গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাজ্যে করোনা আক্রান্ত ছাড়িয়ে গেল দু’লক্ষ। রবিবার স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২১৫ জন। এই নিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষ ২ হাজার ৭০৮। তবে সংক্রমণের প্রবণতায় বড়সড় কোনও পরিবর্তন নেই। সুস্থতার হার সামান্য বেড়েছে। তবে সংক্রমণের হার কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় দুশ্চিন্তাও বেড়েছে রাজ্য প্রশাসনের। উদ্বেগ রয়েছে রাজ্যে করোনায় মৃত্যু নিয়েও।
রাজ্যে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছিল এ বছরের ১৮ মার্চ। তার পর থেকে ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ। প্রথম দিকে ধীরগতিতে বাড়ছিল সংক্রমণ। ১ থেকে ৫০ হাজারে পৌঁছেছিল ২৩ জুলাই, প্রায় চার মাস পর। সেখান থেকে মাত্র ১৯ দিনেই আরও ৫০ হাজার আক্রান্ত হয়ে মোট আক্রান্ত ১ লক্ষে পৌঁছয় ১১ অগস্ট। ১ থেকে দেড় লক্ষে পৌঁছতে সময় লাগে ১৬ দিন (২৭ অগস্ট)। মোট আক্রান্ত ২ লক্ষ পৌঁছল আরও ১৭ দিন পর। তবে মাথায় রাখতে হবে, প্রতিদিন টেস্টিংয়ের সংখ্যাও বাড়ছে। সেই বিষয়টা মাথায় রাখলে শেষ দিকে এসে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিতে কিছুটা হলেও রাজ্য প্রশাসন স্বস্তিতে রয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা। যদিও এটাই সার্বিক প্রবণতা, এমনটা এখনই বলতে নারাজ তাঁরা।
কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে মৃত্যু নিয়ে। রবিবারের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৫৮ জনের। বেশ কিছুদিন ধরে মৃতের সংখ্যা ৫০ এর কাছাকাছি থাকার পর শুক্রবার থেকে তা ঊর্ধ্বমুখী। শুক্রবার মারা গিয়েছিলেন ৫৭ জন। শনিবার মৃত্যু হয়েছে ৫৯ জনের। আজ অবশ্য ১ জন কমেছে। এই নিয়ে রাজ্যে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৩ হাজার ৮৮৭। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায় (১৩ জন)। তার পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে কলকাতা (১২), হাওড়া (৭) হুগলি (৪), দক্ষিণ ২৪ পরগনার (৩) মতো জেলা।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আরও পড়ুন: আগামী বছরের গোড়াতেই আসতে পারে করোনার টিকা, আশা হর্ষ বর্ধনের
মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও ক্রমাগত স্বস্তি মিলছে সুস্থতার হারে। রবিবারও সুস্থতার হার বেড়েছে ০.১৪ শতাংশ। শনিবার এই হার ছিল ৮৬.২৬ শতাংশ। রবিবার বেড়ে হয়েছে ৮৬.৪০ শতাংশ। রবিবারের বুলেটিনে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ হাজার ৫৬৪ জন। শনিবার এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪২। এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে করোনার সংক্রমণ মুক্ত হয়েছেন ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ১৩৯ জন। এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় রোগী রয়েছেন ২৩ হাজার ৬২৪ জন। রবিবার সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১০৩।
সুস্থতার হারের পাশাপাশি সংক্রমণের হারেও কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তারা। প্রতি দিন যত জনের কোভিড টেস্ট করানো হয় এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যকের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসে, তাকে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। এই হার যত নিম্নগামী হবে, করোনা সংক্রমণও তত কমতির দিকে বলে ধরা হয়। রবিবারের বুলেটিন অনুযায়ী সংক্রমণের হার ৬.৭৯ শতাংশ। শনিবার এই হার কিছুটা কম (৬.৬২) থাকলেও উদ্বেগজনক হারে বাড়েনি। রবিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় টেস্ট হয়েছে ৪৭ হাজার ৩১৮টি। শনিবার এই সংখ্যা ছিল ৪৭ হাজার ১৩১।
আরও পড়ুন: মাত্র ৫০ বছরেই হারিয়ে গিয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ বন্যপ্রাণ, বলছে রিপোর্ট
রাজ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের গোড়া থেকেই কলকাতা শীর্ষে ছিল। তবে গত প্রায় এক মাস ধরে কলকাতায় সংক্রমণ কিছুটা কমেছে এবং সেই জায়গায় উত্তর ২৪ পরগনার সংক্রমণ ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী। কখনও কলকাতার চেয়ে কিছু বেশি নতুন আক্রান্তের সন্ধান মিলছে, কখনও সামান্য কিছু কম। শনিবার উত্তর ২৪ পরগনা শীর্ষে থাকলেও রবিবার ফের কলকাতায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। মহানগরীতে ২৪ ঘণ্টায় কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ৫৪১ জনের। উত্তর ২৩ পরগনায় ৫২৭ জনের। এ ছাড়া শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এমন জেলাগুলি হল পশ্চিম মেদিনীপুর (২২০), হুগলি (২০৯), হাওড়া (১৭২), নদিয়া (১৩৭), পূর্ব মেদিনীপুর (১৩৫), পশ্চিম বর্ধমান (১২১), দার্জিলিং (১১৭) ও মুর্শিদাবাদ (১০৪)।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy