১৪ সেপ্টেম্বর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন লা লিগার মহাকর্তা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পেন সফর শুরু হবে ‘ফুটবল বৈঠক’ দিয়ে। ১৪ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার মাদ্রিদে লা লিগার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ার তেভাজ়ের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মমতা। সোমবার ওই বৈঠকের কথা টুইট করে জানানো হয়েছে লা লিগার তরফে।
এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লা লিগা যে ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছে, সেখানে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
রাজ্য প্রশাসন
সূত্রের খবর, বাংলার ফুটবলের উন্নতিকল্পে লা লিগার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি
‘মউ’ সাক্ষরিত হতে পারে। মমতার সঙ্গে ওই বৈঠকে থাকার কথা কলকাতার তিন
প্রধানের কর্তাদের। উপস্থিত থাকবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। বিশেষত ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকতেই সৌরভ লন্ডন থেকে মাদ্রিদে আসবেন। প্রসঙ্গত, লা
লিগার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ওই বৈঠকে থাকার কথা ছিল ভারতের ফুটবল
অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীরও। কিন্তু সুনীলের পক্ষে তাঁর সদ্যোজাত সন্তান এবং স্ত্রী
সোনমকে ছেড়ে বিদেশে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলেই এখনও পর্যন্ত খবর।
মমতার স্পেন সফরে যে কলকাতার তিন প্রধান ক্লাব মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডানের কর্তারা যাচ্ছেন, তা আগেই জানা গিয়েছিল। কিন্তু কেন তাঁরা লগ্নি আনার সফরে যাচ্ছেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। সোমবার সেই জল্পনাতেও ইতি পড়ল লা লিগা কর্তৃপক্ষের টুইটে। সৌরভ আদতে ‘ক্রিকেট বিগ্রহ’ হলেও তিনি ফুটবলেও সমান আগ্রহী। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক একটা সময়ে ফুটবল দল অ্যাটলেটিকো ডি কলকাতার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তাঁর উপস্থিতি লা লিগার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের ওজন আরও বাড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে। থাকবেন মোহনবাগানের ফুটবলকর্তা দেবাশিস দত্ত, ইস্টবেঙ্গলের রূপক সাহা এবং মহমেডানের ইশতিয়াক আহমেদ।
প্রসঙ্গত, এর আগে লা লিগা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য জড়িত থেকেছে বিজেপি-শাসিত রাজ্য ত্রিপুরার ফুটবলের সঙ্গে। ২০২১ সালে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় একটি ফুটবল ক্যাম্প করেছিল তারা। ঘটনাচক্রে, যে বছরে তৃতীয় বারের জন্য বাংলার ক্ষমতা দখল করেছিলেন মমতা। সেই লা লিগার সঙ্গেই বাংলার ফুটবলের উন্নতিকল্পে বিদেশসফর শুরুর প্রথম দিনেই আলোচনায় বসছেন তিনি।
লা লিগার একটা ‘কলকাতা সংযোগ’ অবশ্য অ্যাটলেটিকো ডি কলকাতার মাধ্যমে রয়ে গিয়েছে। ২০১৪ সালে শুরু হয়েছিল আইএসএল। প্রথমবারেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কলকাতার টিম অ্যাটলেটিকো ডি কলকাতা। যারা লা লিগার ক্লাব অ্যাটলেটিকো ডি মাদ্রিদের ফ্র্যাঞ্চাইজি। সেই অ্যাটলেটিকো যা কালক্রমে এটিকে মোহনবাগন এবং এখন মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস হয়েছে।
লা লিগা কী?
লা লিগা স্পেনের বিশ্বখ্যাত ফুটবল লিগ। এই টুর্নামেন্টের বয়স ৯৪ বছর। এই লিগে খেলে স্পেনের প্রথম সারির ২০টি ক্লাব। তাদের মধ্যে বিখ্যাততম তিন— রিয়েল মাদ্রিদ, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা। অধুনা চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা। ইউরোপের পেশাদার ফুটবল লিগগুলির মধ্যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পরেই লা লিগার স্থান। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পরেই ইউরোপে লা লিগার ভক্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বাংলা তথা কলকাতার পক্ষে যেটা আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য— বিদেশি লিগের মধ্যে লা লিগা বাঙালি ফুটবলপ্রেমীদের আড়াআড়ি বিভক্ত করে। বাঙালি বিভাজিত বার্সেলোনা এবং রিয়েল মাদ্রিদের প্রতি আলাদা আলাদা ভক্তিতে।
এখন আর লা লিগায় তিনি খেলেন না। তবে লা লিগার ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্কোরার এখনও পর্যন্ত তিনিই— লিওনেল মেসি। বার্সেলোনা ছাড়ার আগে পর্যন্ত ৪৭৪টি গোল করে গিয়েছেন লা লিগায়। তবে মেসির বার্সেলোনা লা লিগা জয়ের নিরিখে তাদের পয়লা নম্বর শত্রু রিয়েল মাদ্রিদের চেয়ে এখনও পর্যন্ত পিছিয়ে। লা লিগার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার খেতাব জিতেছে রিয়েল মাদ্রিদ। স্পেনের লা লিগায় বার্সেলোনা বনাম রিয়েল মাদ্রিদ ম্যাচই বিশ্ববিশ্রুত ‘এল ক্লাসিকো’। যা অনতি অতীতে লিওনেল মেসি-ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে মুখোমুখি লড়িয়ে দিয়েছিল।
মেসি-রোনাল্ডো ছাড়া কারা কারা খেলেছেন লা লিগায়?
খেলেছেন নেইমার, করিম বেঞ্জেমারা। অতীতে খেলেছেন ডেভিড বেকহ্যাম, ব্রাজিলের রোনাল্ডো, রোনাল্ডিনহো, জ়িনেদিন জ়িদান (জ়িদান পরে রিয়েল মাদ্রিদের কোচও হয়েছিলেন), রাউল, দানি আলভেজ়, ইকের ক্যাসিয়াস, করিম বেঞ্জেমা, লুইস সুয়ারেজ়, দিয়েগো ফোরলান, লুইস ফিগো, রবের্তো কার্লোস...। এবং দিয়োগো মারাদোনা। তিনিও খেলতেন বার্সেলোনায়। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত। দু’বছরে ৩৬টি ম্যাচে ২২টি গোল করেছিলেন। দ্বিতীয় বার ১৯৯২-’৯৩ সেভিয়ায়। ২৬টি ম্যাচ খেলে পাঁচটি গোল করেছিলেন।
তবে ঘটনা হল, লা লিগায় এখন আর তেমন ‘চরিত্র’ নেই। মেসি-রোনাল্ডো চলে গিয়েছেন। ছিলেন করিম বেঞ্জেমা। তিনিও চলে গিয়েছেন সৌদি আরবে। তবে লা লিগার ভক্তদের মন ভাল করার মতো খবরও আছে। রিয়েল মাদ্রিদে খেলতে আসতে চান এমবাপে। প্যারিস সঁ জঁ-র সঙ্গে তাঁর চুক্তি শেষের মুখে। যদি আইনি জটে আটকে না যান, তা হলে ‘চরিত্র’ পাবে লা লিগা।
তরিত্র থাকুক বা না-থাকুক, লা লিগার প্রায় ১০০ বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। বস্তুত, দিল্লিতে একটি দফতরও রয়েছে তাদের। কিন্তু বাঙালির মতো ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা সারা ভারতে বিরল। সেই উন্মাদনার মুকুটে লা লিগার পালক জুড়তে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এ বার তিনি আক্ষরিক অর্থেই বলতে পারেন, ‘‘খেলা হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy