ছবি এএফপি।
সংক্রমণের প্রভাব নির্ণয়কারী তিন মাপকাঠিতেই উদ্বেগের ছবি ধরা পড়ল স্বাস্থ্য দফতরের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, পুজোর সপ্তাহে রাজ্যের এক ডজন জেলায় নমুনা পরীক্ষার নিরিখে আক্রান্ত (কেস পজ়িটিভিটি রেট বা সিপিআর) এবং মৃত্যুর হার হল ঊর্ধ্বমুখী! রাজ্যের ২৩টি জেলার মধ্যে ১৭টি জেলায় বেড়েছে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা।
প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন মাপকাঠিতে সংক্রমণের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে একটি অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট প্রস্তুত করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য ভবনের খবর, করোনা সংক্রমণের সর্বশেষ সাপ্তাহিক রিপোর্টে (২০-২৬ অক্টোবর) কলকাতার কেস পজ়িটিভিটি রেট (সিপিআর) ১৯.০৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ২১.৪৩ শতাংশ! কিছু দিন আগেও এই মাপকাঠিতে শীর্ষে ছিল উত্তর ২৪ পরগনা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই জেলায় পজ়িটিভিটি রেট ২৪.২৭ শতাংশ থেকে কমে ২৩.৩৫ হলেও তা স্বস্তিদায়ক নয়। পজ়িটিভিটি রেট বৃদ্ধির কারণে আর যে সকল জেলার উপরে স্বাস্থ্য ভবনের বিশেষ নজর রয়েছে সেগুলি হল, পশ্চিম মেদিনীপুর (১৪.৬০), জলপাইগুড়ি (১২.৪১), পূর্ব মেদিনীপুর (১০.৭২), নদিয়া (৯.৫০), হাওড়া (৮.৬০), দার্জিলিং (৮.১৭), মালদহ (৭.৪৭), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৬.৪৪), পূর্ব বর্ধমান (৫.৫০), বীরভূম (৫.৪৮) এবং মুর্শিদাবাদ (৫.৪৪)।
সার্বিক ভাবে মৃত্যুহার কমলেও জেলাওয়াড়ি ছবিতে উদ্বেগরই বার্তা। গত ২২-২৮ সেপ্টেম্বরের সাপ্তাহিক পরিসংখ্যানে রাজ্যে মৃত্যুর হার ছিল ১.৮৭ শতাংশ। কিন্তু ২০-২৬ অক্টোবরের রিপোর্ট তা কমে হয়েছে ১.৪৮ শতাংশ। একই সপ্তাহে ওই রিপোর্টে মৃত্যুহারে বৃদ্ধির কারণে কলকাতা (২.০০) ছাড়া দক্ষিণ ২৪ পরগনা (১.৮৩), উত্তর দিনাজপুর (১.৬৮), বীরভূম (১.৬৬), পশ্চিম মেদিনীপুর (১.৬০), মুর্শিদাবাদ (১.৩৪), নদিয়া (১.২১), দক্ষিণ দিনাজপুর (১.০৬), দার্জিলিং (০.৮৮), কোচবিহার (০.৬০), বাঁকুড়া (০.৩৬) এবং পুরুলিয়ার (০.২৬) নামের নীচে লালকালির দাগ পড়েছে।
আরও পড়ুন: উৎসবের ফাঁকেই এ বার পথে বামেরা
দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, দার্জিলিং-সহ অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ১৭টি জেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, বিভিন্ন জেলায় মৃত্যুর হার বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হাসপাতালে ভর্তি বা সেফ হোমে থাকার প্রশ্নে আক্রান্তদের অনেকের মধ্যে অনীহা কাজ করছে। একদল মানুষ করোনা উপসর্গ থাকলেও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। আরেক দল কোভিড পজ়িটিভ হওয়ার পরে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করানোর ধনুকভাঙা পণ নিয়ে বসে থাকছেন। কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের অন্যতম সদস্য চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘জেলার দিকে বিশেষত গ্রামাঞ্চলের মানুষ করোনা যে রয়েছে তা মানতেই চাইছেন না। এই প্রবণতা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।’’
আরও পড়ুন: মৃত্যুতে লাগাম দিতে বাড়িতে ফোন রাজ্যের
তবে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে ‘সচেতনতা’র অভাবও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে বক্তব্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, সোমবার পর্যন্ত কলকাতায় মোট ৪,৪২,৫৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনায় সেই সংখ্যা ৩,৬০,৪০৫ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৩,৯১,২২২। রাজ্যে মোট আক্রান্ত এবং মৃত্যুর নিরিখে কলকাতার পরই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে হাওড়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের প্রশ্ন, উত্তর ২৪ পরগনায় এ পর্যন্ত ৭৩৫৫৯ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যু হয়েছে ১৫২৭ জনের। তাহলে সেই জেলার তুলনায় দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বেশি কেন? আবার দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সোমবার পর্যন্ত তিন লক্ষ নব্বই হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে ২৩৩৫৯ জনের দেহে ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। সেখানে সোমবার পর্যন্ত অনেক কম নমুনা পরীক্ষা (২,৫৫,৬৭৩) করেই হাওড়ায় ২৪১৯৩ জন কোভিড পজ়িটিভ হয়েছেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, নমুনা পরীক্ষার মাপকাঠি সঠিক হলে এই তারতম্য থাকার কথা নয়।
কার্ডিওথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকার বলেন, ‘‘সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে শুধু উপসর্গযুক্তদের নমুনা পরীক্ষা করার নীতি নিয়ে চললে হবে না। কোথায় খামতি থেকে যাচ্ছে তা খুঁজে বার করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy