Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
CPM Election Review

সিপিএমের পর্যালোচনায় ভিন্ন ছবি জেলায় জেলায়, কোথাও ঠাট্টা, কোথাও স্বাধীনতার স্বাদ দিল পার্টি

ভোট পর্যালোচনায় সিপিএমের নিচুতলা থেকে বিবিধ মতামত উঠে আসছে। তার মধ্যে অন্যতম হল দলের মধ্যে মধ্যবিত্ত মানসিকতার আগ্রাসন। উঠে আসছে সমাজমাধ্যম ব্যবহারে দলীয় কর্মীদের ণত্ব-ষত্ব জ্ঞানের অভাব।

বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক।

বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক। —ফাইল চিত্র।

শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৪ ১২:১৫
Share: Save:

আরও একটা ভোট বিপর্যয়ের পর বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক। লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পর্যালোচনা শুরু করবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। তার আগে জেলাগুলি নিচুতলায় পর্যালোচনা সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা (সার্কুলার) পাঠিয়েছে। আর তাতেই এক একটি জেলায় এক এক রকম ছবি উঠে আসছে। নির্বাচনী ফল বিশ্লেষণের জন্য সিপিএমের এক একটি জেলা কমিটি এক এক রকম প্রক্রিয়া নিয়েছে। কোনও জেলায় তা নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা শুরু হয়েছে দলের মধ্যে। আবার কোনও কোনও জেলা কমিটি ‘স্বাধীনতার স্বাদ’ দিতে চেয়েছে এরিয়া কমিটি এবং শাখা কমিটিগুলিকে।

দক্ষিণবঙ্গের একটি জেলায় সিপিএম লোকসভা ভোট পর্যালোচনার জন্য ৩৮ পয়েন্টের ফর্ম পাঠিয়েছে নিচুতলায়। যে ফর্মের ৩৮ নম্বর পয়েন্টটি নিয়েই ঠাট্টা-তামাশা শুরু হয়েছে দলের মধ্যে। সেখানে ৩৮ নম্বর প্রশ্নটি হল, ‘আমাদের কাঙ্ক্ষিত ফল না হওয়ার কারণ কী?’ দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে, কোন ফলাফলের আকাঙ্ক্ষা করা হয়েছিল? ওই জেলার এক তরুণ নেতার কথায়, “পার্টি হয়তো ভেবেছিল, গোটা দশেক আসনে জামানত থাকবে! সেটা না হওয়ার কারণেই হয়তো ভেঙে পড়েছে!”

কলকাতা জেলা কমিটি আবার এ সবের মধ্যেই যায়নি। তারা ‘স্বাধীনতার স্বাদ’ দিতে চেয়েছে। গত ১০ জুন জারি করা পর্যালোচনা সংক্রান্ত নির্দেশিকায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবন লিখেছে, ‘‘গতে বাঁধা কোনও সীমাবদ্ধ প্রোফর্মা যান্ত্রিক ভাবে পূরণের মাধ্যমে নির্বাচনী পর্যালোচনার কাজ সমাপ্ত না করে কমরেডদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি সম্বলিত মূল্যায়ন যথাসম্ভব পর্যালোচনা সবাগুলিতে লিপিবদ্ধ করতে হবে।’’ তার কারণ ব্যাখ্যা করে কলকাতা জেলা সিপিএমের এক সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, “পর্যালোচনার ক্ষেত্রে আমরা খোলাখুলি মত জানতে চেয়েছি। কোনও ধাঁচা বেঁধে দিয়ে বলার জায়গাকে সঙ্কুচিত করতে চাইনি।”

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী তথা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “আমরা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষ থেকে কোনও অভিন্ন ফর্ম জেলাগুলিকে দিইনি। জেলাগুলি তাদের মতো করে পর্যালোচনার কাজ করছে।” রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটও পর্যালোচনার বিষয়ে ‘স্বাধীনতা’ দিতে চেয়েছে নিচুতলায়। কিন্তু কোনও কোনও জেলা সেই মনোভাবকে গুরুত্ব দিতে চায়নি। দলের আর এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “কোনও জেলা যদি পর্যালোচনা প্রক্রিয়াকে গতে বাঁধতে চায়, তা হলে সেই জেলানেতৃত্বের চিন্তার দৈন্যই প্রকট হয়। যেমনটা হয়েছে ৩৮টি পয়েন্টের ফর্ম পাঠানো জেলাটির ক্ষেত্রে।”

ইতিমধ্যেই সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, পর্যালোচনার ক্ষেত্রে তাঁরা বৃত্ত বড় করতে চান। পার্টির বাইরের মানুষ, এমনকি, যিনি বিরোধী ভোটার, তাঁরও মতামত নেবে সিপিএম। সেলিমের স্পষ্ট কথা, “আমরাই সব জানি, আর কেউ কিছু জানেন না, এটা হতে পারে না।”

ভোট পর্যালোচনায় ইতিমধ্যেই সিপিএমের নিচুতলা থেকে বিবিধ মতামত উঠে আসছে। তার মধ্যে অন্যতম দলের মধ্যে মধ্যবিত্ত মানসিকতার আগ্রাসন। পাশাপাশিই উঠে আসছে সমাজমাধ্যম ব্যবহারে দলীয় কর্মীদের ণত্ব-ষত্ব জ্ঞানের অভাব। এর আগের ভোটগুলিতে বিপর্যয়ের পরেও বিবিধ আলোচনা দলের মধ্যে হয়েছিল। কিন্তু সিপিএম তার অভিমুখ বদলায়নি। কোনও কোনও নেতা ঘরোয়া আলোচনায় স্পষ্টই বলছেন, দলের কাঠামো টিকিয়ে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ১৩ বছর আগেও যে দল বাংলা শাসন করত, সেই দলের নেতাদের মুখে এই ধরনের কথা খানিকটা আর্তনাদের মতোই শোনাচ্ছে। কিন্তু এত বিপর্যয়ের পরেও সিপিএমের কোনও কোনও জেলার নেতাদের কোনও হেলদোল নেই। তাঁরা কড়া শাসনের শিকলে বাঁধতে চাইছেন দলকে। আর নিচুতলায় বাজছে শিকলভাঙার গান।

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Lok Sabha Election 2024
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy