এখনও জলে ডুবে রয়েছে ঘরবাড়ি। দাসপুরের সামাটে। —নিজস্ব চিত্র।
বানভাসি দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য নদ-নদীর জলস্তর কমতে শুরু করলেও উল্টো চেহারা রূপনারায়ণের। তার জেরে বিশেষত হুগলির খানাকুলের দু’টি ব্লক এবং হাওড়ার আমতা ২ ব্লকের একাংশে প্লাবনের ছবি অপরিবর্তিত। খানাকুলে এক বালক-সহ ফের দু’জনের মৃত্যু হয়েছে জলে ডুবে। বন্যা ঠেকাতে রূপনারায়ণে ড্রেজিংয়ের দাবি ভুক্তভোগীদের ছিলই। এ বারের পরিস্থিতিতে তা আরও প্রবল হয়েছে। সেচ দফতরও মনে করছে, রূপনারায়ণের নাব্যতা না বাড়লে নিস্তার নেই। ড্রেজিংয়ের চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।
আরামবাগ মহকুমায় দামোদর ও দ্বারকেশ্বর নদ এবং মুণ্ডেশ্বরী নদীর জল খানাকুলের দক্ষিণে রূপনারায়ণে মেশে। এই জেলায় রূপনারায়ণের বিস্তার প্রায় ১৬ কিলোমিটার। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থেকে শিলাবতী নদীর জলও আসে রূপনারায়ণেই। ফলে ডিভিসি বেশি জল ছাড়লে রূপনারায়ণ ফুঁসে ওঠে। খানাকুলের দু’টি ব্লকের বন্যার জল নামতে ১০-১২ দিন গড়িয়ে যায়।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাঙ্কের টাকায় ২০২১ সালে মুণ্ডেশ্বরীর পলি তোলা হলেও রূপনারায়ণে ড্রেজিং হয়নি। ফলে, ওই প্রকল্পের সুফল পুরোপুরি মেলেনি বলে সেচ দফতরের আধিকারিকেরাও মানছেন। হুগলি জেলা সেচ দফতরের (বিশ্ব ব্যাঙ্ক প্রকল্প) এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার জিশু দত্ত বলেন, ‘‘যেহেতু সমস্ত নদ-নদীর জল রূপনারায়ণে পড়ে, স্বাভাবিক কারণেই তার জলধারণ ক্ষমতা ঠিক করতে না পারলে, সমস্যা থেকেই যাবে। তাই সমস্ত জল যাতে রূপনারায়ণ নিতে পারে, তার ব্যবস্থায় পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, পরিকল্পনা হয়েছে, একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত জল যাতে রূপনারায়ণের বাঁধ বা পাড় না ছাপায়, সেই মতো বিভিন্ন জায়গায় ভূমিতল মেপে ঠিক হবে কোথায় কতটা গভীরতা প্রয়োজন। সেই হিসাবে ড্রেজিং হবে।
সেচ দফতরের খবর, রূপনারায়ণে ঘাটালের দিকে বাঁধ থাকলেও উল্টো দিকে খানাকুলে নেই। ফলে, জল বাড়লে খানাকুলের দিকেই ঢোকে। তার উপরে ভৌগোলিক ভাবে খানাকুল অনেকটাই নিচু। এখানে জমির তল ৬ মিটার। অথচ, রূপনারায়ণের জলের উচ্চতা ৯.৫ মিটার বা তারও বেশি উঠে যায়। ফলে, প্লাবন অবধারিত।
সেচ দফতরের বক্তব্য, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লক দামোদরের পশ্চিমে হওয়াতেই বানভাসি হয়। কারণ, এই দিকটি ‘স্পিল’ এলাকা। এখানে সেচ দফতরের বাঁধ নেই। রয়েছে সাবেক জমিদারি বাঁধ। ডিভিসি আগে এক লক্ষ কিউসেক জল ছাড়লেই এখানে বন্যা হত। বিশ্ব ব্যাঙ্কের টাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে জমিদারি বাঁধের উচ্চতা সামান্য বাড়ানো হয়েছে। ফলে ডিভিসি দেড় লক্ষ কিউসেক জল ছাড়লেও বন্যা হবে না। কিন্তু ডিভিসি এ বার জল ছেড়েছে অনেক বেশি। উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজার বক্তব্য, ‘‘স্পিল এলাকা হওয়ায় দামোদরের পশ্চিমে বাঁধের উচ্চতা বাড়ানো না গেলে ড্রেজিং করে নাব্যতা বাড়ানো যেতে পারে।’’
বিশ্ব ব্যাঙ্কের টাকায় প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা সেচ দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, উদয়নারায়ণপুর ও আমতায় দামোদর এবং বাগনানে রূপনারায়ণের নাব্যতা বাড়ানোর জন্য একটি বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে বিশ্ব ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া হয়েছে। হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প মঞ্জুর হলে হাওড়ায় বন্যা পুরোপুরি ঠেকানো যাবে।
আপাতত বিভিন্ন জায়গা থেকে জল নামতে থাকলেও ত্রাণের দাবি প্রবল হচ্ছে। শনিবার খানাকুল ১ ব্লকের গোপালনগর গ্রামের বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ করেন। বিকেলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পুরশুড়ায় ও খানাকুলে ত্রাণ বিলি করেন। পানীয় জল-সহ ত্রাণসামগ্রীর অপ্রতুলতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শুভেন্দু জানান, বন্যায় মৃতদের পরিবার কেন্দ্রের তরফে আড়াই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে।
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া শহরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পাঁশকুড়া ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় জমা জলে দুর্ভোগ চলছে। এখানে জলমগ্ন কোলাঘাটের দেড়িয়াচক, ভোগপুর। সুবর্ণরেখার ব্যারাজ থেকে ছাড়া জলে প্লাবিত দিঘা সংলগ্ন রামনগরের পাঁচটি গ্রাম।পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, কেশপুর, ডেবরায় জল নামতে থাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ঘাটাল শহরের কুঠিবাজারে জল জমে আছে। জলে ডুবে দোকানের মালপত্রের দফারফা হওয়ায় পুজোর মুখে মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের। ডেবরার ভবানীপুরে ত্রাণ বিলি নিয়ে বিজেপি কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy