বিভাগীয় প্রধান অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি নিয়েছেন। এ দিকে সংশ্লিষ্ট বিভাগে আর কোনও স্নাতকোত্তর পাশ করা চিকিৎসক নেই। অগত্যা বিভাগের কাজকর্ম পরিচালনার জন্য এক জন রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার তথা ‘ক্লিনিক্যাল টিউটর’-কে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের এই ঘটনা ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। চিকিৎসকদের দাবি, চিকিৎসা-শিক্ষা ক্ষেত্রে (মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিস) দীর্ঘদিন ধরে নতুন নিয়োগ না হওয়ার ফলে শূন্য পদের সংখ্যা বাড়ছে। তাতে জেলার মেডিক্যাল কলেজগুলি কার্যত খুঁড়িয়ে চলছে। প্রায় দেড় বছর আগে বিভাগীয় পদোন্নতির ইন্টারভিউ হলেও সব তালিকা এখনও প্রকাশিত হয়নি।
চিকিৎসক মহলের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ না হওয়ার কারণেই রায়গঞ্জের মতো বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের একাধিক বিভাগে প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, টিউটর বা ডেমনস্ট্রেটর পদ ফাঁকা রয়েছে। তাতে প্রশাসনিক কাজ তো বটেই, রোগী পরিষেবাও ব্যাহত হচ্ছে। সূত্রের খবর, ২০২৪-এর ৩১ অগস্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা ক্ষেত্রে অনুমোদিত ৯২৪টি প্রফেসর পদের মধ্যে ২৯৩টি, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের ১২০০-র মধ্যে ৪২৪টি, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরের ১৬৮৯-এর মধ্যে ৩৭৮টি এবং টিউটর বা ডেমনস্ট্রেটরের ২০৪৪টির মধ্যে ৯৮২টি পদ ফাঁকা।
২০২৩-এর সেপ্টেম্বরে ২৮০টি প্রফেসর, ৪২৮টি অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং ৪১৯টি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে বিভাগীয় পদোন্নতির ইন্টারভিউ হয়। ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস’-এর তরফে মানস গুমটা বলেন, “প্রায় দেড় বছর হতে চললেও বেশিরভাগ পদোন্নতির তালিকা অদৃশ্য কারণে প্রকাশিত হয়নি। প্রায় তিন বছর ধরে নতুন কোনও নিয়োগও হচ্ছে না। স্বাস্থ্য-শিক্ষার সব স্তরে প্রায় ৪০ শতাংশ পদ ফাঁকা। সেখানে বন্ডেড সিনিয়র রেসিডেন্ট দিয়ে কাজ চালোনা হচ্ছে।” যদিও স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব (স্বাস্থ্য-শিক্ষা) অনিরুদ্ধ নিয়োগীর দাবি, “পদোন্নতির কয়েকটি তালিকা বাকি রয়েছে, শীঘ্রই প্রকাশিত হবে। তবে ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলার কারণে নতুন নিয়োগ করা যাচ্ছে না।”
নিয়োগ সমস্যার কারণেই রায়গঞ্জ মেডিক্যালের রেডিয়োলজিতে কোনও স্নাতকোত্তর পাশ করা চিকিৎসক নেই এবং তাতেই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ চিকিৎসকদের। দিন কয়েক আগে ওই মেডিক্যালের রেডিয়োলজি বিভাগের ‘ক্লিনিক্যাল টিউটর’ অসিত রায় নিজের কাজের পাশাপাশি বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব সামলাবেন বলে নির্দেশিকা জারি করেন অধ্যক্ষ যাদবচন্দ্র সর্দার। যদিও, সিনিয়র চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কোনও বিভাগের প্রধান হতে গেলে কমপক্ষে স্নাতকোত্তর পাশ করতে হয়। যাদবচন্দ্রের দাবি, “শারীরিক অসুস্থতার কারণে রেডিয়োলজির বিভাগীয় প্রধান মহম্মদ আসিফ আলি অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি নিয়েছেন। ওই বিভাগে আর কোনও এমডি পাশ করা চিকিৎসক নেই। বিভাগের পাঁচ জন এমবিবিএস চিকিৎসকের মধ্যে অসিতবাবুই সিনিয়র। তাই তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।” অনিরুদ্ধ বলছেন, “সরাসরি বিভাগীয় প্রধান লেখা ঠিক হয়নি। বিভাগীয় ইনচার্জ লেখা উচিত ছিল। নির্দেশিকা বদলের জন্য অধ্যক্ষকে বলা হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)