অধিবেশনে ‘অসংসদীয় আচরণ’ করার জন্য বিধানসভা থেকে ৩০ দিনের জন্য নিলম্বিত (সাসপেন্ড) হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ চার বিজেপি বিধায়ক। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ওয়েলে নেমে কাগজ ছিঁড়ে তা ছুড়েছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে। সাসপেন্ড হওয়ার পর সোমবার শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভায় স্পিকারের দিকে কাগজের গোছা ছুড়ে দিয়েছিলেন। ভাঙচুর করেছিলেন বিধানসভা। আজকে তারা শিষ্টাচার শেখাবে?’’ মঙ্গলবার রাজ্যপালের ভাষণের উপর ধন্যবাদজ্ঞাপক বক্তৃতায় শুভেন্দুকে জবাব দিতে গিয়ে পুরনো সেই দু’টি ঘটনা নিয়েই মুখ খুললেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বলছে আমি কেন কাগজ ছুড়েছিলাম! মনে রাখবেন, ২০০৪ সালে আমি একা হয়ে গেছিলাম (লোকসভায়)। তখন আমি একা ছিলাম। আর আপনারা (বিজেপি) সংখ্যায় কত?’’ এর পরেই মমতা বোঝাতে চান, সেই সময়ে সংসদে তাঁর সঙ্গে কী আচরণ করা হত। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘তখন সাত দিন ধরে নোটিস দেওয়ার পরেও আমায় কথা বলতে দিত না। সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি মিলে করত। প্রশ্ন করতে দিত না, বক্তৃতা করতে দিত না।’’
আরও পড়ুন:
এর পরেই বিধানসভা ভাঙচুরের প্রসঙ্গ টানেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমায় যখন সিঙ্গুরে ঢুকতে দিচ্ছিল না, তখন আমি ফিরে বিধানসভায় এসেছিলাম। তৎকালীন বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘরে গিয়েছিলাম। ওদের (বামেদের) কাছে যাইনি। আমার সহকর্মীরা সে দিন ক্ষুব্ধ ছিলেন। কিন্তু আমি কোনও জিনিসে হাত দিইনি। এখনও প্রমাণ আছে।’’ উল্লেখ্য, বিধানসভা ভাঙচুরের যে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে রয়েছে, তাতে তৎকালীন তৃণমূল বিধায়কদের অনেককেই রণং দেহি মেজাজে দেখা গিয়েছিল। মমতাকে সে দিন রাগে ফেটে পড়ে চিৎকার করতে দেখা গেলেও এমন কোনও ‘ফুটেজ’ নেই, যেখানে দেখা যাচ্ছে মমতা বিধানসভার আসবাব ভাঙছেন। ঘটনাচক্রে, সেই সময়ে যাঁরা নেত্রীর অসম্মানে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন তৃণমূলে নেই। যেমন ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংহ। আবার অনেকে এমন ছিলেন, যাঁরা এখন সাংবিধানিক পদে আসীন। যেমন বর্তমান ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
কাগজ ছোড়ার অভিযোগে শুভেন্দু-সহ চার বিধায়ক সাসপেন্ড হতেই বিজেপির তরফে সমাজমাধ্যমে দু’টি ভিডিয়ো ক্লিপ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রথমটি সংসদে মমতার কাগজ ছোড়া এবং দ্বিতীয়টি বিধানসভা ভাঙচুরের। সোমবার বিজেপি সেই ঘটনার প্রসঙ্গ টানার পরে তৃণমূল পাল্টা বলেছিল, শুভেন্দু তো তখন তৃণমূলেই ছিলেন। তা হলে কেন ছেড়ে বেরিয়ে যাননি? বঙ্গের বাম-কংগ্রেসও শুভেন্দুকে ‘মমতার সুযোগ্য ছাত্র’ বলে কটাক্ষ করতে শুরু করে। মঙ্গলবার দু’টি ঘটনারই উল্লেখ করে শুভেন্দুকে জবাব দিলেন মমতা।