বামেদের সঙ্গে আলোচনার রাস্তা খোলা রেখেই আরও ৫১টি কেন্দ্রে তারা প্রার্থী দেবে বলে ঘোষণা করল কংগ্রেস। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি আসনে বামেরা প্রার্থী আগেই ঘোষণা করেছিল। এই পরিস্থিতিতে এক কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেসের তরফে যাতে এক জন প্রার্থীই ময়দানে থাকেন, তার জন্য আরও আলোচনা চালাবেন দু’পক্ষের নেতারা।
কংগ্রেস নতুন ৫১টি আসনের তালিকা ঘোষণার আগেই বুধবার বামফ্রন্টের বৈঠক শেষে বিমান বসু তাঁদের নির্ধারিত ১০টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। তবে যে সব আসনে একই সঙ্গে কংগ্রেস ও বামেদের দাবি থেকে যাচ্ছে, তা নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি তিনি। সব প্রশ্নেই বিমানবাবুর জবাব, ‘‘আলোচনা এখনও চলছে। আলোচনা শেষ হওয়ার আগে স্পষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’
প্রথম পর্বের ভোটের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ হতে চলেছে। প্রথম দুই পর্বের ভোটের আসনগুলি নিয়ে টানাপড়েন মিটে গেলেও সার্বিক ভাবে বাম-কংগ্রেসের বোঝাপড়ার ছবি এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট না হওয়ায় ঈষৎ হতাশা মাথাচাড়া দিচ্ছে দুই শিবিরের অন্দরেই। বামফ্রন্টের বৈঠকেই এ দিন যেমন শরিক নেতারা বিমানবাবুর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ঠিক কতগুলি আসন বামেরা আর কতগুলি কংগ্রেস লড়বে, সেই সংখ্যাটা অন্তত স্পষ্ট করে জানানো হোক। বিমানবাবু বৈঠকে জানান, এর উত্তর দিতে এখনও তিনি অপারগ! শরিক নেতৃত্বের একাংশ এমন প্রশ্নও তুলছেন, পাঁচ বছর আগে প্রবল বাম-বিরোধী হাওয়াতেও তৃণমূলের কাছ থেকে ৬৫টি আসন পেয়ে কংগ্রেস লড়তে রাজি হয়ে গিয়েছিল। পাঁচ বছর পরে রাজ্যে আরও সংগঠন খুইয়েও তারা বামেদের কাছে শ’খানেক আসন দাবি করছে এবং সিপিএম মেনেই চলেছে— এটাই বা কেন হচ্ছে? বিমানবাবুরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন, মানুষের চাহিদার কথা ভেবে তাঁরা সার্বিক গণতান্ত্রিক ঐক্যের জন্য সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাই আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রদেশ কংগ্রেস অবশ্য এ দিন নির্বাচনী কমিটির বৈঠকের পরে কেন্দ্রওয়াড়ি পছন্দের প্রার্থীর আরও একটি তালিকা তৈরি করে এআইসিসি-কে পাঠিয়েছে। কংগ্রেস মঙ্গলবার ৪৩টি কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিল। আরও ৫১টি কেন্দ্রের নাম এ দিন ঘোষিত হওয়ায় মোট ৯৪টি কেন্দ্রে কংগ্রেস লড়বে বলে জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
ভবানীপুরে ওমপ্রকাশ মিশ্রের পাশাপাশি প্রার্থী হিসাবে দীপা দাশমুন্সির নামও প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধীর। যদিও দীপা এ দিন দাবি করেন, ‘‘আমাকে এখনও কেউ এ ব্যাপারে প্রস্তাব দেয়নি।’’ কলকাতার বাকি আসনগুলির মধ্যে চৌরঙ্গিতে প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রকে দাঁড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে। ওই আসনের আর এক দাবিদার হিসেবে কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠকের নামও হাইকম্যান্ডের কাছে পাঠানো হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। আবার সন্তোষের জন্য জো়ড়াসাঁকো বা উত্তর হাওড়ার কথাও ভেবে রাখা হয়েছে! আব্দুল মান্নান, অমিতাভ চক্রবর্তী, কৃষ্ণা দেবনাথ, তাপস মজুমদারদের নামও সম্ভাব্য তালিকায় আছে।
অধীর এ দিন বিমানবাবুর মতোই মেনে নিয়েছেন, ‘‘সিপিএমের সঙ্গে আলোচনার দরজা এখনও বন্ধ হয়নি। দর কষাকষি চালাতে হচ্ছে বলে তালিকা প্রকাশে এত দেরি হচ্ছে।’’ তবে কংগ্রেস এ দিন জানিয়েছে, মালদহের হরিশচন্দ্রপুর, মালতীপুর, মুর্শিদাবাদের ডোমকল, হরিহরপাড়া, ভরতপুরে প্রার্থী দেবে তারা। এই আসনগুলির প্রত্যেকটিই গত বার বামেদের জেতা আসন। ফলে, ঠিক কতগুলি আসনে এখনও ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’য়ের আশঙ্কা থাকছে, তা স্পষ্ট নয়। এই প্রশ্নে অধীর বলেছেন, ‘‘পাঁচটি জায়গায় হতে পারে। তবে এখনও দু’পক্ষের আলোচনা চলছে। সংখ্যাটা বাড়তেও পারে, কমতেও পারে।’’ বামফ্রন্টের বৈঠকে অবশ্য কথা হয়েছে বোঝাপড়ার মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
তবে এর আগে অধীর যে ভাবে বাম শরিকদের নিয়ে মন্তব্য করেছেন, সে সম্পর্কে উষ্মা প্রকাশ করে এ দিন বিমানবাবু বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তৈরি হয়েছিল। শরিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করেই বামফ্রন্ট সব সিদ্ধান্ত নেয়। আসন নিয়ে আলোচনা চলাকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শরিকদের নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা অবাঞ্ছিত।’’ জবাবে অধীর আবার মন্তব্য করেছেন, ‘‘কে কী বলেছেন, জানি না! আমরা আমাদের কথা বলেছি। আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy