—ফাইল চিত্র।
অতিমারির সঙ্গে লড়াইয়ে তাঁরা অগ্রবর্তী সেনানী। সেই চিকিৎসকদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধারও ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু কোভিডের চিকিৎসায় নিযুক্ত চিকিৎসকদের নিখরচায় থাকা-খাওয়ার হোটেল পরিষেবা হঠাৎই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ ক্ষুব্ধ। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সঙ্গে সঙ্গে সংঘাত বেধেছে তাঁদের।
এপ্রিলের পরে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তেই ওই রোগের ডিউটিতে থাকা চিকিৎসকদের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি হোটেলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে স্বাস্থ্য দফতর। ঠিক হয়, টানা সাত দিন হোটেল থেকেই তাঁরা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে যাতায়াত করে ডিউটি করবেন। তার পরের সাত দিন বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নেবেন। এতে লকডাউনে যাতায়াতের সমস্যা থেকেও অনেকটা রেহাই পান চিকিৎসকেরা। প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকদের পায় হাসপাতালও।
কিন্তু ৩ নভেম্বর রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য একটি নির্দেশিকা (মেমো নম্বর-MCH/11339/1(5)) জারি করে জানান, কোভিড ডিউটিতে নিযুক্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আর কোনও হোটেলের ব্যবস্থা থাকছে না।
হঠাৎ এই সুবিধা বন্ধ হচ্ছে কেন? স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানান, এমনিতেই স্বাস্থ্য দফতরের উপরে বিপুল খরচের বোঝা রয়েছে। তার উপরে বেসরকারি হোটেলে অত্যধিক টাকা লাগছিল। মাসের পর মাস এই ব্যয়ভার বহন করা খুব কঠিন। খরচ একটু কমাতেই হবে। তাই নির্দেশ জারি হয়েছে। স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘‘তবে নানা কারণে যে সব চিকিৎসক এখনই হোটেল ছাড়তে পারছেন না, তাঁদের উপরে কোনও চাপ দেওয়া হচ্ছে না। দরকার পড়লে কিছু জায়গায় সরকারি অতিথিশালায় চিকিৎসকদের রাখা হবে। যানবাহন এখন সবই স্বাভাবিক। ফলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে আইডি হাসপাতাল বা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিছু চিকিৎসকের থাকা প্রয়োজন। ওই সব ক্ষেত্রে কাছাকাছি সরকারি অতিথিশালার খোঁজ চলছে। তবে সকলের জন্য আর এই ব্যবস্থা রাখা সম্ভব নয়।’’
চিকিৎসকদের একাংশ এতে ক্ষোভ গোপন করছেন না। তাঁদের বক্তব্য, ভোটের দিকে তাকিয়ে রাজ্য সরকার ডিএ ঘোষণা করছে, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের পরিধি বাড়াচ্ছে, পুজোর আগে ক্লাবগুলিকে টাকা দিচ্ছে। অথচ শুধু চিকিৎসকদের ক্ষেত্রেই ব্যয়সঙ্কোচের কথা মনে হচ্ছে সরকারের! এটা কেন?
বামপন্থী সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টর্স’ জানিয়েছে, এতে চার দিক থেকে সমস্যা হবে। প্রথমত, কোভিড ডিউটিতে নিযুক্ত বহু চিকিৎসকের বাড়ি হাসপাতাল থেকে অনেক দূরে। কোভিড ডিউটির মতো অসম্ভব মানসিক ও শারীরিক চাপের কাজ করে প্রতিদিন তাঁদের এই দীর্ঘ পথ যাতায়াত করতে হলে সেটা অমানবিক হবে। দ্বিতীয়ত, কোভিড ডিউটি করে চিকিৎসকেরা বাস-ট্রাম-ট্রেনে প্রতিদিন যাতায়াত করলে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যাবে বহু গুণ। তৃতীয়ত, চিকিৎসক বা চিকিৎসাকর্মীরা রোজ বাড়িতে গেলে তাঁদের পরিবারে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়বে। চতুর্থত, হাসপাতালে যে কোনও সময়ে করোনা রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে। তাই দিনে-রাতে সিনিয়র চিকিৎসকদের কাছাকাছি থাকা দরকার। বিশেষ করে নাইট ডিউটি, মর্নিং ডিউটি এবং ‘অন কল’-এর ক্ষেত্রে এটা জরুরি। কোভিড হাসপাতালের ভিতরে থাকা অসম্ভব। তাই চিকিৎসকদের নিকটবর্তী হোটেলে না-রাখলে হঠাৎ প্রয়োজনে রোগীকে পরিষেবা দেওয়া যাবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy