Advertisement
E-Paper

দিল্লিতে দোস্তি, বিশ্বকাপে কুস্তি! মোদী আর হাসিনার বৈঠকের দিনেই ক্রিকেট মহারণে ভারত-বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়কের নাম নাজমুল হোসেন শান্ত। রসিকতা করে অনেকে বলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ক্রিকেটীয় সম্পর্ক কিন্তু একেবারেই শান্ত নয়।

(বাঁ দিক থেকে) রোহিত শর্মা, নরেন্দ্র মোদী, শেখ হাসিনা এবং নাজমুল হোসেন শান্ত।

(বাঁ দিক থেকে) রোহিত শর্মা, নরেন্দ্র মোদী, শেখ হাসিনা এবং নাজমুল হোসেন শান্ত। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৪ ১৭:১৬
Share
Save

শনিবার দুপুর। নরেন্দ্র মোদী-শেখ হাসিনার একান্ত বৈঠক। শনিবার রাত। রোহিত শর্মা-নাজমুল হোসেন শান্ত যুযুধান। প্রথমটি ঘটল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। দ্বিতীয়টি অ্যান্টিগায়। প্রথমটি পড়শি দুই দেশের পারস্পরিক হিতাকাঙ্ক্ষায়। দ্বিতীয়টি পড়শি দুই দেশের পরস্পরকে হারানোর যুদ্ধে।

একেই বোধহয় বলে দিল্লিতে দোস্তি আর বিশ্বকাপে কুস্তি! সপ্তাহের শেষ দিনে ভারত-বাংলাদেশ জড়িয়ে পড়েছে এমনই মধুর এবং দ্বন্দ্বমূলক সম্পর্কে।

শুক্রবারই দু’দিনের সফরে ভারতে এসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। শনিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করলেন তিনি। বৈঠকের পরেই মোদী জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ এবং বাণিজ্যক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার দিকে নজর দিচ্ছে ভারত। আর ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা আশা করছেন, তুলনায় ‘দুর্বল’ বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিফাইনালের দিকে একটা পা বাড়িয়েই ফেলা যাবে। যদি না বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে দেয় বৃষ্টি!

মোদী তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর হাসিনাই প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি সরকারি সফরে ভারতে এলেন। যা থেকে স্পষ্ট যে, দিল্লি-ঢাকার কূটনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ়। যদিও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এখনও ‘কাঁটা’ তিস্তার জলবণ্টন। ঘটনাচক্রে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতেই ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ওই চুক্তি এখনও পর্যন্ত স্বাক্ষরিত হয়নি। যদিও মমতা-হাসিনা ব্যক্তিগত সম্পর্ক উত্তম। দুই বাংলার দুই নেত্রীর মধ্যে শাড়ি, মাছ, মিষ্টি বা আম বিনিময় চলে। তাই তিস্তার জল ঘোলা হলেও ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে মজবুত। ঐতিহাসিক কারণে বাংলাদেশের বর্তমান শাসকদল আওয়ামী লিগ এবং তাদের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক বরাবর ভাল।

যে ভাবে ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক ভাল হয়েছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে খারাপ হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেটীয় সম্পর্ক। কূটনীতির সৌভ্রাতৃত্বের ছবিটা ফিকে হয়ে গিয়েছে ক্রিকেটের রণাঙ্গনে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়কের নাম নাজমুল হোসেন শান্ত। রসিকতা করে অনেকে বলে থাকেন, ভারত-বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় সম্পর্কটা একেবারেই শান্ত নয়। সাম্প্রতিক অতীতে বারংবার দেখা গিয়েছে, খেলায় জয়-পরাজয়ের পর এক দেশের সমর্থকেরা অন্য দেশের সমর্থকদের উদ্দেশ কটুকাটব্য করেছেন। সমাজমাধ্যমে সেই কথার লড়াইয়ে শালীনতার সীমাও রক্ষিত হয়নি। কখনও পড়শি দেশের নাম বিকৃত এবং ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে উচ্চারণ (যেমন ‘ইন্ডিয়া চুর’, ‘আম্পায়ার চুর’ ইত্যাদি), কখনও পুরনো ইতিহাস টেনে কটাক্ষও আকছার দেখা গিয়েছে।

অশান্তির সূত্রপাত ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে। বিরাট কোহলির সঙ্গে বাংলাদেশের বোলার রুবেল হোসেনের মাঠের মধ্যেই উত্তপ্ত কথা কাটাকাটি হয়েছিল। সেই লড়াইয়ের রেশ ছিল চার বছর পরে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপেও। কোয়ার্টার ফাইনালে রোহিত শর্মার বুকের উচ্চতায় উঠে আসা একটি ডেলিভারি ‘নো বল’ বলে ঘোষণা করেন আম্পায়ার। সেই ঘটনায় আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ড। ২০১৬ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালের আগে সমাজমাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে দেন পদ্মাপাড়ের অত্যুৎসাহী ক্রিকেটভক্তেরা। ছবিটিতে দেখা যায়, বাংলাদেশের ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ মহেন্দ্র সিংহ ধোনির কাটা মুন্ডু ধরে রয়েছেন। শোরগোল পড়েছিল দু’দেশে।

ভারতীয় ক্রিকেটভক্তদের একাংশ অবশ্য মনে করিয়ে দেন যে, ২০০০ সালে বাংলাদেশকে প্রথম বার টেস্ট ক্রিকেট খেলার সুযোগ করে দিয়েছিলেন জগমোহন ডালমিয়া। তখন অবশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেটে একটি ‘উদীয়মান শক্তি’। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ভারতকে হারিয়ে দেয় তারা (যাকে ভারতের সমর্থকেরা ‘অঘটন’ বলেই ব্যাখ্যা করেন)। বাংলাদেশের দৈনিকে শিরোনাম হয় ‘বাঘের গর্জন শুনেছে বিশ্ব’ (বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সে দেশের ক্রিকেটপাগল জনতা ‘টাইগার’ বা ‘টাইগার্স’ বলেই সম্বোধন করে)। তার পর থেকে ২২ গজে দুই দেশ মুখোমুখি হলেই উত্তেজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেই উত্তেজনায় ক্রিকেট সংক্রান্ত বিষয় যতটা না প্রভাব ফেলেছে, তার দ্বিগুণ ফেলেছে অ-ক্রিকেটীয় বিষয়। এই সব কারণেই সম্ভবত ভারতে টেস্ট খেলতে আসার জন্য বাংলাদেশকে ১৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।

তবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বিসিসিআই সভাপতি থাকাকালীন ইডেনে প্রথম নৈশালোকে টেস্ট ম্যাচ খেলতে আসতে বাংলাদেশকে রাজি করিয়েছিলেন। সৌরভের আমন্ত্রণে সেই ম্যাচের উদ্বোধনে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। তবে তা ‘ব্যতিক্রম’। সেটাও ‘দাদা’র কারণেই। যাঁর আবেদন দুই বাংলাতেই সমান।

দিল্লিতে শনিবার মোদী-হাসিনার বন্ধুত্বের বৈঠক ক্রিকেটের লড়াইয়ে পূর্ণচ্ছেদ টেনে দেবে, এমনটা নয়। তার উপর সুপার এইটের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে সহজেই হারিয়ে অনেকটাই স্বস্তিতে রোহিতরা। পক্ষান্তরে, অস্ট্রেলিয়ার কাছে দু’পয়েন্ট খুইয়ে খানিক চাপে টাইগারেরা।

বৃষ্টি না হলে ‘খেলা হবে’। দেখার, মোদী বা হাসিনা, হার যাঁরই হোক, ‘মহীয়ান’ হয়ে কি জয়ী প্রতিপক্ষকে অভিনন্দন জানাবেন তিনি?

ICC T20 World Cup Narendra Modi Sheikh Haisna

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।