Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

‘হয় করোনায় মরব, নইলে খিদের জ্বালায়’

ভরা চৈত্র সেলের বাজারে খদ্দের নেই। ধর্মতলার মেট্রো গলিতে অন্যান্য দিন পা ফেলা যায় না। এ দিন সেখানেও রাস্তা ফাঁকা!

ছবি সংগৃহীত।

ছবি সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২০ ০৫:২৪
Share: Save:

অন্যান্য দিন দুপুরে মাথায় মোট বইতে বইতে দম ফেলার ফুরসত পান না মহম্মদ আজমির। বৃহস্পতিবার তাঁকেই দেখা গেল, চাঁদনি চকের ফুটপাতে শুয়ে ঘুমোচ্ছেন। ডাকাডাকি করতে ঘুম ভেঙে উঠে বসলেন। বললেন, ‘‘সকাল মাত্র একটা গাড়ি ধুয়ে ৫০ টাকা পেয়েছি। তা খরচ করে ফেলতে পারব না। তাই খিদের জ্বালায় জল খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’’

সর্বাত্মক করোনা-ত্রাসে কলকাতার বাণিজ্যকেন্দ্রে ছড়িয়ে থাকা মুটে-মজুরদের কী হাল, আজমিরের জল খেয়ে ঘুমিয়ে থাকার দৃশ্যবিন্দুতে কার্যত তারই সিন্ধুদর্শন। দোকানদার-ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা-আতঙ্কের প্রভাব পড়েছে বাজারে। কয়েক দিন ধরেই ব্যবসায় মন্দা চলছে। তার জেরে চূড়ান্ত দুরবস্থার কবলে মুটে-মজুরেরা। কারণ, তাঁদের অধিকাংশই মাথায় বা সাইকেল-ভ্যানে চাপিয়ে গুদাম থেকে দোকানে বা দোকান থেকে ক্রেতার গাড়িতে মালপত্র বোঝাই করেন।

আদতে বিহারের বাসিন্দা আজমিরের সঙ্গে ফুটপাতে থাকেন তাঁর কয়েক জন দেশোয়ালি ভাইও। বাজার মন্দা দেখে তাঁদের অনেকে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। চাঁদনি চকের ভ্যানচালক কুন্দন সিংহ ঝিমিয়ে পড়েছেন। দিনে গড়ে পাঁচ ‘ট্রিপ’ মালপত্র বহন করেন তিনি। এ দিন বিকেল পর্যন্ত মাত্র এক ‘ট্রিপ’ হয়েছে। বাজার আবার কবে গরম হবে, সেই আশাতেই লড়ে যাচ্ছেন তিনি।

পাকা দোকানের ব্যবসায়ীদেরও মেজাজ বিগড়ে গিয়েছে। অন্য সময় সরগরম সর্দারজির গাড়ির যন্ত্রাংশের দোকানে গত তিন দিনে খদ্দের আসেনি। নিস্তেজ দিনে দোকানে ভাই-বেরাদরেরা গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন।

শহরের অন্যত্র একই অবস্থা। গড়িয়াহাটের বিরাট শাড়ির বিপণির মালিক গালে হাত দিয়ে বসে মাছি তাড়াচ্ছেন। মাসের খরচ দিন দিয়ে ভাগ করলে দৈনিক হাজার ষাটেক টাকা খরচ হয়েছে। গত তিন দিনে তাঁর দোকানে বিক্রি সাকুল্যে সাত হাজারও পেরোয়নি। ফুটপাতের দোকানিদেরও অবস্থা সঙ্গিন। ভরা চৈত্র সেলের বাজারে খদ্দের নেই। ধর্মতলার মেট্রো গলিতে অন্যান্য দিন পা ফেলা যায় না। এ দিন সেখানেও রাস্তা ফাঁকা!

আজমির বললেন, ‘‘স্বাভাবিক সময়ে মালপত্র বয়ে এবং গাড়ি ধুয়ে দিনে ৪০০-৫০০ টাকা রোজগার হত। কয়েক দিন ধরে তার সিকিভাগও হচ্ছিল না। আজ তো একেবারে পঞ্চাশে এসে ঠেকেছে।’’ এ ভাবে চললে কী করবেন তিনি? ছোটখাটো চেহারার প্রৌঢ় মোটবাহক বললেন, ‘‘কী আর হবে? হয় করোনায় মরব, নইলে খিদের জ্বালায়!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Coolie Labour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy