আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি মোহন শর্মা।
দিন কয়েক আগে কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের ঘটনা৷ তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে মাইক হাতে আচমকাই দলের আলিপুরদুয়ারের জেলা সভাপতি মোহন শর্মার খোঁজ করলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সঙ্গে সঙ্গে ইন্ডোর স্টেডিয়ামে হাজির তৃণমূলের অনেক নেতারই বুক কেঁপে উঠেছিল৷ অনেকেই ভেবেছিলেন, কুমারগ্রাম-সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় দলের হার নিয়ে হয়তো কড়া ধমক দেবেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কিন্তু সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে কুমারগ্রামের হারানো জমি ফেরাতে মোহনকেই দায়িত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী৷
ওই বৈঠকের পরে আজ, বুধবার ফের একটি বৈঠকে বসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ যদিও উত্তরকন্যায় আয়োজিত এই বৈঠকটি দলীয় বৈঠক নয়৷ আলিপুরদুয়ার জেলার প্রশাসনিক বৈঠক৷ কিন্তু বৈঠকে জেলার শাসকদলের প্রায় সব জনপ্রতিনিধিই উপস্থিত থাকবেন৷ ফলে এই বৈঠক থেকে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী কী বার্তা দেন, সে দিকে তাকিয়ে শাসকদল, এমনকি প্রশাসনের অনেক কর্তাও৷
সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে আলিপুরদুয়ারে সার্বিক জয় পেয়েছে তৃণমূল৷ কিন্তু জেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত এককভাবে দখল করেছে বিজেপি৷ বিধায়ক জেমস কুজুর ও সাংসদ দশরথ তিরকের নিজের এলাকা হওয়া সত্ত্বেও কুমারগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতি ও সেখানে থাকা জেলা পরিষদের একটি আসন হারাতে হয়েছে শাসকদলকে৷ এই ফলে দলীয় নেতৃত্বের উপর যে তিনি খুশি নন, ভোটের পরে মুখ্যমন্ত্রীর করা কয়েকটি পদক্ষেপেই তা স্পষ্ট। প্রথমেই মন্ত্রিত্ব খোয়াতে হয়েছে কুজুরকে৷ মেয়াদ শেষ হতেই জয়গাঁ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বিধায়ক উলসন চম্প্রামারিকে৷ কোনও জনপ্রতিনিধিকে সেই পদে না বসিয়ে তাৎপর্যপূর্ণভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলাশাসককে৷
শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, পঞ্চায়েত ভোটের পরে বদলি করা হয়েছে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকেও। তাই নিয়েও নানা স্তরে জল্পনা শুরু হয়৷ সর্বোপরি, আলিপুরদুয়ারের প্রশাসনিক বৈঠক প্রথমে বীরপাড়ায় হওয়ার কথা থাকলেও, কেন মুখ্যমন্ত্রী জেলার বাইরে উত্তরকন্যায় বৈঠকটি করবেন বলে ঠিক করলেন, তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন রয়েছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানানো হয়, আলিপুরদুয়ারে বন্যার জন্য জেলা প্রশাসন ব্যতিব্যস্ত। তাই মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকের স্থানবদল করেছেন।
মোহন শর্মা বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে, পঞ্চায়েত ভোটে কুমারগ্রাম-সহ কিছু জায়গায় আমাদের ফল খারাপ হয়েছে৷ কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে, গতবার জেলা পরিষদে যেখানে আমরা একটি আসন জিতেছিলাম, সেখানে এ বার ১৭টি আসনে জিতেছি। তা ছাড়া মাদারিহাটকে অনেকেই বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বললেও, ওখানে আমাদের জয় হয়েছে৷ লোকসভা ভোটে কুমারগ্রাম সহ জেলার সর্বত্রই আমাদের জয় হবে৷’’
রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই মোহনবাবুর এই দাবি পুরোপুরি মানতে নারাজ। গত বিধানসভা ভোটে মাদারিহাটে জয় দিয়ে খাতা খুলেছিল বিজেপি৷ এ বার সেখানে খারাপ ফল করলেও, জেলার অনেক জায়গাতেই তারা তৃণমূল নেতাদের কপালে চিন্তা ভাঁজ ফেলে দিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েত নির্বাচনের ‘সাফল্য’কে ধরে রেখে লোকাসভা ভোটে চা বলয়ে ঘর গোছাতেও শুরু করে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য নেতারা৷ এই পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনের আগে আজকের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আলিপুরদুয়ার জেলা নিয়ে কী বার্তা দেন, সে দিকেই তাকিয়ে প্রশাসনের কর্তা থেকে শুরু করে শাসকদলের নেতারাও৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy