গ্রাফিক: তিয়াসা দাস
অনেক পুরসভার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। প্রশাসক বসিয়ে কাজ চলছে। বিরোধীরা অভিযোগ তুলছিল, রাজ্য সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবে পুরভোট আটকে রেখেছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের জেরে পরিস্থিতি এতটাই স্পর্শকাতর যে, ভোট পিছিয়ে দেওয়ায় কোনও দলই আর আপত্তি করতে পারল না। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, সোমবার সব দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই আপাতত ভোট না করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও বিজেপির অভিযোগ, ভোট আপাতত হচ্ছে না, আলোচনার আগেই এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় কমিশন।
রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভার মেয়াদ বছরখানেক আগেই শেষ গিয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, সে সব পুরসভায় প্রশাসক বসিয়ে ভোট আটকে রেখেছে রাজ্য সরকার। শেষ পর্যন্ত কমিশন ও রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জল্পনা তৈরি হয় যে, এপ্রিলের শেষ দিকে ভোট হতে পারে, তখনই করোনা আতঙ্কের শুরু। দেশে প্রতি দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি স্কুল-কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শপিং মল বন্ধ হচ্ছে, বাতিল হচ্ছে ক্রিকেট, ফুটবল ম্যাচ। এমন পরিস্থিতিতেই সোমবার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
তার আগে আনন্দবাজার ডিজিটাল প্রশ্ন তুলতে থাকে, এমন পরিস্থিতিতে কি পুরভোট আদৌ করানো সম্ভব? বিরোধীদের পাশাপাশি শেষমেশ শাসকদল তৃণমূলও জানায়, করোনা পরিস্থিতিতে পুরভোট না করানোই উচিত। ফলে কমিশন ভোট পিছিয়ে দিচ্ছেই, এমন গুঞ্জন শুরু হয় রবিবার থেকেই। এ দিন তৃণমূলের তরফে বৈঠকে ছিলেন সুব্রত বক্সী ও তাপস রায়, বিজেপির জয়প্রকাশ মজুমদার ও সব্যসাচী দত্ত, বামেদের হয়ে সুজন চক্রবর্তী এবং কংগ্রেসের প্রতিনিধি ছিলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য। বৈঠকের পর রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাস জানান, আপাতত ভোট না করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে নির্বাচনী প্রস্তুতি জারি থাকছে।
পুরভোট ও পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনার দায়িত্ব রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে এই দুই ভোটের নির্ঘণ্ট নির্ধারিত করে কমিশন। বৈঠকের পর সুব্রত বক্সী জানান, ‘‘এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, আমরা এখন ভোট চাইছি না। তবে ভোট প্রক্রিয়া বন্ধ থাকুক, এটাও চাই না। আমরা সেটাই কমিশনকে জানিয়েছি।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যে জারি মহামারী আইন, ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ
কমিশনের বক্তব্য, সব দলের মতামতের প্রেক্ষিতেই এখন ভোট না করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু বিজেপির বক্তব্য, কমিশন আগে থেকেই পিছনোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিল। দলের প্রতিনিধি হিসেবে কমিশনে গিয়েছিলেন জয়প্রকাশ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘এখন পুরভোট হচ্ছে না— কমিশনের পক্ষে এই বক্তব্য দিয়েই আলোচনা শুরু হয়। মানুষের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। পুরভোট তার চেয়ে বড় নয়। আমাদের মতামত চাইলে, আমরা বলি মানুষের স্বার্থই আগে। তবে বিজেপি পুরভোটের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’’ সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘মানুষ পরিষেবা পাচ্ছে না। পুর নির্বাচন হলে পৌর প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পর তবেই পরিষেবা দেওয়া সম্ভব। আমরা চাই তাড়াতাড়ি ভোট হোক। তবে এখন যা পরিস্থিতি, তাতে ভোট হওয়া সম্ভব নয়।’’
ভোট পিছনো নিয়ে আপত্তি না থাকলেও যখনই ভোট হোক, তার প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই অভিযোগ তুলে রাখল বামেরা। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুজন চক্রবর্তী। দাবি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার ভোট পিছনোর একটা অজুহাত খুঁজছিল। কমিশন যদি মানুষের কথা ভেবে ভোট পিছোতে চায়, আমাদের আপত্তি নেই। এটা একটা পাগলের রাজত্ব চলছে। রাজ্য সরকারের পক্ষে এখন ভোট করা সম্ভব নয়। কমিশন রাজ্য সরকারের কথা না শুনে চলতে পারবে না। তাই ভোট পিছিয়ে যাক, আমাদের আপত্তি নেই।’’ ইভিএম-এ ভোট করানোর পক্ষেও সওয়াল করেন সুজন।
আরও পডু়ন: করোনার জেরে আপাতত পুরভোট নয়, জানিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন
কমিশন ও রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করছে ছাড়েননি কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘এই করোনাভাইরাসের জেরে নির্বাচন যদি পিছিয়ে যায়, আমাদের আপত্তি নেই। তবে আমরা চাই দ্রুত নির্বাচনের দিন ক্ষণ ঘোষণা হোক। এমনিতেই টালবাহানা চলছে। রাজ্য সরকারের অঙ্গুলি হেলনে চলছে কমিশন।’’
বিরোধীদের অভিযোগে অবশ্য আমল দিতে চাননি রাজ্য কমিশনার সৌরভ দাস। তিনি বলেন, ‘‘সব রাজনৈতিক দলের বক্তব্য আমরা শুনেছি। ভোট পিছিয়ে গেলে কোনও দলেরই কোনও সমস্যা নেই। আপাতত ভোট হচ্ছে না, তবে ভোট প্রক্রিয়া পিছোচ্ছে না। ভোট করতে গেলে যা যা করা দরকার, সবই প্রস্তুত। পরবর্তীকালে আমরা আলোচনায় বসব। তার পর সিদ্ধান্ত নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy