Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

উপসর্গই বড় সত্য, বলছেন চিকিৎসকেরা

চিকিৎসকদের মতে, উপসর্গের উপস্থিতিতে রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়ার ঘটনা কোভিডে এখন ‘নিউ নর্মাল’।

পুজোর মরসুমে ভিড় বাড়ছে বাজারে। ছবি পিটিআই।

পুজোর মরসুমে ভিড় বাড়ছে বাজারে। ছবি পিটিআই।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২০ ০৫:৩৫
Share: Save:

সংক্রমণের পিচে কোভিড যেন বিস্ময় বোলার! রোগীর উপসর্গ, প্রদাহ সূচক (ডি-ডাইমার), বুকের এক্স-রে, এইচআরসিটি (হাই রেজোলিউশন সিটি) সন্দেহজনক। তবুও প্রতিবারই রোগীর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ! এক মাসের ব্যবধানে এ ধরনের চারটি ঘটনা সামনে এসেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। চিকিৎসকদের মতে, উপসর্গের উপস্থিতিতে রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়ার ঘটনা কোভিডে এখন ‘নিউ নর্মাল’।

গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে অসুস্থ হলে জরুরি বিভাগে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক মহিলা ইন্টার্নকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। পরদিন ট্রু-ন্যাটে তাঁর করোনা পরীক্ষা করানো হলে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায়, ফুসফুসের চারপাশে ফ্লুইড জমে রয়েছে। প্রদাহের কারণে যা হতে পারে। সেপ্টেম্বরের পাঁচ তারিখ শারীরিক অস্বস্তি বাড়লে পালস অক্সিমিটারে চিকিৎসক ছাত্রী দেখেন, দেহে অক্সিজেনের মাত্রা ৮৬ এবং তা দ্রুত পড়ছে। এরই মধ্যে আরটি-পিসিআরেও রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। ছাত্রী ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন এনআরবিএমের (নন-রিব্রেদার মাস্ক) মাধ্যমে প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন দিতে হয়েছিল। এসএসকেএমে দু’দফায় তরুণীর করোনা পরীক্ষা করা হয়। প্রতিবারই আরটি-পিসিআরের রিপোর্ট, ছাত্রী কোভিড নেগেটিভ!

এই পরিস্থিতিতে সিসিইউয়ে রেখে স্টেরয়েড-সহ অন্যান্য ওষুধ দেওয়া হলে চিকিৎসক পড়ুয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়।

মেডিক্যালের চিকিৎসক ছাত্রীর অভিজ্ঞতার সঙ্গে একই সারিতে রয়েছে আরও তিন রোগীর ঘটনা। ডাক্তারির অন্তিম বর্ষের ছাত্রীর ৫৩ বছরের গাড়ির চালকের সপ্তাহ দুয়েক আগে জ্বরের পাশাপাশি দুর্বলতা দেখা দেয়। বাগুইআটির বাসিন্দা গাড়িচালকের স্ত্রীও একই রকম উপসর্গে ভুগছিলেন। প্রৌঢ়ের ষাট বছরের বৃদ্ধ দাদার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গিয়েছিল। গত ২৫ সেপ্টেম্বর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে তিনজনের করোনা পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু কারও দেহে ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি। বৃদ্ধের রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও তাঁকে দশদিন মেডিক্যালেই ভর্তি রেখে করোনার চিকিৎসা করা হয়। আপাতত তিনি সুস্থ। বাকিদের হোম আইসোলেশনে চিকিৎসা হয়।

আরও পড়ুন: টিকা রাখতে খোঁজ কোল্ড স্টোরেজের

বেলভিউয়ের সিসিইউ-ইনচার্জ চিকিৎসক অরিন্দম কর জানান, সবচেয়ে খারাপ রোগীদের ক্ষেত্রে একাধিকবার তাঁরা এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। সম্প্রতি আঠেরো বছরের এক তরুণের তিনবার করোনা পরীক্ষা করেও ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অরিন্দমবাবু বলেন, ‘‘রোগীর চিকিৎসা কী হবে তা আরটি-পিসিআরের রিপোর্টের উপরে নির্ভর করবে না। গুরুতর অসুস্থ রোগীর একবারও পজ়িটিভ রিপোর্ট এল না হতে পারে। উপসর্গ কী রয়েছে তা বুঝে চিকিৎসা করা উচিত।’’

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানান, নমুনা কীভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে তার উপরেও পজ়িটিভ-নেগেটিভ নির্ভর করে। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু কোভিড দিয়ে সব মেলানো যাবে না।’’ আর এন টেগোরের পালমোনোলজিস্ট সৌরভ মাজি বলেন, ‘‘সিটি’তে যদি কোভিড নিউমোনিয়ার উপস্থিতি জানান দেয় তাহলে সেই মতোই চিকিৎসা হওয়া উচিত। আরটি-পিসিআর, ট্রু-ন্যাট, অ্যান্টিজেনে নেগেটিভ। কিন্তু উপসর্গ কোভিডের মতো, এরকম রোগী আমরাও অনেক পেয়েছি।’’

আরও পড়ুন: নভেম্বরে কি টিকা? বাড়ছে জল্পনা

রাজ্যে করোনা চিকিৎসা বিধি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত জ্যোতির্ময় পাল বলেন, ‘‘উপসর্গ থাকলেও আরটি-পিসিআরে রিপোর্ট নেগেটিভ, সারা পৃথিবীতে এ ধরনের নজির রয়েছে। এক্ষেত্রে করোনা সন্দেহ করেই চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া উচিত।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy