হবে। তা না-মানলে ভারত সরকারের আইন অনুযায়ী কড়া শাস্তি হবে। হাত জোড় করে বলব, সবাই ভাল থাকুন। কোয়রান্টিনের ১৪টা দিন দেখতে দেখতে কেটে যাবে। ১৪ দিনের পরে আরও সাত দিন, ২৮ দিন থাকতে হতে পারে, কী আছে?’’

জন-সুরাহায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা

• চিকিৎসক, নার্স, আশা, অঙ্গনওয়াড়ি, অ্যাম্বুল্যান্স, ওষুধ সরবরাহ-কর্মী, পুলিশ ও তাঁদের পরিবারের জন্য দশ লক্ষ টাকার বিমা

• বিমার মেয়াদ ১৫ মে পর্যন্ত

• অতিরিক্ত ৩০০ ভেন্টিলেটর

• বেসরকারি হাসপাতালেও আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং কোয়রান্টিন সেন্টার

• রেশন কার্ড না থাকলে অস্থায়ী রেশন কার্ড

• ২০ লক্ষ মানুষকে আরও ৫ কেজি খাদ্যশস্য বিনামূল্যে

• রাজ্য সরকারি কর্মীদের ১ তারিখেই বেতন

• এপ্রিল-মে মাসের সামাজিক পেনশন একসঙ্গে

• প্রতি সন্ধ্যায় রক্তদান শিবির করবে পুলিশ

• স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কেউ স্বেচ্ছাসেবক হতে চাইলে ০৩৩-২৩৪১-২৬০০ ফোন করতে পারেন

• দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত মিষ্টির দোকান খোলা। খোলা থাকবে মুদির দোকানও

করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী, সাফাইকর্মীদের জন্যই পাঁচ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা ঘোষণা করেছিল রাজ্য। এ দিন তা বাড়িয়ে ১০ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি, ওষুধ সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত কর্মী, আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, অ্যাম্বুল্যান্স চালক, আইসোলেশন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত বেসরকারি হাসপাতালের কর্মীদেরও এই বিমার আওতায় আনা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, উপভোক্তার পরিবারও বিমার সুবিধা পাবেন। প্রয়োজনে দু’মাসের জন্য সাফাইকর্মীদের পারিশ্রমিক ১০ হাজার টাকা করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

জেলা ধরে ধরে এ দিন স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিটা ব্লকে কোয়রান্টিন কেন্দ্র তৈরি করার নির্দেশ জেলাশাসকদের দিয়েছে রাজ্য সরকার। নবান্নের নির্দেশ, চালু কোনও হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা যাবে না। বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম বা অন্য কোনও ভবনকে চিহ্নিত করতে হবে। কয়েকটি জেলা প্রশাসনের সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা সহজপাঠ নয়, শক্তপাঠ। দায়িত্ব ঠিক মতো পালন না-করা ঠিক হচ্ছে না। আজকের মধ্যে পুরো প্রস্তুতি নিতে হবে। খরচ নিয়ে ভাবতে
হবে না।’’

লকডাউন পর্বে রাজ্যে যাতে কেউ অভুক্ত না-থাকেন তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত ২০ লক্ষ গরিব মানুষকে আরও পাঁচ কেজি করে খাদ্যশস্য দেবে সরকার। যাঁদের রেশন কার্ড নেই, তাঁদের সাময়িক ভিত্তিতে কোনও কার্ড দেওয়ার জন্য খাদ্যসচিব মনোজ আগরওয়ালকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘কাউকে যাতে না-খেয়ে থাকতে না হয় সেই জন্যই এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কার্ড নেই বলে কোনও গরিব মানুষ যেন সরকারের এই সুবিধা বঞ্চিত না হন। এটা দেখতেই হবে।’’ ভিন্‌ রাজ্য থেকে আসা অন্তত ৪০ হাজার শ্রমিকের যাতে কোনও অসুবিধা না-হয়, প্রশাসনকে তা-ও দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এখন থেকে সাধারণ কাজের সময়ে মুদি-সহ জরুরি জিনিসপত্রের দোকান খোলা থাকবে। জিনিসের জোগান যাতে স্বাভাবিক থাকে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ভাগ করে দেন মমতা। হোম-ডেলিভারি, এবং জরুরি জিনিসপত্রের যাতায়াতে নিয়ন্ত্রণ রাখছে না সরকার। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে কিছু নিয়ন্ত্রণে ছাড় দেওয়া হবে বলেও এ দিন জানান মুখ্যমন্ত্রী।

করোনা-সংক্রমণকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন তথ্য সাধারণ মানুষের মধ্যে অযথা আতঙ্ক তৈরি করছে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত কমিটির সদস্যরা। আতঙ্ক কাটাতে খবরের চ্যানেলগুলিতে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরবেন অভিজিৎ চৌধুরী-সহ একাধিক চিকিৎসক। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবর ছড়ালে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার।

মুখ্যসচিবের প্রস্তাব মেনে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যথাযথ ভাবে পরীক্ষা বা যাচাই না-করে করোনা-আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দেওয়া যাবে না। এমনকি, উত্তরবঙ্গে করোনা-আক্রান্ত হয়ে যে রোগীর মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে, তা-ও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।

আগামী মাসের ১ তারিখেই যাতে সরকারি কর্মীরা বেতন পান, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেউ দু’মাসের বেতন অগ্রিম চাইলে তাঁকে সরকারের কাছে আবেদন জানাতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে সংস্থা-পিছু দু’জনকে দফতরে যাওয়ার অনুমতি দেবে সরকার।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy