(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবুল সুপ্রিয় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
গত বৃহস্পতিবারই নেতাজি ইন্ডোরে দলের বিশেষ অধিবেশন থেকে তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন, দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার-হওয়া নেতাদের পাশেই তিনি রয়েছেন। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ডাকনাম ‘বালু’ উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি না বালুরা চোর!’’ কিন্তু মঙ্গলবার বিধানসভার অধিবেশনের মাঝে মমতার মন্ত্রিসভার সদস্য বাবুল সুপ্রিয় জানিয়ে দিলেন, ‘‘গ্রেফতার হওয়া নেতাদের পাশে যে দল নেই, সেই অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।’’ যে বক্তব্য নিয়ে শাসক শিবিরের অন্দরেই ধোঁয়াশা এবং বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবারের দলীয় কর্মসূচি থেকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘কেষ্ট জেলে, পার্থ জেলে, মানিক জেলে, বালু জেলে। এটাই চলবে? যখন আপনারা (বিজেপি) আগামী দিন চেয়ারে থাকবেন না, তখন কোথায় থাকবেন, সেলে না কোলে?’’ পাশাপাশিই তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি না বালুরা চোর!’’ তৃণমূলের চার বিধায়কের ‘পাল্টা’ হিসেবে বিজেপির আট জনকে গ্রেফতার করা হবে বলেও হুঙ্কার দিয়েছিলেন মমতা।
মঙ্গলবার বিধানসভার অধিবেশনে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকদের নাম করে ‘চোর’ বলে আক্রমণ শানান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি বিধায়কেরা। সভাকক্ষের বাইরে তা নিয়ে পাল্টা শুভেন্দুকে রাজনৈতিক আক্রমণ করেন বাবুল। রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল বলেন, ‘‘আমি এটা মানছি যে, আমাদের কিছু নেতা কিছু ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগও রয়েছে। আদালত এবং বিচারব্যবস্থা পুরোটা দেখছে। পার্টি অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ওঁদের সঙ্গে নেই। পদ থেকেও অপসারণ করা হয়েছে।’’ বাবুলের আরও বক্তব্য, তাঁকে কখনও তৃণমূলের নেতারা বলেননি, বিজেপিতে কী হত, তা বলতে। আর শুভেন্দু এত দিন তৃণমূল করে গিয়ে এখন ‘আগ্রাসী’ হয়ে ময়দানে নেমেছেন। বাবুল এ-ও জানান, তিনি যদি মুখ খুলতে শুরু করেন, তা হলে হাটে হাঁড়ি ভেঙে যাবে!
কিন্তু ঘটনাক্রম বলছে, তৃণমূলের যে চার বিধায়ক জেলে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে দু’জন মন্ত্রী। পার্থের ক্ষেত্রে গ্রেফতারির অব্যবহিত পরেই মন্ত্রিত্ব ও দলের মহাসচিব পদ কেড়ে নিয়েছিল দল। কিন্তু জ্যোতিপ্রিয় এখনও মন্ত্রী। জেলবন্দি অপর নেতা অনুব্রত মণ্ডলের পাশে দাঁড়িয়ে একাধিক বার বিবৃতি দিয়েছেন মমতা। অনুব্রত গ্রেফতার হয়ে ১৫ মাসের বেশি সময় জেলবন্দি থাকলেও সদ্যই বীরভূম জেলার সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়েছে তাঁকে। তা-ও তাঁর জায়গায় কাউকে একক ভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। একটি কোর কমিটি ওই জেলার সংগঠন পরিচালনা করবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে মমতাও বলেছিলেন, ‘‘কেষ্ট যত দিন না ফিরছে, তত দিন কোর কমিটি বীরভূমের সংগঠনের কাজ চালাবে।’’
ওই সভায় বহু দিন পরে ধৃত পার্থের নামও উচ্চারণ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ধৃত নেতাদের পাশে যে দল নেই, তা কবে বলা হয়েছে তৃণমূলের তরফে? যেমনটা বাবুল বলছেন। বরং নেতাজি ইন্ডোরের সভায় মমতা যখন চারের বদলা আটের কথা বলেছিলেন, তখন করতালি আর ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ফেটে পড়েছিলেন দলের নেতা-কর্মীরা। ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ হল, তৃণমূলের অনেক মুখপাত্রই বাবুলের মঙ্গলবারের মন্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তবে দলের অন্যতম মুখপাত্র তথা কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেউ অভিযুক্ত মানেই সে দোষী প্রমাণিত নয়। আর বিলকিস বানু ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্তেরা স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পান, তাঁদের মালা পরিয়ে বরণ করা হয়। এই অনুশীলন ভারতে শুরু করেছে বিজেপি। আমাদের যাঁরা ধৃত, তাঁদের মধ্যে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেই কেবল মন্ত্রিত্ব ও পদ থেকে সরানো হয়েছিল। বাকিদের ক্ষেত্রে হয়নি। আমার মনে হয় বাবুল পার্থের কথাই বলতে চেয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy