Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Ichapur

বেড খালি নেই, ফিরিয়ে দিল একাধিক হাসপাতাল, ১১ ঘণ্টা চিকিৎসাহীন থেকে মৃত কিশোর

শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায় উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরের নেতাজিপল্লির বাসিন্দা ছিল। উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তার বাড়ি।

শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২০ ১৭:৪৫
Share: Save:

শুক্রবার ভোর পাঁচটা থেকে বিকেল চারটে— প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে ১৭ বছরের এক কিশোরকে নিয়ে ঘুরে বেড়াল পরিবার। প্রবল শ্বাসকষ্ট, তার মধ্যেই এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল। অভিযোগ, কোনও হাসপাতালই ভর্তি নিতে রাজি হয়নি ওই কিশোরকে। শেষ পর্যন্ত মরিয়া হয়ে কিশোরের মা আত্মহত্যার হুমকি দিলে ভর্তি নেয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায় ওই কিশোর। পরিবারের আপসোস, একটু আগে চিকিৎসা পেলে হয়তো বেঁচে যেত শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

শুভ্রজিৎ উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরের নেতাজিপল্লির বাসিন্দা ছিল। উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তার বাড়ি। এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল শুভ্রজিৎ। গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ওই কিশোরের। রাতে বাড়তে থাকে শ্বাসকষ্ট। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এমনিতেই শুভ্রজিতের ওজন স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি ছিল। তার সঙ্গে ছিল সুগার। তাই শুক্রবার সকাল হতেই দেরি না করে ছেলেকে নিয়ে কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে চলে আসেন শুভ্রজিতের বাবা। সেখানে কিশোরের সুগার পরীক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়ে, রক্তে শর্করার পরিমাণ খুবই বেশি। ইএসআই হাসপাতালে আইসিইউ নেই বলে তাকে রেফার করে দেওয়া হয় অন্য হাসপাতালে।

শনিবার ওই কিশোরের দাদা শুভ্রদীপ বলেন, ‘‘কামারহাটিরই একটি নার্সিংহোমে আমরা ভাইকে নিয়ে যাই। শ্বাসকষ্ট শুনেই ওরা ভিতরে ঢুকতে দিল না। আমাদের বলা হল, কোভিড টেস্ট না করলে ভর্তি করা যাবে না।” শুভ্রদীপের দাবি, সেখানে বেশ খানিক সময় কাটানোর পর পরিবারের জোরাজুরিতে কিশোরের র‌্যাপিড টেস্ট করার জন্য রক্ত নেওয়া হয়। সেই রক্তপরীক্ষায় করোনা ভাইরাসের অস্তিত্বর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এর পর ওই বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে কিশোরকে সাগর দত্ত হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। শুভ্রদীপের কথায়, ‘‘সাগর দত্ত হাসপাতালে দীর্ঘ ক্ষণ ভাইকে বাইরে রেখে দেওয়া হয়। কোনও চিকিৎসা হয় না। শেষে বলা হয়, বেড ফাঁকা নেই।”

আরও পড়ুন: কোভিড নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কি বেসরকারি হাসপাতালেও

আরও পড়ুন: পাতিপুকুরে ব্যারাকের ছাদ থেকে ঝাঁপ পুলিশকর্মীর

ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করে শুভ্রজিতের পরিবার। কিশোরের দাদার অভিযোগ, ‘‘স্বাস্থ্য ভবন জানিয়ে দেয় যে, তাদের কাছে কিশোরের করোনা পজিটিভ হওয়ার কোনও রিপোর্ট নেই। সেই রিপোর্ট না এলে তারা সাহায্য করতে পারবে না।”

অগত্যা পুলিশের শরণাপন্ন হয় কিশোরের পরিবার। বেলঘরিয়া থানার উদ্যোগে শুক্রবার দুপুর দুটো নাগাদ শুভ্রজিৎকে নিয়ে মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছয় পরিবার। কিন্ত সেখানেও জানানো হয়, বেড নেই। শুভ্রদীপ এ দিন বলেন, ‘‘এদিকে ভাইয়ের শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। নড়াচড়া বন্ধ করে দিয়েছে। কোনও উপায় না দেখে মরিয়া হয়ে মা ভিতরে ঢুকে পড়ে।” তাঁর দাবি, মা হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন। মায়ের হুমকিতে কাজ হয়। বিকেল চারটে নাগাদ শেষ পর্যন্ত ভর্তি করা হয় কিশোরকে। পরিবারকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু এ দিন ভোরে ফোন করে জানানো হয়, শুক্রবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ মারা গিয়েছে শুভ্রজিৎ। শনিবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে কিশোরের পরিবারের একটাই আক্ষেপ, যদি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভর্তি নিয়ে হয়রানি না হত, আর একটু আগে যদি চিকিৎসা শুরু করা যেত, তা হলে হয়তো বেঁচে যেত ছেলেটা।

কোভিড সন্দেহভাজন হওয়ায় শনিবার কিশোরের দেহ তুলে দেওয়া হয়নি পরিবারের হাতে। এ বিষয়ে মেডিক্যাল কলেজের কোনও কর্তা সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁরা স্বীকার করেন, আরও আগে চিকিৎসা শুরু করা গেলে প্রাণে বেঁচে যেতে পারত ওই কিশোর। খাতায় কলমে এখনও কোভিড পজিটিভ হিসাবে ওই কিশোরের নাম নেই স্বাস্থ্য দফতরের কাছে। গোটা ঘটনা শুনে এক স্বাস্থ্যকর্তা শুধু বলেন, ‘‘আরও সমন্বয় প্রয়োজন।’’

কিন্তু সেই সমন্বয় তৈরি করার দায়িত্ব কার? রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, শুক্রবার রাজ্যের ১০ হাজার ৮৩০টি কোভিড বেডের মধ্যে ২৭ শতাংশ ভর্তি। অর্থাৎ বাকি ৭৩ শতাংশ ফাঁকা। তাও বেডের অভাবে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে কেন ঘুরে বেরাতে হল কিশোরের পরিবারকে? জবাব মেলেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Ichapur Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy