—নিজস্ব চিত্র।
ছবি নিয়ে বিগত কয়েক দিন ধরেই ডামাডোল চলছেই শাসক তৃণমূলের অন্দরে। যার সূত্রপাত, নেতাজি ইন্ডোরে দলের সাম্প্রতিক অধিবেশন। যেখানে দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি না-থাকা নিয়ে এক রকম কোন্দল শুরু হয়ে গিয়েছে দলের অন্দরে। তা নিয়ে বার বার প্রকাশ্যে চলে আসছে দলের নেতাদের মতানৈক্য। সেই আবহে পঞ্চায়েত সমিতির কার্যালয়ে (সরকারি প্রতিষ্ঠান) মুখ্যমন্ত্রী মমতার পাশে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের ছবি ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। সেই বিতর্কের রেশ এখনও কাটেনি, তার মধ্যেই একটি সরকারি অনুষ্ঠানে মমতার পাশে অভিষেকের ছবি প্রকাশ্যে চলে এল! এতেই অনেকের প্রশ্ন, তা হলে কি দলীয় নেতারা কোনও রকম ‘ঝুঁকি’ই নিতে চাইছেন না?
ইন্ডোর বিতর্কের পর থেকেই অভিষেকের ‘কর্তৃত্ব’ নিয়ে নানা প্রশ্ন তৃণমূলের অন্দরে ঘুরছে। তার মধ্যেই সম্প্রতি উলুবেড়িয়া-২ পঞ্চায়েত সমিতির কার্যালয়ে সভাপতি মালেখা খাতুনের ঘরের দেওয়ালে মুখ্যমন্ত্রী মমতার ছবির পাশে অভিষেকের ছবি প্রকাশ্যে চলে আসে। বিতর্কের মুখে অভিষেকের ছবিটি দেওয়াল থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই ছবিটি সরানো হয়েছে। সেই বিতর্ককেই আবার উস্কে দিল পূর্ব বর্ধমানের বর্ধমানে শহরে দুর্গাপুজোর মা কার্নিভালের সম্মান অনুষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানের ব্যানারে দেখা গিয়েছে, উপরে বাঁ দিকে মমতার ছবি। অভিষেকের ছবি ঠিক তার নীচে। রবিবার বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল জেলা প্রশাসন। মা কার্নিভালে অংশ নেওয়া পুজো কমিটিগুলির মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীদের পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ও ইন্দ্রনীল সেন এবং বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডল। ছিলেন জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি-সহ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা।
সরকারি অনুষ্ঠানে কেন অভিষেকের ছবি থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। বিজেপি জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা বলেন, ‘‘আসলে প্রশাসনের আধিকারিকেরা এখন দু’কান কাটা হয়ে গিয়েছে। সরকারি অনুষ্ঠানে এখানকার সাংসদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অথচ অনুষ্ঠানের ব্যানারে ছবি আছে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের (অভিষেক)। কোনটা সরকারি আর কোনটা তৃণমূলের অনুষ্ঠান, তা এখন বোঝা যায় না। নির্লজ্জ প্রশাসন!’’ এই বিতর্কে মুখে কুলুপ এঁটেছেন জেলাশাসক।
তবে জেলায় দলের একাংশের মতে, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ছবি-বিতর্কের পর যা হয়েছে, তার পর আর কেউ হয়তো ‘ঝুঁকি’ নিতে চাইছেন না। সরকারি অনুষ্ঠান না দলীয় কর্মসূচি, তা না দেখে মমতা-অভিষেকের ছবি সাঁটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক জেলা নেতারই কথায়, ‘‘বাইরে বিতর্ক হলেও অন্তত দলে খুব একটা অসুবিধেয় পড়তে হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি কেন, এই নিয়ে দলের অন্দরে কেউ প্রশ্ন তুলতে সাহস পাবে না। বরং, অভিষেকের ছবি না থাকলে তো প্রশ্ন ওঠে।’’
ইন্ডোরের দলীয় অধিবেশনে অভিষেকের ছবি না-থাকা নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছিলেন দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাতে কার্যত বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল শাসকদলকে। কুণাল স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, অভিষেকের ছবি না-থাকায় মঞ্চ অসম্পূর্ণ লাগছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘অভিষেকের ছবি কারা বাদ দিয়েছেন, তা আমি বলতে পারব না। তবে যাঁরাই এটা করে থাকুন, ঠিক করেননি।” তৃণমূল সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবারের সভা আয়োজনের মূল দায়িত্ব ছিল দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর উপরে। নামোল্লেখ না করলেও মনে করা হচ্ছে বক্সীর দিকেই ছিল কুণালের তির। তাতে দলের ‘আদি-নব্যের’ দ্বন্দ্ব নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। যদিও ওই অধিবেশনে অভিষেক ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির হওয়ার সময় বক্সী বলেছিলেন, ‘‘সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের উদ্যোগেই এই সভার আয়োজন।’’ কিন্তু কুণালের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলে প্রথম ও শেষ কথা। অভিষেককে জিজ্ঞেস করলেও তা-ই বলবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছিল সেটাই যথেষ্ট।’’ এ নিয়ে দলের অন্দরে জলঘোলা হয়।
এ সবের মধ্যেই সরকারি প্রতিষ্ঠান বা অনুষ্ঠানে মমতার সঙ্গে অভিষেকের ছবি থাকা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। দলের একাংশের মত, এই পরিস্থিতিতে ছবি না রাখলে হয়তো দলে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তার মোকাবিলা করা কঠিন। তার চেয়ে বিরোধীদের অভিযোগের জবাব দেওয়া অনেক সহজ। বর্ধমানের অনুষ্ঠান-বিতর্কের প্রেক্ষিতে রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসই যেমন বলেছেন, ‘‘বিজেপির অভিযোগ করা অভ্যাস। তাই তারা এ সব অভিযোগ করছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভার সাংসদ। তাই তাঁর ছবি থাকতেই পারে। তৃণমূল কখনও সরকারি মঞ্চ ব্যবহার করে না।’’ তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি মন্ত্রী ইন্দ্রনীল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy