নির্যাতিতার বাড়ির সামনে পৌঁছে সুদেষ্ণা এবং রাজ্য কমিশনের বাকিদের ‘গেট আউট’ বলে বাইরে বেরিয়ে যেতে বলেন প্রিয়ঙ্ক। নিজস্ব চিত্র।
তিলজলার পর কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন এবং রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের মধ্যে নাটকীয় পরিস্থিতি মালদহের গাজোলেও। গাজোলে গিয়েও তরজায় জড়ালেন কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়ঙ্ক কানুনগো এবং রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায়। নির্যাতিতার বাড়ির বাইরেই বাগ্বিতণ্ডায় জড়ালেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় কমিশনের সমর্থনে আওয়াজ তুলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ধর্নায় বসেছেন ইংরেজবাজারের বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী।
কয়েক দিন আগেই মালদার গাজোলে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে স্কুলের মধ্যেই ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। সেই নিয়েই তদন্ত করতে শনিবার সকালে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের। কিন্তু তাঁরা পৌঁছনোর আগেই রাজ্যের আধিকারিকদের নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন সুদেষ্ণা। নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেন। এর প্রায় আধ ঘণ্টা পরে সদলবলে সেখানে পৌঁছন প্রিয়ঙ্কও।
অভিযোগ, নির্যাতিতার বাড়ির সামনে পৌঁছে সুদেষ্ণা এবং রাজ্য কমিশনের বাকিদের ‘গেট আউট’ বলে বাইরে বেরিয়ে যেতে বলেন প্রিয়ঙ্ক। পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, তিনি নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে চান। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। প্রিয়ঙ্ক গলা তুলে বলেন, ‘‘আপনারা ১০ দিন আগে কেন আসেননি? ১০ দিন ধরে আপনারা কোথায় ছিলেন।’’ তবে প্রিয়ঙ্কের দাবিকে আমল না দিয়েই নির্যাতিতার বাড়িতে ঢুকে পড়েন সুদেষ্ণা। প্রিয়ঙ্কের দাবি, রাজ্যের দল যত ক্ষণ না বাইরে বেরোচ্ছেন তত ক্ষণ তিনি বাড়ির ভিতরে ঢুকবেন না। অন্য দিকে সুদেষ্ণার দাবি, এই বিষয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রের কমিশনের এক সঙ্গে কাজ করার কথা থাকলেও বার বার বাধা সৃষ্টি করছেন কেন্দ্রীয় দলের সদস্যেরা।
এরই মধ্যে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিধায়ক শ্রীরূপা। তিনি কেন্দ্রীয় দলকে নির্যাতিতার বাড়িতে ঢুকতে দেওয়ার দাবি তুলে সেখানেই ধর্নায় বসে যান। প্রিয়ঙ্ক বলেন, ‘‘শুক্রবারের পর শনিবারও কেন্দ্রীয় কমিশনের কাজে বাধা দিচ্ছে রাজ্য। নির্যাতিতা এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। দরজায় আটকে রেখে আমাদের বাধা দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিব এর সঙ্গে যুক্ত। ওঁরা চান না নিরেপেক্ষ ভাবে তদন্ত হোক। এখান থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে শিশু কল্যাণ সমিতির অফিস রয়েছে। কিন্তু ওঁরা এসেছেন ১০ দিন পর। কিছু না কিছু লুকোনো হচ্ছে। বাংলার কথা দিল্লি পর্যন্ত যাতে না পৌঁছয় তাই বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। কাল তিলজলাতেও একই জিনিস হয়েছে। আমাদের ঢুকতে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব।’’
সুদেষ্ণা বলেন, ‘‘আমরা আমাদের কাজ ঠিকই করছি। তদন্তের রিপোর্ট পেয়ে সেই রিপোর্টের সত্যাসত্য সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে এসেছি। আমি ওঁদের বিরুদ্ধে কিছু বলছি না। কিন্তু যা করছেন সেটা ঠিক করছেন না ওঁরা। আমি কাউকে বাধা দিইনি। রাজ্য-কেন্দ্র একসঙ্গে কাজ করার কথা রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিশনের চেয়ারম্যান অভব্য আচরণ করছেন। আমাকে ‘গেট আউট’ বলে বেরিয়ে যেতে বলছেন। কালকেও একই জিনিস করেছেন উনি। এটা তো হতে পারে না।’’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘অভিযুক্ত তিন জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ওর যা অবস্থা, ওকে আর প্রশ্ন করা যাবে না। ও এমনিতেই মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। আর সেই কারণেই আমি বাইরে বসে রয়েছি। বার বার এ রকম এক জন নির্যাতিতাকে ঘটনার বিবরণ করতে বলা কি ঠিক?’’ পাশাপাশি, বিজেপি বিধায়কের ঘটনাস্থলে থাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সুদেষ্ণা।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার তিলজলায় মৃত শিশুর বাড়ির সামনে একই ভাবে তরজায় জড়িয়েছিলেন কেন্দ্র এবং রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের আধিকারিকেরা। সেখানেও সুদেষ্ণার বিরুদ্ধে কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনেন প্রিয়ঙ্ক। পাল্টা সুদেষ্ণার অভিযোগ ছিল, প্রিয়ঙ্ক অভব্য আচরণ করছেন এবং শিশুর পরিবারকে উসকানি দিচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy