বালি ব্রিজে যানজট। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
সন্ধ্যা হলেই তীব্র যানজটে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে গোটা রাস্তা। অভিযোগ, দশ মিনিটের পথ পেরোতে সময় লাগছে দেড় ঘণ্টা। প্রায় রোজই এমন অবস্থা হলেও সব থেকে বেশি সমস্যা তৈরি হচ্ছে শনি-রবিবার।
গত রবিবারও বিকেল থেকে বালি ব্রিজ জুড়ে এমন পরিস্থিতি হওয়ায় নাজেহাল হলেন সাধারণ মানুষ। দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে বসে থাকা যাত্রীরা অনেকেই ভেবেছিলেন, সামনে দুর্ঘটনা ঘটেছে। অথবা পথ অবরোধ হয়েছে। যানজটের কারণ জানতে এগিয়ে গিয়ে তাঁরা দেখলেন, দু’টির কোনওটিই নয়। তবে তা হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে একশো ভাগ!
আর এ সব কিছুর কারণ একটাই। দক্ষিণেশ্বরের নবনির্মিত স্কাইওয়াক। সেখান থেকে নেমে আসা মানুষের ভিড়ে কার্যত আটকে পড়ছে দক্ষিণেশ্বরের চার রাস্তার মোড়। দর্শনার্থীদের ভিড় কাটিয়ে কোনও মতে এগোতে গিয়ে যানবাহনের গতি ‘কচ্ছপের’ মতো হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর তার জেরে গাড়ির লাইন ছাড়িয়ে যাচ্ছে দক্ষিণেশ্বর মোড় থেকে শুরু করে বালি ব্রিজ পেরিয়ে এক দিকে বালি খাল, অন্য দিকে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের বালি হল্ট পর্যন্ত। পরিস্থিতি সামলাতে নাভিশ্বাস উঠছে ডানলপ ও বালি ট্র্যাফিক পুলিশের।
সমস্যাটা ঠিক কোথায়? পুলিশ ও স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, দক্ষিণেশ্বর স্টেশনের গা ঘেঁষে পিডব্লিউডি রোডের উপরে স্কাইওয়াকের ১৪ নম্বর গেট। সেখানে দু’টি চলমান এবং সাধারণ সিঁড়ি রয়েছে। দক্ষিণেশ্বরে আসা দর্শনার্থীরা মূলত ওই গেটই ব্যবহার করছেন ওঠানামার জন্য। শনি-রবি সাধারণত ছুটির দিন হওয়ায় দক্ষিণেশ্বরে কয়েক হাজার দর্শনার্থীর ভিড় হয়। তার উপরে স্কাইওয়াক চালু হওয়ায় সেটি দেখতেও ভিড় বাড়ছে। সিঁড়ির সামনেই বাসস্টপ থাকায় তা থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ছেন লোকজন। রাস্তা থেকে আলোকিত স্কাইওয়াকের ছবি তোলার জন্যও ভিড় তৈরি হচ্ছে।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আর একটি সমস্যা। আদ্যাপীঠ যাওয়ার জন্য রামকৃষ্ণ পরমহংস রোডেও স্কাইওয়াকের একটি সিঁড়ি নেমেছে। অভিযোগ, ওই সিঁড়ির সামনে রাস্তা দখল করে বসছে হকার। ফলে সরু হয়ে গিয়েছে রাস্তা। তার মধ্যে দিয়েই গাড়ি, রিকশা, টোটো, অটো যেতে গিয়ে জট পাকছে। সব মিলিয়ে চার রাস্তার মোড় কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত।
পুলিশ সূত্রের খবর, রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও লোকজন শুনছেন না। মর্জি মতো রাস্তার এ দিক-ও দিক যাতায়াত করায় সমস্যা আরও বাড়ছে। লোকজনের ভিড় না সরিয়ে বালি ব্রিজ থেকে নেমে আসা গাড়িকে ডানলপের দিকে এগোনোর জন্য সিগন্যাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আবার রামকৃষ্ণ পরমহংস রোডের দিকে যানজট থাকায় বালি ব্রিজ থেকে নেমে আসা গাড়িও সে দিকে ঢুকতে না পেরে স্কাইওয়াকের নীচে আটকে যাচ্ছে। এই সব জটের ফলে মন্দির থেকে বেরোনো গাড়িও স্কাইওয়াকের নীচ দিয়ে এসে চার রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘হাত জোড় করে বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ যদি সচেতন না হন, তা হলে তো সমস্যা বাড়বে।’’
স্কাইওয়াক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন দক্ষিণেশ্বের মন্দির কর্তৃপক্ষ। তার অছি ও সম্পাদক কুশল চৌধুরী বলেন, ‘‘মানুষের সচেতনতার অভাবেই ভয়ঙ্কর যানজট হচ্ছে। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, ১৪ নম্বর গেটের সামনে রেলিং দিয়ে ঘিরে বাসস্টপে যাতায়াতের পথ করে দেওয়া হবে। এর ফলে সিঁড়ি দিয়ে ইচ্ছে মতো ওঠানামা করা যাবে না।’’ তিনি আরও জানান, রামকৃষ্ণ পরমহংস রোডের দিকে দখলদারি তুলে দেওয়া হলেও ফের তা বসেছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। ‘‘পরিস্থিতি সামলাতে বালি ব্রিজের দিকে যে গেটটি রয়েছে, তা অনুষ্ঠানের দিন ছাড়া খোলা হবে না’’— বলছেন কুশলবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy