এম আর বাঙুর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। ছবি— পিটিআই।
সঙ্ঘাতের আবহ শেষ হয়েছিল বুধবারই। সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েও কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের কাছ ‘নিরপেক্ষ’ রিপোর্টের আশা প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। বৃহস্পতিবার দু’টি জায়গা পরিদর্শনের পর কেন্দ্রকে প্রাথমিক রিপোর্ট পাঠাল রাজ্যে করোনাভাইরাস ও লকডাউন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। কেন্দ্রের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সও করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা। এ দিন কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা মিলিয়ে দু’টি জায়গা পরিদর্শন করেছে দক্ষিণবঙ্গের দলটি। উত্তরবঙ্গের দলটিও একাধিক হাসপাতাল ও কোয়রান্টিন সেন্টার পরিদর্শন করেছে।
রাজারহাটেই রাজ্যের প্রথম কোয়রান্টিন সেন্টার তৈরি হয়েছিল। মূলত করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের আলাদা করে রাখার জন্যই তৈরি হয়েছিল এই রাজারহাট কোয়রান্টিন সেন্টার। বৃহস্পতিবার সেখানেই প্রথম পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পদস্থ কর্তারা। পিপিই সমেত যাবতীয় সুরক্ষা সামগ্রী পরে ভিতরে ঢোকেন তাঁরা। কোয়রান্টিনে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি, চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না, তা-ও জানতে চান।
এর পর ওই প্রতিনিধি দলটি চলে আসে টালিগঞ্জের এম আর বাঙুর হাসপাতালে। এটিই রাজ্যের প্রথম কোভিড হাসপাতাল। এখানে ভর্তি থাকা করোনা আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। হাসপাতাল সুপারের ঘরে চিকিৎসক ও সুপারের সঙ্গে বৈঠক করেন। আইসিএমআর-এর গাইডলাইন মেনে চিকিৎসা হচ্ছে কি না, রোগীদের চিকিৎসা কী ভাবে চলছে, হাসপাতালে মোট কত রোগী ভর্তি রয়েছেন— এই বিষয়ে জেনে নেন তাঁরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় দল পৌঁছয় সুপার স্পেশালিটি বিল্ডিংয়ে। যেখানে কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীরা রয়েছেন। পিপিই কিট পরে নেন কেন্দ্রীয় দলের প্রত্যেকেই। তার পর আইসোলেশন ওয়ার্ডে গিয়ে সরাসরি রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। সেখানে রোগীরা কেমন আছেন, তা খতিয়ে দেখেন। রোগীরা কী খাবার খাচ্ছেন? কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, তাঁদের মুখ থেকেই শুনতে চায় কেন্দ্রীয় পরিদর্শনকারী দল। আইসিসিইউ-তে যে সব রোগী রয়েছেন, তাঁদের কী ভাবে চিকিৎসা হচ্ছে, তা-ও খতিয়ে দেখেন তাঁরা।
কয়েক দিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল। দাবি করা হয়েছিল, সেটি বাঙুর হাসপাতালের। সে বিষয়েও হাসপাতাল কর্তাদের কাছে জানতে চান কেন্দ্রীয় দল। যেখানে রোগীর মৃত্যু পর দীর্ঘ ক্ষণ দেহ পড়ে থাকার অভিযোগ উঠেছিল সেই বেডের কাছেও গিয়েছিলেন তাঁরা। হাসপাতালের একটি সূত্র তেমনই জানাচ্ছে। তবে এ দিনের পরিদর্শনের বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে।
আরও পড়ুন: পুলিশ লাইনের ছাদ থেকে চলছে এলোপাথাড়ি গুলি, আতঙ্ক ঝাড়গ্রামে
সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধিরা। —নিজস্ব চিত্র
বাঙুর থেকে তাঁরা চলে আসেন তাঁদের অস্থায়ী ঠিকানা গুরুসদয় দত্ত রোডে বিএসএফ-এর ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতরে। সেখানে কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করেন। দুই কেন্দ্রে পরিদর্শনের খুঁটিনাটি তাঁরা জানান। পাশাপাশি, একটি প্রাথমিক রিপোর্টও তাঁরা পাঠিয়েছেন বলে প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সূত্রে খবর। বুধবার রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখে রাজ্যের সংক্রমিত চার জেলার যে সব জায়গা পরিদর্শনের কথা জানিয়েছিলেন দলের নেতৃত্বে থাকা অপূর্ব চন্দ্র, সেই সব জায়গাতেই যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। কেন্দ্র থেকে পরবর্তী কোনও নির্দেশিকা আসে কি না, তার অপেক্ষাতেও রয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা।
উত্তরবঙ্গেও দলটিও এ দিন পরিদর্শন করেছেন বিভিন্ন জায়গা। তাঁরা রয়েছেন শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া রানিডাঙায় এসএসবি-র কার্যালয়ে। বুধবার তাঁরা দার্জিলিং, কালিম্পং ও জলপাইগুড়ির প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করেন। দক্ষিণবঙ্গের দলটির মতোই তাঁরা কোথায় কোথায় যেতে চান, কী কী বিষয় খতিয়ে দেখতে চান, তার তালিকা পাঠানো হয়। আলাদা করে বৈঠক করেন জলপাইগুড়ির ডিভিশনাল কমিশনার অজিতরঞ্জন বর্ধনের সঙ্গে। তিনিও কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় দলকে নিয়ে ব্যস্ত বাঙুর, সেই ফাঁকে ‘হাওয়া খেতে’ বেরিয়ে পড়লেন করোনা রোগী
সেই মতো এই দলটিও পরিদর্শনে বেরোয়। এ দিন দলের সদস্যরা প্রথমে বাগডোগরা বিমানবন্দরের কাছে কোয়রান্টিন সেন্টারে যান। এর পর যান নকশালবাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। দুই জায়গাতেই কেন্দ্রের নির্দেশিকা মেনে কাজ হচ্ছে কি না বা কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না, তা জেনে নেন তাঁরা। এর পাশাপাশি শিলিগুড়ি পুরসভার ৪৭ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডেও পরিদর্শন করেন ওই পাঁচ প্রতিনিধি।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy