Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Becharam Manna

বেচারাম-প্রবীরের মন্তব্যে ফের ঝড় হুগলি তৃণমূলে

উত্তরপাড়ার পুর-প্রশাসক দিলীপ দ্বিতীয়বারের জন্য তৃণমূলের জেলা সভাপতি মনোনীত হওয়ার পরে দলের অন্দরে ক্ষোভের চোরাস্রোত বেড়ে গিয়েছে বলে তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর। দলে তাঁর বিরোধী বলেই পরিচিত বেচারাম।

আলিঙ্গন: কর্মী সম্মেলনে বেচারাম মান্না ও প্রবীর ঘোষাল —নিজস্ব চিত্র

আলিঙ্গন: কর্মী সম্মেলনে বেচারাম মান্না ও প্রবীর ঘোষাল —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২০ ০২:০৩
Share: Save:

নেতাদের পরস্পর-বিরোধী মন্তব্যে সরগরম জেলা তৃণমূলের অন্দরমহল। রবিবার ‘কোন্দলের’ আগুনে ঘি ঢাললেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূলের সামনের সারির নেতা বেচারাম মান্না এবং উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল।

এ দিন উত্তরপাড়ায় তৃণমূলের কর্মী সম্মেলন ছিল। সেখানে বক্তৃতা করেন বেচারাম ও প্রবীর। দলের কোনও নেতার নাম না করে বেচারাম বলেন, ‘‘কর্মীরাই দলের শক্তি। কোনও নেতা দলে থেকে করে খাওয়ার পরে যদি কর্মীদেরই বঞ্চনা করে, তবে প্রয়োজনে সেই নেতাকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হবে। এই পরিবেশ হুগলি জেলায় তৈরি হচ্ছে।’’ সঙ্গে যোগ করেন: ‘‘পুলিশের লাথি খেয়েছেন, এমন নেতা দেখেছি। আবার পুলিশের কথা শুনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে গিয়েছেন, এমন নেতাও দেখেছি। এই রকম নেতাদের চিহ্নিত করতে হবে।’’

দলের কোন নেতাদের উদ্দেশে তাঁর ওই মন্তব্য, তা স্পষ্ট করেননি বাম আমলে সিঙ্গুরে কৃষিজমি আন্দোলনের নেতা বেচারাম। তবে, দলের একাংশ মনে করছেন, দলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবই তাঁর নিশানা।

এ দিন কর্মী সম্মেলনে প্রবীরের বক্তৃতাতেও দলীয় কোন্দলের প্রতিফলন ধরা পড়ে। তিনি বলেন, ‘‘দলের কিছু পচা মুখের জন্য জেলায় বিজেপির ভোট বেড়েছে। সেই পচা মুখগুলিকে বিশ্রামে পাঠাতে হবে।’’

তবে কার উদ্দেশে এই মন্তব্য, তা খোলসা করেননি প্রবীরও। দলের একাংশ মনে করছে, দিলীপকেই নিশানা করতে চেয়েছেন উত্তরপাড়ার বিধায়ক। কারণ, দিলীপ যে অঞ্চলের নেতা, সেই উত্তরপাড়ায় বিজেপির উত্থান হয়েছে গত লোকসভা ভোটে।

এ প্রসঙ্গে দিলীপ-শিবিরের এক নেতার তীর্যক মম্তব্য, ‘‘যিনি পচা মুখের কথা বলছেন, তিনি তো উত্তরপাড়ার বিধায়ক। কেন উত্তরপাড়ায় বিজেপির উত্থান হল, তার উত্তর তাঁকেও দিতে হবে।’’

দিলীপ অবশ্য এই বিতর্কে জড়াতে নারাজ। তাঁর সংযত প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলকে যতটা সম্ভব বেশি শক্তিশালী যাতে করা যায়, দলের নির্দেশে সারাদিন সেই কাজই করার চেষ্টা করি। কারও ব্যক্তিগত মন্তব্য বা বক্তব্য থাকতেই পারে। সংবাদমাধ্যমের সামনে বা জনসমক্ষে কে কী বলেছেন, সেটা আমার বিষয় নয়। আমার কাজ, দলের নির্দেশ পালন করা। আমার কাজে কিছু ভুল হলে দল বলবে। সেটা শুধরে নেব।’’

উত্তরপাড়ার পুর-প্রশাসক দিলীপ দ্বিতীয়বারের জন্য তৃণমূলের জেলা সভাপতি মনোনীত হওয়ার পরে দলের অন্দরে ক্ষোভের চোরাস্রোত বেড়ে গিয়েছে বলে তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর। দলে তাঁর বিরোধী বলেই পরিচিত বেচারাম। এ দিন কর্মী সম্মেলনে প্রবীর এবং বেচারাম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাঙ্গিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তীও।

ঘটনাচক্রে, প্রবীরও জেলা রাজনীতিতে দিলীপ-বিরোধী বলে পরিচিত। জেলা নেতৃত্বের কোন্দল ঠেকাতে সম্প্রতি আসরে নামেন তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। যুযুধান দুই শিবিরের নেতাদের এক মঞ্চে হাজির হয়ে ভার্চুয়াল সভা করানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। সেই সভায় দিলীপ হাজির থাকলেও ছিলেন না প্রবীর ও বেচারাম।

এই দুই নেতার এ দিনের মন্তব্য শুনে দলের এক জেলা নেতার খেদ, ‘‘ওঁদের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, উলুবনে মুক্তো ছড়াচ্ছেন রাজ্য নেতৃত্ব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Becharam Manna TMC Hooghly Prabir Ghoshal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE