ফুল বানাচ্ছে শ্রীজা। নিজস্ব চিত্র।
কচি হাতে রং-বেরঙের কাগজ কেটে ফুল বানাতে ব্যস্ত সে। ছোট্ট মেয়েটি বানাচ্ছে কাগজের ঝুড়িও। সেই ফুলের ঝুড়ি পৌঁছচ্ছে করোনা আক্রান্তদের কাছে। তাতে লেখা, ‘গেট ওয়েল সুন’। সঙ্গের চিরকুটে বার্তা, ‘একদম ভয় পাবে না। আমরা সবাই মিলে লড়াই করে করোনাকে হারিয়ে দেব। ভাল থেকো। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো।’
বাবা-মা করোনা রোগীদের বাড়িতে খাবার পৌঁছতে যান। বাবা-মা’র হাত দিয়েই সংক্রমিতদের কাছে তার হাতে তৈরি ফুলের ঝুড়ি পৌঁছে দিচ্ছে বছর দশেকের সৃজনিকা ঘোষ।
সৃজনিকার বাড়ি মেদিনীপুর শহরের ডাকবাংলো রোডে। তার ডাকনাম শ্রীজা। সে বলছিল, ‘‘আমার তো এখন ঘরের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বাবা-মা কোভিড রোগীদের খাবার দিতে যায়। ফুলের ঝুড়ি বানিয়ে বাবা-মা’র হাতে দিয়ে দিই। ওরা সেটা কোভিড রোগীদের বাড়িতে দিয়ে আসে।’’ এমন ভাবনা এল কী ভাবে? ডিএভি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর জবাব, ‘‘পেপার কাটিং করতে খুব ভাল লাগে আমার। কাগজের ফুল মাঝেমধ্যেই তৈরি করি। তবে ঝুড়িটা এই প্রথম করছি। ইউটিউব দেখে শিখেছি।’’
শ্রীজা জুড়ছে, ‘‘আমার দু’জন খুব কাছের বন্ধুর বাবা কোভিডে মারা গিয়েছে। পরিচিত কারও শরীর খারাপ হলে মাকে জিজ্ঞেস করতাম, ‘মা, উনি কী করে সুস্থ হবে?’ মা বলত, ‘একটা ফুল নিয়ে ঠাকুরের কাছে রেখে বল, ‘গেট ওয়েল সুন। তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দাও ঠাকুর। তাহলেই দেখবি, সুস্থ হয়ে যাবে।’ তাই ভাবলাম আমি যদি ‘গেট ওয়েল সুন’ লিখে ফুলটা পাঠাই, তা হলে কোভিড রোগীরা সুস্থ হয়ে যাবে।’’
সৃজনিকার বাবা সুরজিৎ ঘোষ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক তথা বিভাগীয় প্রধান। মা তনুশ্রী পাল মেদিনীপুর কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপিকা। দিনে অনলাইন ক্লাস থাকে। তাই রোজ সন্ধ্যায় ওঁরা বেরিয়ে পড়েন করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে রান্না করা খাবার পৌঁছতে। মেদিনীপুরে ‘মানবিক সংস্থান’ নামে এক সংগঠন বিনামূল্যে করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে খাবার পৌঁছয়। সেই সংগঠনের হয়েই স্বেচ্ছাশ্রম দেন সুরজিতেরা। বাড়িতে ছোট মেয়ে রয়েছে, শ্বশুর-শাশুড়ি রয়েছেন। ভয় করে না? তনুশ্রী বলছিলেন, ‘‘যদি কেউ করোনা-বিধিগুলি মেনে চলেন, তাহলে তাঁর ভয়ের কিছুই নেই।’’ সুরজিৎ জুড়ছেন, ‘‘এটার একটা আলাদা আনন্দ রয়েছে। যখন শুনি কেউ সুস্থ হয়ে গিয়েছেন, তখন আনন্দ আরও বেশি হয়।’’
ওই সংগঠনের তরফে সন্দীপ সরকার বলছিলেন, ‘‘শ্রীজার বানানো ফুলের ঝুড়িগুলি বেশ চমৎকার। ছোট্ট মেয়েটা বাড়িতে থেকেও করোনা-যুদ্ধের শরিক হতে চায়।’’ সৃজনিকার পাঠানো ফুল পেয়েছেন মেদিনীপুরের পলি পাহাড়ি। প্রায় সপরিবার করোনা আক্রান্ত হন পলি। তিনি বলছিলেন, ‘‘ওইটুকু একটা মেয়েও এ ভাবে সামাজিক দায়িত্ব নিচ্ছে, আমাদের মনের জোর বাড়াচ্ছে— এটা বিরাট পাওয়া।’’
শ্রীজা বলছিল, ‘‘অন্য সময়ে পেপার কাটিং করলে মা রেগে যেত। বলত ‘ঘর নোংরা হবে’। এখন আর রাগে না। বরং রঙিন কাগজ ফুরিয়ে গেলে এনে দেয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy