Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

রাজ্যে করোনার চিকিৎসা কোথায়, আপনি কি আদৌ সংক্রামিত বুঝবেন কী ভাবে?

বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল ছাড়াও, এসএসকেএম, আরজি কর, চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ-সহ শহরের সব ক’টি মেডিক্যাল কলেজেই রয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড।

কলকাতার একটি স্কুলে চলছে জীবাণুমুক্ত করার কাজ। ছবি: পিটিআই

কলকাতার একটি স্কুলে চলছে জীবাণুমুক্ত করার কাজ। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২০ ২০:১৩
Share: Save:

চার দিকে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। তার মধ্যেই আপনি খেয়াল করলেন জ্বর জ্বর ভাব। সঙ্গে গলাও ব্যথা। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে রাস্তায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কী কী উপসর্গ দেখা যায় তার পোস্টার দেখে আপনার মনেও আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। এর পর কী করবেন?

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আপনার যদি এ রকম উপসর্গ দেখা দেয়, তবে যে কোনও সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে যান। সেখানে চিকিৎসকরা প্রাথমিক পরীক্ষা করে যদি মনে করেন যে, আপনার শরীরে যে উপসর্গগুলি দেখা যাচ্ছে তার সঙ্গে করোনা-সংক্রমণের মিল রয়েছে, তা হলে আপনাকে পাঠাতে পারেন রাজ্যের সেই সমস্ত সরকারি হাসপাতালে যেখানে আইসোলেশন ওয়ার্ড রয়েছে।

বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল ছাড়াও, এসএসকেএম, আরজি কর, চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ-সহ শহরের সব ক’টি মেডিক্যাল কলেজেই রয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড। তেমনই বিভিন্ন জেলা হাসপাতালেও আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। ওই সব হাসপাতালের চিকিৎসকরা রোগীকে প্রথমে পরীক্ষা করবেন। তাঁরা রোগীর সঙ্গে কথা বলে এবং তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি দেখে যদি মনে করেন যে, তাঁকে ভর্তি করা প্রয়োজন, তবেই তাঁকে ‘অ্যাডমিট’ করা হবে আইসোলেশন ওয়ার্ডে।

আরও পড়ুন: ভোট পিছনোয় আপত্তি না করেও সরকার-কমিশনকে তোপ বিরোধীদের

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রথমে ওই রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তার পর যদি চিকিৎসকরা মনে করেন, তবেই রোগীর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হবে পরীক্ষার জন্য। সেই লালারসের পরীক্ষার পর করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব না পাওয়া গেলেও চিকিৎসকরা রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখতে পারেন। এক স্বাস্থ্য কর্তা সোমবার বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয় রোগী করোনা আক্রান্ত কোনও দেশে সম্প্রতি ভ্রমণ করেছেন কি না বা করোনা আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে এসেছেন কি না।” করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র নির্দেশিকাই মেনে চলছে রাজ্য। সে কারণে ২৮ দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখাই শ্রেয় মনে করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের ওই কর্তার কথায়, ‘‘করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়লে ২৮ দিন পর ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দু’বার লালারস পরীক্ষা করা হবে। দু’টি পরীক্ষাতেই ফল নেগেটিভ পাওয়া গেলে ছাড়া হবে সেই রোগীকে।’’

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে কলকাতায় লালারসের পরীক্ষা হচ্ছে নাইসেড (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এনটেরিক ডিসিজেস)-এ। তিনি বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে আক্রান্ত সন্দেহে লালরস পরীক্ষার যে সংখ্যা তা নাইসেডে-ই করা যাচ্ছে। সংখ্যা বাড়লে বিকল্প হিসাবে পরীক্ষার জন্য তৈরি রাখা হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালকেও।’’ এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আমরা অনুরোধ করেছি আরও কয়েকটি জায়গায় এই পরীক্ষার বন্দোবস্ত করতে।’’ স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ, মালদহ মেডিক্যাল কলেজ এবং আরজি কর মেডিক্যাল কলেজেও পরীক্ষার পরিকাঠামো তৈরি করে রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সবুজ সঙ্কেত মিললেই চালু হবে পরীক্ষা।

আরও পড়ুন: দেশে আক্রান্ত ১১৪, রাজ্যে ২০০ কোটির তহবিল: করোনা আপডেট এক নজরে

কেরলের মতো এ রাজ্যেও করোনা আক্রান্ত হিসাবে শনিবার সন্দেহভাজনদের চারটি আলাদা ভাগে ভাগ করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন।

প্রথম শ্রেণি: যে ব্যক্তির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ রয়েছে এবং সেই উপসর্গ দেখা দেওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে তিনি করোনার প্রাদুর্ভাব হয়েছে এমন দেশে ভ্রমণ করেছেন। অথবা, করোনা আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে এসেছেন।

দ্বিতীয় শ্রেণি: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সমস্ত উপসর্গ দেখা যাচ্ছে অথচ তিনি করোনা কবলিত কোনও দেশে ১৪ দিনের মধ্যে ভ্রমণ করেননি। অথবা, করোনা আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেননি।

তৃতীয় শ্রেণি: কোনও উপসর্গ নেই কিন্তু করোনা আক্রান্ত দেশ বা জায়গা ভ্রমণ করেছেন। অথবা কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন।

চতুর্থ শ্রেণি: কোনও উপসর্গ নেই। করোনা আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেননি। কোনও করোনা কবলিত দেশে সম্প্রতি ভ্রমণ করেননি।

স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির সন্দেহভাজনকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠানো হবে। তাঁকে যে অ্যাম্বুল্যান্সে আনা হবে তার চালক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের পরনে থাকবে পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট এবং মাস্ক।

দ্বিতীয় শ্রেণির সন্দেহভাজনদের তাঁদের জমায়েত থেকে দূরে থাকতে বলা হবে। চিকিৎসকেরা ফোনে শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেবেন। আশা কর্মীরা খোঁজ রাখবেন ওই ব্যক্তির স্বাস্থ্যের। এ ক্ষেত্রে রোগীকে মাস্ক পরতে হবে। বাড়ির সদস্য এবং আশা কর্মীদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা নিতে হবে।

তৃতীয় শ্রেণির ক্ষেত্রে অবিলম্বে তাঁকে গৃহ-পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। স্বাস্থ্য কর্মী এবং চিকিৎসকেরা ফোনে তাঁর শারীরিক অবস্থার উপর নজর রাখবেন। কোনও ধরনের উপসর্গ দেখা দিলেই ব্যবস্থা নেবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

চতুর্থ শ্রেণির ব্যক্তিদের করোনাভাইরাস মোকাবিলা করার প্রাথমিক পাঠ দেওয়া হবে এবং লোকজনের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হবে।

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ভারতে এখনও যে সমস্ত আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া গিয়েছে, তাঁরা হয় করোনা আক্রান্ত দেশ ভ্রমণ করে এসেছেন নয়তো কোনও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই রোগীর ইতিহাস আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এবং সেই অনুযায়ী কী ভাবে চিকিৎসা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।’’ এক স্বাস্থ্য কর্তা জানিয়েছেন, নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী জেলা ব্লক এবং পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত স্বাস্থ্যকর্মী এবং আশাকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা শুরু হয়ে গিয়েছে রবিবার থেকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Kolkat West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy