নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করলেও কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব এ নিয়ে মুখ খোলেননি। প্রশ্ন উঠেছিল, আর জি কর কাণ্ডের মতো এ ক্ষেত্রেও কি রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গেরা বিরোধী ঐক্যের মুখ চেয়ে নরম অবস্থান নেবেন?
এই জল্পনার মধ্যেই আজ রাহুল গান্ধী দিল্লিতে আদালতের রায়ে চাকরিহারা পাঁচ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার সঙ্গে দেখা করলেন। দশ জনপথে এই বৈঠকে চাকরিহারাদের থেকে লোকসভার বিরোধী দলনেতা জানতে চেয়েছেন, তিনি তাঁদের কী ভাবে এ বিষয়ে সাহায্য করতে পারেন? চাকরিহারা হাঞ্জেলা শেখ, সঙ্গীতা সাহা, মহম্মদ গোলাম গউস মণ্ডল, তন্ময় ঘোষ, হুমায়ুন ফিরোজ মণ্ডলরা রাহুল গান্ধীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়টি গোটা দেশের সামনে তুলে ধরতে সাহায্য করুন। প্রয়োজনে সংসদে বিষয়টি তুলুন। রাষ্ট্রপতিকে জানান। সম্ভব হলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিন। কিন্তু বিনা দোষে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েও যে তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির জেরে চাকরি খোয়াতে হয়েছে, তা তুলে ধরা প্রয়োজন।
সূত্রের খবর, এই বৈঠকের পরেই রাহুল পশ্চিমবঙ্গের এই নিয়োগ দুর্নীতি ও তা নিয়ে মামলার বিষয়ে খোঁজখবর শুরু করেছেন। নথিপত্রও চেয়ে পাঠিয়েছেন। ওয়াকিবহাল কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই রাহুল এ বিষয়ে পদক্ষেপ করতে পারেন। কারণ তিনি এমনিতেই বেকারত্ব, নিয়োগ পরীক্ষা বা প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে সরব। সেখানে প্রায় ২৫,৭৩৫ জনের চাকরি চলে গিয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় ১৯ হাজার প্রার্থীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ নেই— এই বিষয়টি রাহুলকে ভাবিয়ে তুলেছে। তাই পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বিষয়টি রাহুলকে জানানোর পরেই তিনি শনিবার নির্দোষ চাকরিহারাদের সঙ্গে দেখা করতে রাজি হয়ে যান। তার পরেই শুভঙ্কর পাঁচজন শিক্ষককে নিয়ে দশ জনপথে যান। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে, চাকরিহারাদের মানসিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে কংগ্রেস এখনই এই বৈঠকের ছবি তুলে তা প্রকাশ করার পথে হাঁটেনি।
রাহুলের সঙ্গে বৈঠকের পরে অঙ্কের শিক্ষক হাঞ্জেলা শেখ বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে যে অবিচার হল, নির্দোষ হয়েও সাত বছর চাকরি করে তা খোয়াতে হল, তা দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য ওঁকে অনুরোধ করেছি। উনি গোটা বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। আশ্বস্ত করেছেন, যত রকম ভাবে সম্ভব হয়, সাহায্য করবেন। আমাদের অবস্থাটা বুঝতে হবে। আদালতের রায় অনুযায়ী আমাদের চাকরি চলে গিয়েছে। অথচ চাকরি খারিজের কোনও সরকারি চিঠি পাইনি।’’ এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা নেতাজি ইনডোরের বৈঠকে তাঁরা যাবেন কি না, সে প্রসঙ্গে হাঞ্জেলা বলেন, ‘‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের ছাতার তলায় প্রায় ১২ হাজার শিক্ষক রয়েছেন। আমাদের কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’’
রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে খোদ রাহুল সক্রিয় হলে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস-তৃণমূল সমীকরণ কী দাঁড়াবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কংগ্রেস সূত্রের অবশ্য দাবি, রাহুল শুক্রবারই জেলা কংগ্রেস সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, ডানে-বামে না তাকিয়ে সামনের দিকে তাকাতে। প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর বলেন, ‘‘চাকরিহারা শিক্ষকরা বলেছেন, রাজ্য সরকার হোক বা সিবিআই, কেউই নির্দিষ্ট ভাবে দাগিদের চিহ্নিত করতে পারেনি। তার ফলে সকলের চাকরি গিয়েছে। নির্দোষদের এখন নতুন করে চাকরির পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিলেও ফের সফল হওয়া সহজ নয়। চাকরিহারারা সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আইনি পরামর্শ করছেন। যোগ্য প্রার্থীদের প্রতি চূড়ান্ত অবিচার হয়েছে। আমরা পাশে থাকব।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)