কয়লার টাকা পাচারে নতুন যে-নির্মাণ সংস্থার নাম উঠছে, তার সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীর যোগ রয়েছে। ফাইল চিত্র।
যতই ধোয়া হোক, কয়লার কালো যায় না— এই প্রবাদকে ছাপিয়ে কয়লার কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়ায় পরপর যে-ভাবে নির্মাণ সংস্থা ও অন্যান্য সংস্থার নাম উঠে আসছে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা তাতে বিস্মিত। এই নিয়ে কলকাতার গরচার ‘গজরাজ’ নির্মাণ সংস্থার অন্যতম মালিক বিক্রম শিকারিয়াকে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রে বাংলার শাসক দলের এক প্রভাবশালী নেতার নাম উঠে এসেছে। এ বার কলকাতারই আরও একটি নির্মাণ সংস্থার নাম পেয়েছে ইডি, যাদের মাধ্যমে কয়লা পাচারের কাঁড়ি কাঁড়ি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই নির্মাণ সংস্থার এক মালিক নিউ আলিপুরের জ্যোতিষ রায় রোড এলাকার বাসিন্দা। তাঁকে পরশু, শুক্রবার দিল্লিতে তলব করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রের খবর।
তদন্তকারীদের দাবি, শুধু যে বিভিন্ন সংস্থার নাম উঠে আসছে তা-ই নয়, জানা যাচ্ছে কয়লা পাচারের কালো টাকা সাদা করার নতুন নতুন পদ্ধতির কথাও। এবং তার সঙ্গে একের পর এক রাজনৈতিক ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ যোগের সূত্রও মিলছে। ৮ ফেব্রুয়ারি গজরাজ নির্মাণ সংস্থার অফিস থেকে এক কোটি ৪০ লক্ষ টাকা উদ্ধারের পরে ইডি-র অভিযোগ ছিল, রাজ্যের এক মন্ত্রী কয়লা পাচারের লভ্যাংশ পেয়েছেন এবং তাঁর সেই কালো টাকা নির্মাণ ব্যবসায় বিনিয়োগ করে সাদা করেছেন শাসক দলের এক প্রভাবশালী নেতা এবং তাঁর পরিবারের এক সদস্য।
ইডি সূত্রের দাবি, কয়লার টাকা পাচারে নতুন যে-নির্মাণ সংস্থার নাম উঠছে, তার সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীর যোগ রয়েছে। কয়লা-দুর্নীতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের পালা সোমবার দেখা গিয়েছে বিধানসভায়। এর আগে ইডি যাঁকে দিল্লিতে তলব করেছে, সেই ধাবা-মালিক মনজিৎ সিংহ গ্রেওয়ালের সঙ্গে শুভেন্দুর ছবি সভায় তুলে ধরেন মমতা। আর মনজিতের সঙ্গে মমতা ও তাঁর ভাইয়ের ছবি নিয়ে কয়েক দিন ধরেই সমানে প্রচার চালাচ্ছে শুভেন্দুর দল বিজেপি। কয়লার কালো টাকা পাচারে নাম ওঠায় আজ, বুধবার মনজিৎকে দিল্লিতে তলব করেছে ইডি।
তদন্তকারীদের দাবি, কয়লা কাণ্ডে নিউ আলিপুরের যে নির্মাণ সংস্থার নাম উঠেছে, তার মালিক এবং তাঁর পরিবারের সব সদস্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খতিয়ান আর তাঁদের সব সংস্থার নথিপত্র-সহ তলব করা হয়েছে। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘যে-দিন থেকে ওই সংস্থা ও তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, সেই দিন থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত সমস্ত নথি এবং আয়করের রিটার্ন জমা দিতে বলে তলবি নোটিসে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ ইডি সূত্রের খবর দাবি, মাস চারেক আগে আয়কর দফতরও ওই নির্মাণ সংস্থার অফিস ও মালিকের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল।
তদন্তকারীদের দাবি, কয়লা পাচারের কোটি কোটি কালো টাকা ওই নির্মাণ সংস্থার মাধ্যমে সাদা করতে গত সাত বছরে এক ঝাঁক প্রভাবশালী যে সক্রিয় ছিলেন, তদন্তে তার গুরুত্বপূর্ণ নথি হাতে এসেছে। ইডি-র দাবি, ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা ওই নির্মাণ সংস্থায় বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং ওই সংস্থা মারফত বিভিন্ন সম্পত্তি কেনার প্রচুর তথ্য পৌঁছেছে তদন্তকারীদের হাতে।
ইডি সূত্রের আরও দাবি, সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীর নেতার এক ভাইয়ের নামও এই নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। ইডি-র অভিযোগ, ওই নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে কলকাতা পুলিশের এক কর্তাও জড়িত এবং মাস দুয়েক আগেই ওই পুলিশকর্তাকে কয়লা পাচারের মামলায় দিল্লিতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ইডি-র দাবি, প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে উঠে আসা এক প্রভাবশালী সাংসদের সংস্থার চিফ এগ্জ়িকিউটিভ অফিসারও (সিইও) ওই নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। তাঁকেও কয়লা পাচারের মামলায় একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই এবং ইডি।
এক ইডি-কর্তার দাবি, গজরাজ নির্মাণ সংস্থা থেকে বাজেয়াপ্ত করা টাকা নিয়ে তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে এক মন্ত্রীর হাত ঘুরে আসা ৩০ কোটি কালো টাকা সাদা করার তথ্য হাতে এসেছিল। এখন মনে হচ্ছে, সেই টাকার পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy