হঠাৎ হঠাৎ কড়া নড়ে উঠছে লোহার দরজায়। কড়া নেড়ে নেড়ে বলা হচ্ছে, ‘তাড়াতাড়ি জামাকাপড় গুছিয়ে নিন। আপনাকে অন্য জেলে বদলি করা হচ্ছে।’ সব কিছু গুছিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হচ্ছে ঘণ্টাখানেক।
দিন দশ-পনেরো ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলে বন্দি মাওবাদীদের সেলের দরজায় এ ভাবেই ক়ড়া নেড়ে বদলির কথা শুনিয়েছেন কারারক্ষীরা। তার পরে রাতারাতি এক জেল থেকে অন্য জেলে দল বেঁধে বদলি হয়ে যেতে হচ্ছে মাওবাদী সংগঠনের কর্মী-নেতাদের। এই ভাবে এক দিনের নোটিসে অন্তত ৭০ জন বন্দিকে এক জেল থেকে অন্য জেলে বদলি করার ঘটনা আগে হয়েছে কি না, তা মনে করতে পারছেন না জেলকর্তারা।
কাদের বদলি করা হচ্ছে?
জবাবে জেলকর্তারা জানাচ্ছেন কে নেই বদলির তালিকায়! তেলুগু দীপক, ছত্রধর মাহাতো, সুদীপ চোংদার, দীপক কুমার, মধুসূদন মণ্ডল, পতিতপাবন হালদারের মতো বড় মাপের নেতারা তো আছেনই। আছেন মাওবাদীদের মিছিলে হাঁটার অভিযোগে ধৃত সদ্য আঠারোর গ্রামীণ তরুণও। প্রেসিডেন্সি, আলিপুর, দমদম, মেদিনীপুর— রাজ্যের এই চারটি প্রধান জেলের বন্দি মাওবাদী নেতা-কর্মীদের রাতারাতি তুলে নিয়ে অন্য জেলে পাঠানো হয়েছে।
কেন এই আচমকা বদলি?
সরকারি ভাবে কোনও কারণ দেখানো হচ্ছে না। তবে প্রশাসনের একাংশের মতে, এই মুহূর্তে মাওবাদী ভুত চেপে বসেছে সরকারের মাথায়। ভাঙড়ের সাম্প্রতিক আন্দোলনে নকশালপন্থী-মাওবাদীদের ছায়া দেখতে পেয়েছে নবান্ন। গোয়েন্দা রিপোর্টও বলছে, রাজ্যে ধীরে ধীরে শক্তি বাড়াচ্ছে মাওবাদীরা। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পরে গত কয়েক মাসে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন গুপি, প্রশান্ত, অমল, প্রদীপ চক্রবর্তীর মতো মাঝারি মাপের মাওবাদী নেতারা। গোয়েন্দাদের অনুমান, মূলত তাঁদের মাধ্যমেই আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে সুদীপ চোংদার, দীপক কুমার, পতিতপাবনদের মস্তিষ্ক।
কিন্তু এক জেল থেকে অন্য জেলে সরিয়ে দিলে কতটা কী লাভ হবে?
জেল সূত্রের খবর, সিসিটিভি-র মতো নজরদারির বন্দোবস্ত রয়েছে দু’তিনটি জেলে। কিন্তু তা হাতে গোনা কয়েক জনের গতিবিধির উপরে নজরদারি চালায়। বাকি বন্দিরা নির্বিবাদে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পান। তা ছাড়া বন্দিদের একটা বড় অংশ নিয়মিত মোবাইল ব্যবহার করছেন। মোবাইল রয়েছে কারারক্ষীদের কাছেও। অভিযোগ, জেলবন্দি মাওবাদী শীর্ষ নেতারা কারারক্ষী ও অন্য বন্দিদের মোবাইল ব্যবহার করে নিয়মিত নির্দেশ পাঠাচ্ছিলেন বাইরে। তার জেরে মাওবাদীদের সক্রিয়তা বাড়ছিল।
প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, এক জেলে শিকড় গেড়ে মৌরসি পাট্টা চালাচ্ছিলেন মাওবাদীরা। তাঁরা জেলের অন্য বন্দি ও কারারক্ষীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে মোবাইল ব্যবহার করছিলেন। বদলি করায় এ বার অন্তত কিছু দিন সেটা বন্ধ থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। ‘‘নতুন জেলে গিয়ে কারারক্ষী ও অন্য বন্দিদের সঙ্গে আলাপ জমাতে সময় লাগবে। ফলে বাইরে থাকা মাওবাদী কর্মীদের সঙ্গে জেলে বন্দি নেতাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে,’’ মনে করেন প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা।
ওই প্রশাসনিক কর্তা জানান, এই পদ্ধতিতে আপাতত কিছু দিনের জন্য নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে। ওই মাওবাদী নেতা-কর্মীরা নতুন জেলে থিতু হয়ে বসে তৎপর হওয়ার আগেই আবার তাঁদের বদলি করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy