প্রতীকী ছবি।
অতিবর্ষণে চাষ-আবাদ মার খেয়েছিল ঠিকই। তখন আনাজপাতির উৎপাদন মার খেয়েছিল। দামও ছিল চড়া। কিন্তু শীতকালের মধ্য পর্বেও আনাজের দাম কমছে না কেন, উপভোক্তা থেকে ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন সেটাই। ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁয়াজকলি, মটরশুঁটি— সবই মিলছে বাজারে। কিন্তু হাত বাড়ালেই ছেঁকা লাগার জোগাড়। আনাজের এই চড়া দাম নিয়ে বাজারে-আড্ডায় এখন জোর চর্চা চলছে।
এ বার পুজোর আগে থেকেই আনাজের দাম কমার লক্ষণ নেই। পুজোর আগে প্রবল বৃষ্টিতে চাষিদের খেত ডুবে আনাজের দাম বাড়তে শুরু করেছিল। সেই দাম পরে একটু কমলেও তা ফের ঊর্ধ্বমুখী।
আনাজের দাম যে কমছে না, তা স্বীকার করে নিয়েছেন শিয়ালদহ কোলে মার্কেট ভেন্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা আনাজের দাম নিয়ন্ত্রণে গঠিত রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে।। তিনি সোমবার বলেন, ‘‘করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে শহর ও শহরতলির বিভিন্ন বাজার বন্ধ। অনেক সময় চাষিরা আনাজ নিয়ে এসেও বাজার বন্ধ দেখে ফিরে যাচ্ছেন। বন্ধ বাজার থেকে অন্যত্র
আনাজ নিয়ে যাওয়ার পরিবহণ খরচ বাড়ছে তাঁদের। কোথা থেকে, কী ভাবে কমবে আনাজের দাম!’’ করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার আগে আনাজের দাম কমার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন কমলবাবু।
এ দিন কোলে মার্কেটে বিভিন্ন আনাজের পাইকারি দরের সঙ্গে শহরের অন্যান্য বাজারের খুচরো দরের তুলনা করলেই বোঝা গিয়েছে, দাম কতটা চড়া। শনিবার কোলে মার্কেটে বেগুনের পাইকারি দর ছিল ৩০-৩৫ টাকা কেজি। এ দিন শহরের বিভিন্ন খুচরো বাজারে সেই বেগুন বিকিয়েছে ৬০-৭০ টাকায়। ফোরাম অব ট্রেডার্স অর্গানাইজেশনের সভাপতি তথা আনাজের দাম সংক্রান্ত সরকারি টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, ‘‘শীতে বেগুনের দর ২০-৩০ টাকা থাকার কথা। অথচ শুধু বেগুন নয়, এখন সব আনাজের দামই স্বাভাবিকের তুলনায় গড়ে কুড়ি টাকা বেশি।’’ শীতে ফুলকপি, বাঁধাকপির দরও বেশ কম থাকার কথা। কিন্তু এ দিন শহরের উত্তর থেকে
দক্ষিণের বিভিন্ন বাজারে প্রতিটি ফুলকপির দাম ছিল গড়ে ৩০ টাকা। বাঁধাকপি ৪০ টাকা কেজি।
মাস কয়েক আগে টোম্যাটোর দাম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিল। সাধারণত শীতের মরসুমে টোম্যাটোর দাম বেশ কম থাকে। কিন্তু এখন তা ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিকোচ্ছে। নতুন আলু উঠলেও তার দামও কমেনি। নতুন আলু শহরের বিভিন্ন বাজারে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভাল মানের পেঁয়াজও ৫০ টাকার কমে মিলছে না। কড়াইশুঁটি, পেঁয়াজকলি, শিমের দামও বেশ চড়া। অন্যান্য বছর শীতের মরসুমে শিমের কেজি ৩০-৪০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করত। এ বার তা ৬০ টাকা কেজি। ক্যাপসিকামও অগ্নিমূল্য। মটরশুঁটির কেজি ৫০-৬০ টাকা। শীতেও আনাজের দাম নিয়ন্ত্রণে না-থাকায় রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রকে চিঠি দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তিনি বলেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গে ঘনঘন বৃষ্টিতে আনাজ চাষ ব্যাহত হয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় উত্তরবঙ্গে এ বার আনাজের উৎপাদন ভাল। কৃষি বিপণন মন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি,
উত্তরবঙ্গ থেকে আনাজ কলকাতার বাজারে আনলে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।’’
রবীন্দ্রনাথবাবুর মতে, লাগাতার বৃষ্টি, পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি করোনার প্রকোপের জেরে আনাজের দাম বেড়েছে। তিনি জানান, কলকাতা ও আশপাশের বাজারে আনাজ আসে মূলত দুই ২৪ পরগনা, হুগলি এবং নদিয়া থেকে। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে একাধিক বাজার বন্ধ। পেট্রল-ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় শহরের বাজারে আনাজ পৌঁছে দিতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘চাষি থেকে কয়েক জনের হাত ঘুরে আনাজ শহরে পৌঁছতে কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে দাম।’’
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, শুধু আনাজ নয়, ভয়ানক ভাবে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের দাম। তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীদের ধরলে তাঁরা বলছেন, ‘দাদা টাকা ঢালতে হচ্ছে।’ কোথায় টাকা ঢালতে হচ্ছে! তার জন্য সাধারণ মানুষকে ভুগতে হবে কেন?” চালের মূল্যবৃদ্ধির দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন সুজনবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy