বেলপাহাড়ির সভায় অভিযেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
মাওবাদী নেতা কিষেণজিকে কি হত্যা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার?
২০১১ সালের নভেম্বরে পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনির বুড়িশোলের জঙ্গলে কেন্দ্র এবং রাজ্যের যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় মাওবাদীদের অন্যতম এই শীর্ষনেতার। বিরোধী দলগুলি-সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এই সংঘর্ষটিকে ভুয়ো বলে দাবি করলেও সরকারি ভাবে অবশ্য জানানো হয়, যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষেই মৃত্যু হয়েছে কিষেণজির। ঘটনার প্রায় চার বছর পর অভিষেকের বিস্ফোরক মন্তব্যে ফের শুরু হয়েছে বিতর্ক। ২১ জুলাইয়ের আগে যা নিঃসন্দেহে অস্বস্তিতে রাখছে শাসক দলকে।
ঠিক কী বলেছেন অভিষেক?
বেলপাহাড়ির সার্কাস ময়দানে ২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশের প্রস্তুতিসভা ছিল শুক্রবার। সেখানেই যুব তৃণমূলের সভাপতি বলেন, “আজকে চার বছরের সরকার। এক জন মাত্র মারা গিয়েছে। তার নাম মাওবাদীদের নায়ক কিষেণজি। তাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার হত্যা করে প্রমাণ করে দিয়েছে যে আগামী দিনে মানুষ শেষ কথা বলবে।” সাংসদের এই মন্তব্যের পরই শুরু হয় বিতর্ক। মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো তথা শাসকদলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মানলে তাঁদেরই সরকারের সংঘর্ষের দাবি খারিজ হয়ে যায়। একই সঙ্গে সিলমোহর পড়ে বিরোধীদের ‘ভুয়ো সংঘর্ষ’র তত্ত্বেও।
প্রত্যাশিত ভাবেই অভিষেকের মন্তব্যের পর শাসকদলের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেছে বিরোধীরা। কিষেণজির মৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধানে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। সেই মামলার এখনও রায় ঘোষণা বাকি। বিচারাধীন একটি বিষয়ে সাংসদের মন্তব্য বিতর্ক আরও বাড়িয়েছে। কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর দাবি, “রাজ্য সরকার এবং মাওবাদীরা যে প্রথম থেকেই গট আপ গেম খেলছিল, তা আমরা আগেই বলেছিলাম। অভিষেক তা স্পষ্ট করলেন মাত্র।” বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য আবার ‘সত্য’কে সামনে আনার জন্য অভিষেককে ধন্যবাদ দিয়েছেন। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘মাওবাদী নেতা আজাদের মৃত্যুর পরে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছিলেন। তা হলে কিষেণজির মৃত্যু রহস্য নিয়ে কেন তদন্ত হবে না?’’
বিতর্কিত মন্তব্যের পর অবশ্য দলকে পাশেই পেয়েছেন অভিষেক। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, “অভিষেকের মন্তব্যে রাজনীতি খোঁজা উচিত নয়। উনি আসলে বলতে চেয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার জঙ্গলমহলকে সন্ত্রাসমুক্ত করেছে। ওঁর কথার অন্য অর্থ খোঁজা উচিত নয়।’’ পরে অভিষেকও বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কিষেণজির মৃত্যু হয়। এটাই বলতে চেয়েছি। বিরোধীরা এটা নিয়ে অকারণ রাজনীতি করছেন।’’
কিষেণজির মৃত্যুর পর মুখ্যমন্ত্রী নিজে জানিয়েছিলেন, ঘটনার কথা তাঁর জানাই ছিল না। ঘটনার দিন তিনেক পর তিনি বলেছিলেন, “আমরা এই সংঘর্ষের কথা জানতাম না। পুলিশও কিষেণজি আছে জেনে অপারেশন চালায়নি। আর তাই সংঘর্ষের প্রায় তিন ঘণ্টা পর কিষেণজির মৃত্যুর খবর জানায় পুলিশ।”
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী দাবি করলেও সংঘর্ষ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে। প্রথমত, যেখানে কিষেণজির মৃত্যু হয়, তার উল্টো দিকের মোটা গাছে কোনও গুলির দাগ ছিল না। দ্বিতীয়ত, কিষেণজি মারা গেলেও তার দেহরক্ষীদের কারও গুলি লাগেনি। এমনই একাধিক প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা। আর তার মধ্যেই শাসকদলের সাংসদের মন্তব্য বিতর্কের আগুনে ঘি দিল বলেই মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy