Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
COP29

‘অস্বাভাবিক কম’

আশ্চর্য নয়। উন্নত দেশগুলি যে আগামী দিনে কিয়োটো প্রোটোকলে উল্লিখিত শিল্পোন্নত দেশগুলির ‘ঐতিহাসিক দায়’-এর পথ থেকে অনেকটাই সরে আসবে, তেমন ইঙ্গিত স্পষ্ট।

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৪:৩৫
Share: Save:

অভূতপূর্ব ইতিবাচক সাড়া মিলবে— এমন প্রত্যাশা ছিল না। কিন্তু আজ়ারবাইজানের রাজধানী বাকু-তে অনুষ্ঠিত প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে প্রায় দু’সপ্তাহব্যাপী ২৯তম জলবায়ু সম্মেলন থেকে যা পাওয়া গেল, তাকে পর্বতের মূষিক প্রসবও কি বলা যায়? সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশেষত জলবায়ু-অর্থনীতির প্রশ্নে ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ়’ (সিওপি)-এর বাৎসরিক সম্মেলনগুলি তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করতে পারেনি। ফলে, এ যাবৎ কাল উন্নয়নশীল দেশগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াইয়ের পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য যে আর্থিক সাহায্যের দাবি জানিয়ে এসেছে, তার ধারেকাছেও পৌঁছনো যায়নি। এই বছরটিও তার ব্যতিক্রম হল না। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির অন্যতম অংশ ছিল ‘নিউ কালেকটিভ কোয়ান্টিফায়েড গোল’ (এনসিকিউজি)। বলা হয়েছিল, উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বাৎসরিক আর্থিক সহায়তা দানের জন্য এক নতুন লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হবে ২০২৫ সালের আগেই। সেই অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলি তাদের প্রয়োজনের সাপেক্ষে বাৎসরিক ১.৩ লক্ষ কোটি আমেরিকান ডলার এনসিকিউজি-র লক্ষ্যমাত্রা স্থির করার দাবি জানায়। সেই দাবিকে এক প্রকার অগ্রাহ্য করেই উন্নত দেশগুলি ২০৩৫ সালের মধ্যে বাৎসরিক ত্রিশ হাজার কোটি ডলার প্রদানে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, যা ২০২০ সালের মধ্যে বাৎসরিক দশ হাজার কোটি ডলারের তুলনায় তিন গুণ হলেও উন্নয়নশীল দেশগুলির মূল দাবির তুলনায় অতি অল্প। স্বাভাবিক ভাবেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলি। ভারতও কড়া বিবৃতি দিয়েছে।

তবে এই সম্মেলন সম্মত হয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলির দাবি অনুযায়ী বাৎসরিক ১.৩ লক্ষ কোটি আমেরিকান ডলারের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনোর একটি পথনির্দেশিকা নির্মাণে। অবশ্য সমস্যা রয়েছে সেখানেও। সম্মেলনের অন্তিম পর্বে প্রকাশিত ‘প্রেসিডেন্সি টেক্সট’-এ ২০৩৫ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য অন্তত বাৎসরিক ১.৩ লক্ষ কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রার উচ্চতায় পৌঁছতে সমস্ত পক্ষকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে শুধুমাত্র উন্নত দেশগুলিই নয়, উন্নয়নশীল দেশগুলিকেও উৎসাহ দেওয়া হয়েছে স্বেচ্ছায় সহায়তা দানের। অর্থাৎ, উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সাহায্য করার যে আইনি বাধ্যবাধকতা এত দিন উন্নত দেশগুলির উপর ছিল, তাকে এই প্রস্তাবনা খানিক লঘু করে দিল।

আশ্চর্য নয়। উন্নত দেশগুলি যে আগামী দিনে কিয়োটো প্রোটোকলে উল্লিখিত শিল্পোন্নত দেশগুলির ‘ঐতিহাসিক দায়’-এর পথ থেকে অনেকটাই সরে আসবে, তেমন ইঙ্গিত স্পষ্ট। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন সেই সম্ভাবনাকে আরও খানিক উস্কে দিয়েছে। ট্রাম্প তাঁর পূর্ববর্তী জমানাতে উষ্ণায়নের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করেছিলেন। এখনও তিনি আমেরিকাকে জলবায়ু চুক্তির মধ্যে রাখতে উৎসাহী নন। জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধী পরিকাঠামো গড়ে তুলতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে আর্থিক এবং প্রযুক্তি সহায়তা দানে যে অন্য দেশগুলিও যথেষ্ট আগ্রহী নয়, সাম্প্রতিক সম্মেলনের তীব্র দর কষাকষিই তার প্রমাণ, যার পরিণামে সম্মেলন গড়ায় অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত। এই অনাগ্রহ অন্যায়, কারণ তা— জলবায়ু বিপর্যয় কোনও একটি দেশের সমস্যা নয়। বিশ্বকে একযোগে তার বিরুদ্ধে লড়তে হবে— এই মূল সুরটির পরিপন্থী। কিন্তু এই অন্যায় আগামী দিনে বন্ধ হবে— এটা দুরাশামাত্র। বরং স্বেচ্ছায় যোগদানের আহ্বান বাধ্যতামূলক ভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে এগিয়ে আসার নির্দেশে পরিণত হবে— সে সম্ভাবনা রয়ে যায়। সেই ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই ভারত-সহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির প্রস্তুত হওয়া আবশ্যক। আগামী দিনে তাই উন্নত দেশগুলির কাছে অর্থ দাবির পাশাপাশি নিজের দেশে উষ্ণায়ন মোকাবিলার অন্য উপায় খুঁজতে হবে। শুধু কড়া বিবৃতি আর অসন্তোষ প্রকাশে বিপদ এড়ানো যাবে না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy