(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফিরহাদ হাকিম (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের সমস্ত পুরসভার চেয়ারম্যান, পুরনিগমের মেয়র, বিভিন্ন উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং সমস্ত জেলাশাসককে আগামী সোমবার বৈঠকে ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকে জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পুরুলিয়ার ঝালদা এবং নদিয়ার তাহেরপুর পুরসভা বৈঠক থেকে বাদ। চেয়ারম্যান তো বটেই, সেখানকার কোনও আধিকারিককেও ডাকা হয়নি নবান্নের বৈঠকে। তা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। তবে রাজনীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম।
২০২২ সালের পুরসভা নির্বাচনে ঝালদা দখল করেছিল কংগ্রেস। আর তাহেরপুরে জিতেছিল সিপিএম। তার পরে ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর খুনের ঘটনা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিস্তর জল গড়ায়। আদালতের নির্দেশে সেই মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। তবে সেই ঘটনার পরে ঝালদা পুরসভা বিবিধ ভাঙা-গড়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। আপাতত ঝালদার পুরবোর্ড রাজ্যের শাসক তৃণমূলের দখলে। চেয়ারম্যান সুরেশ আগরওয়াল। তাহেরপুর সিপিএমেরই দখলে রয়েছে। ঝালদা পুরসভায় মোট ১২টি ওয়ার্ড রয়েছে। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটের ফল বলছে, ঝালদা শহরের ১১টি ওয়ার্ডেই এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। একটি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। সিপিএমের হাতে থাকা তাহেরপুর পুরসভাতেও বিজেপি এগিয়ে রয়েছে।
বৈঠকে ডাক না পাওয়া প্রসঙ্গে ঝালদার চেয়ারম্যান সুরেশ বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ থাকায় বেশ কয়েক দিন পুরসভায় যেতে পারিনি। তবে আমি যত দূর জানি, নবান্নে পুরপ্রধানদের নিয়ে বৈঠকের ডাক আমার কাছে আসেনি। কেন আমাকে ডাকা হয়নি তা-ও আমার জানা নেই।’’ সিপিএম পরিচালিত তাহেরপুর পুরসভার চেয়ারম্যান উত্তমানন্দ দাস বলেন, ‘‘পুরসভাগুলির উন্নয়নের জন্যই বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে জানি। সেখানে আমরা কেন ব্রাত্য বুঝতে পারছি না। আমার মনে হয়, রাজনৈতিক প্রতিশোধ তুলতেই বৈঠকে ডাকা হয়নি। এটা গোটা তাহেরপুরের মানুষের অপমান।’’
পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের ওই নির্দেশিকা নিয়ে আসরে নেমেছেন বিরোধীরা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ওই নির্দেশিকার প্রতিলিপি এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে প্রশাসনিক কাজে রাজনীতির অভিযোগ তুলেছেন। তবে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ বলেছেন, ‘‘যাঁদের ডাকা প্রয়োজন মনে করা হয়েছে, তাঁদেরই ডাকা হয়েছে। যাঁদের প্রয়োজন নেই, তাঁদের কেন ডাকা হবে? এর নেপথ্যে রাজনীতি দেখা ঠিক নয়।’’
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, ঝালদার চেয়ারম্যানকে না ডাকার নেপথ্যে অন্য কারণও থাকতে পারে। সেই সূত্রের ব্যাখ্যা, যে নির্দল কাউন্সিলরদের সমর্থনে তৃণমূলের বোর্ড হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে এক জনকে চেয়ারম্যান করার কথা ছিল। কিন্তু আস্থাভোটের সময়ে সুরেশ ‘কারসাজি’ করে নিজে চেয়ারম্যান হন। সে কারণেই তাঁর উপর মুখ্যমন্ত্রী ‘অসন্তুষ্ট’। তাই নবান্নের বৈঠকে সুরেশের ডাক পড়েনি।
লোকসভা ভোটে দেখা গিয়েছে, শহরাঞ্চলে তৃণমূলে ভিত ‘আলগা’ হয়েছে। রাজ্যের ১২১টি পুরসভার মধ্যে ৬৯টিতে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। দু’টিতে এগিয়ে কংগ্রেস। আসানসোল, শিলিগুড়ি, বিধাননগরের মতো কর্পোরেশন এলাকাতেও বিজেপি অনেকটা এগিয়ে। কলকাতা পুরসভার ৪৭টি ওয়ার্ডেও পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। অনেকের মতে, শহরাঞ্চলের সেই ‘ক্ষতে’ প্রলেপ দিতেই পুরসভার চেয়ারম্যান এবং পুরনিগমের মেয়রদের বৈঠকে ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেখানে ঝালদা ও তাহেরপুরের বাদ পড়া নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy