Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
The West Bengal Universities and Colleges Act

উচ্চশিক্ষা বিলের বিজ্ঞপ্তিতে বিতর্ক

পার্থবাবু বিধানসভায় ‘দ্য ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ (প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ) বিল, ২০১৭’ পেশ করেছিলেন ২০১৭-র ফেব্রুয়ারিতে।

উচ্চশিক্ষা বিলের বিজ্ঞপ্তিতে ধর্ম, প্রার্থী আদতে অন্য কোনও দেশের বাসিন্দা কি না ইত্যাদি বিষয়ে আপত্তি উঠেছে।

উচ্চশিক্ষা বিলের বিজ্ঞপ্তিতে ধর্ম, প্রার্থী আদতে অন্য কোনও দেশের বাসিন্দা কি না ইত্যাদি বিষয়ে আপত্তি উঠেছে।

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২০ ০৪:১৪
Share: Save:

বিল হিসেবে বিধানসভায় পাশের পরেই বিষয়টি নিয়ে তীব্র বিরোধিতা শুরু হয়েছিল। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ বা পুলিশ দিয়ে প্রার্থীর বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া এবং মেডিক্যাল টেস্ট বা স্বাস্থ্যপরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে এ বার গেজেট-বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হল। সেই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে আবার বিতর্ক শুরু হয়েছে। শিক্ষকদের বক্তব্য, গেজেটের ভাষা নিয়ে তাঁদের আপত্তি আছে। তাঁরা এই বিজ্ঞপ্তি বাস্তবায়িত হতে দেবেন না। বিতর্কের মধ্যেই বুধবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রার্থী আগে কোন দেশে ছিলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে তা দেখা হবে না।

পার্থবাবু বিধানসভায় ‘দ্য ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ (প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ) বিল, ২০১৭’ পেশ করেছিলেন ২০১৭-র ফেব্রুয়ারিতে। তাতে অন্য কয়েকটি বিতর্কিত বিষয়ের সঙ্গে পুলিশি যাচাই এবং স্বাস্থ্যপরীক্ষাও ছিল। বিরোধী সব শিক্ষক সংগঠনই সেই বিলের বিরোধিতা করেছিল তীব্র ভাবে।

বিলে জানানো হয়েছিল, আগে শিক্ষকদের নিয়োগপত্র দিয়ে তার পরে পুলিশি যাচাই ও স্বাস্থ্যপরীক্ষার পর্ব দু’টি সারা হবে। যদি দেখা যায় যে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এই দুই পরীক্ষার বাধা ডিঙোতে পারেননি, তা হলে তিনি আর শিক্ষক থাকবেন না।

বিল পাশ হয়ে গেলেও গত তিন বছরে পুলিশি যাচাই ও স্বাস্থ্যপরীক্ষার বিষয় দু’টি বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু এ বার গেজেট-বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় সেগুলো রূপায়িত হতে যাচ্ছে বলেই শিক্ষকদের একাংশের ধারণা। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পুলিশি যাচাই ও স্বাস্থ্যপরীক্ষা তো হবেই। সেই সঙ্গে ‘পার্সোনাল অ্যান্টিসিডেন্টস’ বা প্রার্থীর বংশপরিচয় খতিয়ে দেখবে পুলিশ। এগুলো কী ভাবে করা হবে, সেই বিষয়ে দু’টি ফর্ম জুড়ে দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। পুলিশি যাচাইয়ের ফর্মে চার নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, শিক্ষকপদের আবেদনকারী যদি আদতে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল বা অন্য কোনও দেশের বাসিন্দা হন, তা হলে সেই দেশে তাঁদের ঠিকানা কী ছিল, তা জানাতে হবে। পাঁচ নম্বর পয়েন্টে জানানো হয়েছে, প্রার্থী গত পাঁচ বছর যেখানে ছিলেন, সেখানকার কথা বিস্তারিত ভাবে জানাতে হবে। দশ নম্বর পয়েন্টে জানতে চাওয়া হচ্ছে, প্রার্থী কোন ধর্মাবলম্বী।

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের বক্তব্য, ২০১৭-র বিলে ‘পার্সোনাল অ্যান্টিসিডেন্টস’ বা ব্যক্তিগত পূর্বেতিহাস কথাটি ছিল। তিন বছর পরে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (এনপিআর), জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে দেশ যখন উত্তাল, সেই অগ্নিগর্ভ সময়ে ‘পার্সোনাল অ্যান্টিসিডেন্টস’ কথাটি শিক্ষক নিয়োগের গেজেট-বিজ্ঞপ্তিতে কেন রাখা হল, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বুধবার জানান, এই সরকার প্রতি পদক্ষেপে শিক্ষকদের অপমান করে চলেছে। এই বিজ্ঞপ্তিতে সেটা একেবারে চরম জায়গায় পৌঁছে গেল। তিনি বলেন, ‘‘যতই রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল বলুক যে, এখানে সিএএ, এনপিআর, এনআরসি চালু করা হবে না, আসলে তারা সেই পথেই যাচ্ছে। আমরা এই বিজ্ঞপ্তি মানব না।’’ এ দিন জুটার পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এই বিজ্ঞপ্তি বলবৎ করা যাবে না, এই মর্মে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (কুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থিব বসু বলেন, ‘‘এটা রাজ্য সরকারের ঘোষিত নীতির বিরোধী। ভারতবাসী হিসেবে এই বিজ্ঞপ্তির চরম বিরোধিতা করছি।’’ রাজ্য কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (ওয়েবকুটা) সহ-সভাপতি প্রবোধ মিশ্র বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার মুখে যা বলছে, তার উল্টোটাই করছে। আমরা এই বিজ্ঞপ্তির ঘোরতর বিরোধী।’’

শিক্ষামন্ত্রী রাতে বলেন, ‘‘প্রার্থী আগে কোন দেশে ছিলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে এ-সব বিষয় থাকবে না। এটা বিলেও ছিল না। ‘পার্সোনাল অ্যান্টিসিডেন্টস’-এ প্রার্থীর বংশপরিচয় নয়, তাঁর পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। আর ধর্মের উল্লেখ তো সব আবেদনপত্রেই থাকে। এখানে থাকবে না কেন?’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE