Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Satabdi Roy

ফেসবুকে বিক্ষুব্ধ সাংসদ শতাব্দী, শনিবারবেলায় তাকিয়ে তৃণমূল

ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করা হয়েছে, বীরভুমের মানুষ শতাব্দীকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে চাইলেও তাঁকে কর্মসূচি প্রসঙ্গে জানানোই হয় না।

জল্পনা শুরু শতাব্দী রায়কে নিয়ে।

জল্পনা শুরু শতাব্দী রায়কে নিয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:১৩
Share: Save:

এ বার জল্পনা শুরু শতাব্দী রায়কে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ‘শতাব্দী রায় ফ্যানস ক্লাব’-এর পেজে তাঁর নামে একটি বয়ান প্রকাশিত হয়েছে। যার শিরোনাম ‘বীরভূমে আমার নির্বাচন কেন্দ্রের মানুষের প্রতি’। ওই ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করা হয়েছে, বীরভুমের মানুষ তাঁকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে চাইলেও তাঁকে কর্মসূচি প্রসঙ্গে জানানোই হয় না। তাই ‘নতুন সিদ্ধান্ত’ নেওয়ার ইঙ্গিতও ওই পোস্টে দিয়ে দিয়েছেন শতাব্দী। আগামী ১৬ জানুয়ারি, শনিবার দুপুর ২টোয় তিনি ওই সিদ্ধান্ত জানাবেন বলেও জানিয়েছেন।

ওই ঘোষণার পরেই ‘সিঁদুরে মেঘ দেখছে’ তৃণমূল। কারণ, গত ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ‘বিক্ষুব্ধ’ বন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় একটি ফেসবুক পোস্ট করে জানিয়েছেন, শনিবারই বিকেল ৩টেয় ফেসবুক লাইভে এসে নিজের ‘অবস্থান’ স্পষ্ট করবেন তিনি। একই দিনে মন্ত্রী ও সাংসদের ইঙ্গিতপূর্ণ ঘোষণা করার কথায় শাসক তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ, শতাব্দী ও রাজীব— উভয়ই প্রকাশ্যে দলবিরোধী কথা বললে তার প্রভাব পড়তে পারে আগামী নির্বাচনে। বৃহস্পতিবার ওই পোস্টের পর শতাব্দীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ। তাঁর এক হিতৈষীর বক্তব্য, ফেসবুক পোস্টের পর দলের তরফে তাঁকে যোগাযোগ করা রুরু হতে পারে ভেবেই বীরভূমের সাংসদ ফোনটি বন্ধ করে রেখে থাকতে পারেন।

ফেসবুক পোস্টে শতাব্দী লিখেছেন, ‘২০২১ খুব ভালো কাটুক। সুস্থ থাকুন, সাবধানে থাকুন। এলাকার সঙ্গে আমার নিয়মিত নিবিড় যোগাযোগ। কিন্তু ইদানিং অনেকে আমাকে প্রশ্ন করছেন, কেন আমাকে বহু কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না। আমি তাঁদের বলছি, যে আমি সর্বত্র যেতে চাই। আপনাদের সঙ্গে থাকতে আমার ভাল লাগে। কিন্তু মনে হয় কেউ কেউ চায় না আমি আপনাদের কাছে যাই। বহু কর্মসূচির খবর আমাকে দেওয়া হয় না’। এর পরেই অভিনেত্রী-সাংসদ লিখেছেন, ‘না জানলে আমি যাব কী করে? এ নিয়ে আমারও মানসিক কষ্ট হয়। গত দশ বছরে আমি আমার বাড়ির থেকে বেশি সময় আপনাদের কাছে বা আপনাদের প্রতিনিধিত্ব করতে কাটিয়েছি। আপ্রাণ চেষ্টা করেছি কাজ করার। এটা শত্রুরাও স্বীকার করে’।

আরও পড়ুন: ‘বেআক্কেল’ শীত, ক্ষীণ রসের ধারা, বাজারে কম পড়েছে সোনালি নলেন

তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রের মানুষকে ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে তৃণমূল সাংসদ লিখেছেন, ‘এই নতুন বছরে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছি, যাতে আপনাদের সঙ্গে পুরোপুরি থাকতে পারি। আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ২০০৯ সাল থেকে আপনারা আমাকে সমর্থন করে লোকসভায় পাঠিয়েছেন। আশা করি, ভবিষ্যতেও আপনাদের ভালোবাসা পাব। সাংসদ অনেক পরে। তার অনেক আগে থেকেই শুধু শতাব্দী রায় হিসেবেই বাংলার মানুষ আমাকে ভালোবেসে এসেছেন। আমিও আমার কর্তব্য পালনের চেষ্টা করে যাব’। পোস্টের শেষে শতাব্দী লিখেছেন, ‘যদি কোনও সিদ্ধান্ত নিই, আগামী ১৬ জানুয়ারি ২০২১ শনিবার দুপুর দুটোয় জানাব’।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে তৃণমূলের প্রতীকে দাঁড়িয়ে প্রথমবারের জন্য বীরভূম লোকসভা থেকে সাংসদ হয়েছিলেন শতাব্দী। সংসদ বা নির্বাচনী এলাকা— সবেতেই সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল তাঁর। কিন্তু ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর বীরভুমের রাজনীতিতে ‘প্রভাব’ বাড়ে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের। একাধিকবার সংঘাত হয়েছে শতাব্দী-অনুব্রতর। কখনও কখনও প্রকাশ্যেও এসেছে পরস্পরের মতপার্থক্য। বাগ্‌যুদ্ধও হয়েছে সাংসদ বনাম সভাপতির। শতাব্দীর গোষ্ঠী অভিযোগ করেছে, সাংসদকে এড়িয়েই কর্মসূচি নিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্নেহধন্য’ অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডল। সাংসদ শতাব্দী অনুব্রতর বিরুদ্ধে দলের অন্দরে অভিযোগ করলেও তাতে কাজ হয়নি।

আরও পড়ুন: শুধু কৃষক নয়, জনস্বার্থও বিরোধী মোদীর কৃষি আইন, বললেন কাকলি

এর মধ্যে অবশ্য ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে অনুব্রত নেতৃত্বেই বীরভূম লোকসভায় জেতেন শতাব্দী। সেক্ষেত্রে দলনেত্রী মমতার ‘নির্দেশ’ কাজ করেছিল বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। তবে গত লোকসভা ভোচের পর থেকে অনুব্রতের সঙ্গে দূরত্ব আরও বাড়তে থাকে তাঁর। সম্প্রতি বোলপুরে মমতার পদযাত্রায় অংশ নিলেও তিনি যে দলের একাংশের কাজকর্মে ‘অখুশি’, তা শতাব্দী ঘনিষ্ঠমহলে গোপন করেননি। তাঁ লোকসভা কেন্দ্রের মানুষ বিভিন্ন সময়ে তাঁর কাছে অন্যায়ের সুরাহা চেয়েও পাননি— এমন অনুযোগও ঘনিষ্ঠমহলে করেছেন এই সাংসদ। বলেছেন, কলকাতায় দলের শীর্ষমহলে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। ঘটনাচক্রে, শতাব্দীর সাংসদপদের মেয়াদ শেষ হতে এখনও প্রায় সাড়ে তিন বছর বাকি। ফেসবুক পোস্টের পর স্বভাবতই জল্পনা শুরু হয়েছে তাঁর তৃণমূল-ত্যাগ নিয়ে। তবে পাশাপাশিই এটাও প্রণিধানযোগ্য যে, শতাব্দীর ফেসবুক পোস্টে বলা আছে, ‘যদি’ তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নেন। দ্বিতীয়ত, ওই পোস্টটি করা হয়েছে তাঁর ফ্যানদের ‘পেজ’ থেকে। শতাব্দীকে যেহেতু ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি, তাই এটাও জানা যায়নি যে, ওই পোস্টে তাঁর ‘আনুষ্ঠানিক অনুমোদন’ আছে কি না। তবে যে ভাবে এবং ভাষায় পোস্টটি লেখা হয়েছে, তাতে ঘনিষ্ঠমহলে শতাব্দীর সম্প্রতি বলতে-থাকা অনুযোগ এবং ক্ষোভের ছাপ স্পষ্ট।

অন্য বিষয়গুলি:

Satabdi Roy TMC Actress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy