ফ্ল্যাটবাড়ি থেকে জমি, আসবাবপত্র থেকে প্রসাধন দ্রব্য— কেনার ক্ষেত্রে প্রতারণার অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। রাজ্য সরকারের তরফে এই ধরনের অভিযোগের সুরাহা করে থাকে ক্রেতা সুরক্ষা দফতর। এ বার সেই ক্রেতা সুরক্ষা দফতর আগামী প্রজন্মকে সচেতনতার পাঠ দিতে উদ্যোগী হয়েছে। আগামী দিনে জীবনের পথ চলার ক্ষেত্রে যাতে তারা কোনও ভাবেই প্রতারিত না হয়, সে কথা মাথায় রেখেই এই উদ্যোগ। রাজ্যের উপভোক্তা বিষয়ক দফতর ক্রেতা সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে একগুচ্ছ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। প্রথম ধাপে রাজ্যের ৬০০টি স্কুল বাছাই করা হয়েছে, যেখানে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবগত করানো হবে। গোটা মার্চ মাস জুড়ে এই কর্মসূচি চলবে এবং শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা ছাত্রছাত্রীদের নানা ভাবে সচেতন করবেন।
বর্তমান সময়ে ভেজাল খাদ্য, ভুয়ো পণ্য এবং অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে জিনিস কেনার মতো নানা সমস্যা ক্রেতাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই জেনেছে ক্রেতা সুরক্ষা দফতর। এই পরিস্থিতিতে স্কুলপড়ুয়াদের ক্রেতা সুরক্ষার মৌলিক বিষয়গুলোর সঙ্গে পরিচিত করানো প্রয়োজন বলে মনে করছে রাজ্য সরকার। তাই এই কর্মসূচির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের শেখানো হবে যে কোনও জিনিস কেনার পর বিল বা রসিদ সংগ্রহের গুরুত্ব, খাদ্যের গুণগত মান যাচাই করার পদ্ধতি এবং খাবারে ক্ষতিকর রং ব্যবহারের বিষয়টি চিনতে পারার উপায়। উপভোক্তা বিষয়ক দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাজ্যের ৬০০টি স্কুলে সরাসরি সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হবে। এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রাজ্যে আগে থেকেই প্রায় ১২০০টি কনজ়িউমার ক্লাব কাজ করছে, তবে এ বার আরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে এই বিষয়ে সচেতন করার ওই স্কুলগুলিকে যুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি স্কুলের জন্য ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা শিক্ষামূলক কর্মসূচি ও প্রচারের কাজে ব্যবহার করা হবে।
এই কর্মসূচির মূল চালিকাশক্তি হবেন স্কুলের শিক্ষক এবং বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়ে দেবেন, কেন পণ্য কেনার সময় উপযুক্ত যাচাই করা জরুরি। এ ছাড়া, খাদ্যের গুণমান নিয়ে কেমন পরীক্ষা করা যায়, কী ভাবে নকল বা ভেজাল পণ্য চিনতে হয়, সে সম্পর্কেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। উপভোক্তা বিষয়ক দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী দিনে এই কর্মসূচি শুধু ৬০০ স্কুলেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ভবিষ্যতে আরও বেশি স্কুলে এই ধরনের সচেতনতা প্রচার চালানো হবে, যাতে ছাত্রছাত্রীরা ছোটবেলা থেকেই ভাল এবং খারাপ পণ্যের পার্থক্য বুঝতে শেখে এবং নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়। ক্রেতা সুরক্ষা শুধুমাত্র বড়দের বিষয় নয়, বরং ছোটদের মধ্যেও এর সচেতনতা থাকা জরুরি। কারণ, আগামী দিনে তারাই ক্রেতা হয়ে উঠবে। রাজ্যের এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে সহায়ক হবে এবং ভবিষ্যতে ক্রেতাদের অধিকারের প্রতি আরও দায়িত্বশীল সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।