দেবদত্তা রায়। নিজস্ব চিত্র
করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল বছর আটত্রিশের এক মহিলা প্রশাসনিক আধিকারিকের। হুগলির চন্দননগরের মহকুমাশাসকের দফতরের দেবদত্তা রায় নামে ওই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সোমবার সকালে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী কোভিড হাসপাতালে মারা যান। তাঁর বাড়ি দমদমের মতিঝিলে। লকডাউনের সময় ডানকুনি রেলস্টেশনে যে সব পরিযায়ী শ্রমিক নেমেছিলেন, তাঁদের বাড়ি পৌঁছনোর দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি।
ওই আধিকারিকের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর চিঠিতে ওই আধিকারিককে কোভিড-যুদ্ধের ‘সামনের সারিতে থাকা এক সাহসী সেনানী’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রশাসন সূত্রের খবর, চার বছরের সন্তানকে দেখভালের জন্য ওই আধিকারিক গত ১ জুলাই থেকে ছুটি নেন। পরে তাঁর জ্বর হয়।
ব্যারাকপুরের বিএন বসু মেমোরিয়াল হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রিপোর্ট মেলে, করোনা ‘পজ়িটিভ’। তবে, তিনি হাসপাতালে ভর্তি হননি। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শে বাড়িতেই নিভৃতবাসে ছিলেন। রবিবার তাঁর প্রবল শ্বাসকষ্ট হওয়ায় শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করানো হয়। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রাও মারাত্মক ভাবে কমে গিয়েছিল। অক্সিজেন দেওয়া হয়। তবে, বাঁচানো যায়নি।
আরও পড়ুন: রাজ্যে ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত ১৪৩৫, সংক্রমণের হার আরও বেড়ে ১৩.৯
কর্মস্থলে জনপ্রিয় ছিলেন ওই আধিকারিক। পুরুলিয়ায় বিডিও থাকার সময়েও যথেষ্ট কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবরে হুগলি জেলা প্রশাসনিক মহলে শোকের ছায়া নামে। চন্দননগরের মহকুমাশাসক মৌমিতা সাহা, শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক সম্রাট চক্রবর্তী হাসপাতালে যান। দেবদত্তার স্বামী পবিত্র এ দিন কথা বলার অবস্থায় মৃত সেনানী ছিলেন না। তিনিও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকেও হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। আমি কিছু বলার অবস্থায় নেই।’’
দেবদত্তার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে তাঁরই একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ফেসবুকে পোস্ট করেছেন অনেক ডব্লিউবিসিএস অফিসার। সেই মেসেজে দেবদত্তা আত্মীয়, সহকর্মী, বন্ধুদের ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন, তিনি আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠছেন। করোনা পরীক্ষার ফলের সঙ্গে বদলির অর্ডারের তুলনা টেনে লিখেছেন যে, জেনে যাওয়ার পরে আর কোনও চিন্তা থাকে না। তবে ওই মেসেজেই তিনি বলেছেন সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
আরও পড়ুন: ‘সংখ্যাবৃদ্ধি দেখে বেশি আতঙ্কের কিছু নেই’
এই মৃত্যুর জেরে চন্দননগরে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের পাশের এলাকা নতুন করে গণ্ডিবদ্ধ করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, গোটা ওয়ার্ডটিকে (১২ নম্বর) গণ্ডিবদ্ধ করা হোক। মহকুমাশাসকের দফতরের এক কর্মী বলেন, ‘‘দফতর সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত না-করা পর্যন্ত কাজে যোগ দেওয়ায় ঝুঁকি রয়েছে।’’ জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘ওই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অসুস্থ হন ছুটি নেওয়ার পরে। কার্যালয়ে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা অমূলক।’’ ওই কার্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ওই আধিকারিকের ঘর তালাবন্ধ ছিল। বিকেলে কার্যালয় স্যানিটাইজ় করা হয়।
এ দিকে, দেবদত্তাকে এবং তাঁর মতো যাঁরা (পুলিশ, চিকিৎসক, নার্স, পুরকর্মী প্রমুখ) সামনের সারিতে থেকে করোনা-কালে মানুষকে পরিষেবা দিতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন, তাঁদের ‘সেবা শহিদ’-এর মর্যাদা দেওযার দাবি তুলেছে চন্দননগরের একটি সংগঠন। ‘আইন সহায়তা কেন্দ্র’ নামে ওই সংগঠন এ দিন প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ওই মর্মে ই-মেল করেছে। দাবি জানানো হয়েছে রাজ্যের মুখ্যসচিবকেও।
সংগঠনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চন্দননগরের ওই ডেপুটি-ম্যাজিস্ট্রেট করোনা মোকাবিলায় সামনের সারিতে থেকে লড়াই করেছেন। কর্মঠ ছিলেন। মানুষের সমস্যার প্রতিকারের ব্যবস্থা করতেন। উনি এ শহরের প্রথম ‘সেবা শহিদ’। সরকারের উচিত এই ধরনের কেউ প্রয়াত হলে স্বীকৃতি দেওয়া।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy