সাজছে সভাস্থল।—নিজস্ব চিত্র।
সল্টলেক থেকে এসেছে ডেকরেটর্সের মালপত্র। ৬০ হাজার স্কোয়ার ফুট এলাকা জুড়ে ছাওয়া হয়েছে ১৮০টি ত্রিপল। হাজার সাতেক বাঁশ, সাড়ে ছ’শো শালবল্লা ব্যবহার হচ্ছে। আশপাশের দশ কিলোমিটার দূরেও চোখে পড়বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি লাগানো বিশাল বিশাল তোরণ। সব মিলিয়ে আজ, শুক্রবার ন্যাজাটে মুখ্যমন্ত্রীর সভা ঘিরে হইহই রইরই ব্যাপার।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা জনসভায় রূপান্তরিত হয়। শুক্রবারও আশপাশের পাঁচটি বিধানসভা এলাকা থেকে কর্মী-সমর্থকদের ভিড়ে উপচে পড়বে সভা, এমনটাই ঘোষণা করছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু সব মিলিয়ে জনজীবন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও থাকছে দিনভর।
প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দমদম বিমানবন্দর থেকে মমতাকে নিয়ে হেলিকপ্টার রওনা দেওয়ার এক ঘণ্টা আগে থেকে ন্যাজাট ফেরিঘাট থেকে কিছুটা দূরে, মূল মঞ্চ থেকে ৬ কিলোমিটার দূরত্বে দুখিরামপুলের কাছে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এরপরে আর কোনও গাড়ি সভামঞ্চের দিকে যেতে দেওয়া হবে না। গাড়ি রাখার জন্য এলাকার তিনটি ইটভাটায় জায়গা করা হয়েছে।
সভামুখী ভিড়ের চাপে ন্যাজাট ফেরিঘাট হয়ে বসিরহাট, মিনাখাঁ বা কলকাতার দিকে চলাচল করতে বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন সাধারণ যাত্রীরা। যদিও পুলিশের দাবি, ন্যাজাট ফেরিঘাট থেকে দুখিরামপুল, এই ৬ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এসে রাস্তার পরবর্তী অংশ থেকে গাড়িঘোড়া মিলবে। পুলিশ সূত্রের খবর, বেলা ২টো থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ন্যাজাট থাকাকালীন সময়ে নিরাপত্তার কারণে এই রাস্তা বন্ধ করা হচ্ছে। বাকি সময় চলাচল স্বাভাবিকই থাকবে। স্থানীয় মানুষের অবশ্য আশঙ্কা, যেহেতু সকাল থেকেই চারদিক থেকে কর্মী-সমর্থকেরা আসবেন, সে জন্য ন্যাজাট ফেরিঘাট থেকে বাকি রাস্তা এমনিতেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে। ভুটভুটি বা অন্য যাত্রিবাহী গাড়ির সংখ্যাও কমবে বলাইবাহুল্য। তার জেরেও ভোগান্তি হতে পারে বহু নিত্যযাত্রীর।
সভা শুরু: বেলা ২টোয়।
শেষ হওয়ার কথা: সাড়ে ৩টে।
নির্ধারিত কর্মসূচি: প্রশাসনিক আলোচনা। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ১৩০টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। থাকছে সাইকেল বিলিও।
রাস্তায় পুলিশ থাকছে: আড়াইশোরও বেশি। থাকছেন কর্তাব্যক্তিরাও।
আরও নিরাপত্তায়: তিনশোরও বেশি সিভিক ভলান্টিয়ার। এক হাজারেরও বেশি তৃণমূলের স্বেচ্ছাসেবক।
জনসভায় আসার ভিড়টা মূলত আসবে কোন পথে?
জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানালেন, বেশ কয়েকটি ভেসেল, কয়েকশো ছোট গাড়ি, বাসে চেপে বসিরহাট মহকুমার নানা প্রান্ত থেকে আসবেন কর্মী-সমর্থকেরা। বেতনি, ডাঁসা, রায়মঙ্গল, ইছামতী, কালিন্দী, গৌড়েশ্বর, ছোট কলাগাছি, সাহেবখালি নদী পেরিয়ে আসবেন তাঁরা। সড়ক পথে স্বরূপনগর, বসিরহাট, টাকি, হাসনাবাদ, বাদুড়িয়া, হাড়োয়া, মিনাখাঁ দিয়ে আসবেন হাজার হাজার মানুষ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী, গোসাবা, ভাঙড় থেকেও প্রচুর লোকজন আনার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে দলের একটি সূত্র। মঞ্চের কাছাকাছিও পৌঁছতে পারবে না গোটা ভিড়টা। সে দিকে লক্ষ্য রেখে আশপাশে একাধিক জায়েন্ট স্ক্রিন বসানোর ব্যবস্থা হয়েছে। সেখানেই ‘লাইভ’ দেখা যাবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা।
প্রশাসনের পক্ষে জানানো হয়েছে, ন্যাজাটের যে মাঠে সভা হচ্ছে, সেই বিজয়ী সঙ্ঘের ফুটবল ময়দান থেকে আধ কিলোমিটার আগে বয়ারমারি স্টার ইউনিট ক্লাবের মাঠে হেলিপ্যাড তৈরি হয়েছে। মাঠের তিন দিকে জল থাকা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় শাল-বল্লার ব্যারিকেড করা হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে নেমে বাকি পথটা গাড়িতেই আসবেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর সভার ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্বটা যাঁর, সেই জেলা পরিষদের পূর্ত ও সড়ক দফতরের কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী জানালেন, সভাস্থলের কাছে একাধিক মেডিক্যাল ক্যাম্প করা হয়েছে। ভিড়ের চাপে নিত্যযাত্রীদের কিছুটা সময় হতে পারে। তবে পুলিশ-প্রশাসন সতর্ক থাকবে। ন্যাজাটে নদী পেরিয়ে যদি কোনও রোগীকে আনা হয়, তা হলে সেই ক্যাম্পে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো যাবে। জরুরি প্রয়োজনে ৬ কিলোমিটার রাস্তা পার করে দেওয়ার জন্য সতর্ক থাকবেন দলের স্বেচ্ছাসেবকেরাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy