হাসনাবাদে একটি বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর আহার। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
হাতে স্টিলের থালায় ঝাল-ঝাল তরকারি দিয়ে ভাত মেখে অল্প অল্প করে মুখে দিচ্ছেন। আর পাশে বসা মহিলার কাছে শুনছেন তাঁর না-পাওয়ার কথা। বললেন, ‘‘ভাতটা শক্ত কেন...।’’ শুনলেন, ‘‘এ (চাল) তো আপনিই দিয়েছেন।’’ বললেন, ‘‘শক্ত করেছ কেন?’’ শুনলেন, ‘‘গ্যাস নেই তো আমাদের। এক বারের রান্না দু’তিন বার খাই। তাই একটু শক্ত রাখি।’’
তিন দিনের এই জেলা সফরে পঞ্চায়েত ভোটের আগে নিজের গতি ও প্রকৃতি এ ভাবেই স্পষ্ট করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার যিনি কর্তব্যে ‘গাফিলতি’র কারণে সরকারি অফিসারদের প্রায় তুলোধোনা করেছেন, বুধবার সেই তিনিই মাথা নামিয়ে মানুষের অপ্রাপ্তি শুনেছেন। আর সুযোগমতো মাইক হাতে দাঁড়িয়ে প্রশাসনিক কর্তাদেরই নির্দেশ দিয়েছেন, সময়সীমা বেঁধে পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে। বলেছেন, রাস্তার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে কাজ শেষ করতে হবে কী ভাবে।
এ দিন দুপুরে টাকি থেকে লঞ্চে (চালকের স্টিয়ারিং হুইল ধরে চালানও খানিকটা) মমতা পৌঁছন বৈদ্যপাড়া খাঁপুকুর ফেরিঘাটে। ঘাটে নেমে স্থানীয়দের ভিড় সরু রাস্তায় সরিয়ে প্রাথমিক স্কুলের গেট ঠেলে ভিতরে যান মুখ্যমন্ত্রী। সটান ঢুকে পড়েন চতুর্থ শ্রেণিতে। ক্লাসঘরে গিয়ে বাচ্চাদের মধ্যে সঙ্গে আনা পোশাক বিলি করে গল্প শুরু করে দেন তিনি। এক-এক করে বাচ্চাদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘তুমি কী হতে চাও?’’ প্রাথমিক জড়তা কেটে গেলে উল্টো দিক থেকে জবাব এল, ডাক্তার। শিক্ষক। সেনা।
স্কুলের কাজ সেরে বেরিয়ে এসে এগোলেন খাঁপুকুর গ্রামের ভিতরে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলার পূর্বপরিকল্পনা ছিল। সে সব খবর আগে জানা থাকায় প্রগতি সঙ্ঘের মাঠে উলু-শঙ্খে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থাও ছিল। কম্বল আর শাড়ি বিলির সময়েই পানীয় জলের সমস্যার কথা শুনেছিলেন স্থানীয়দের মুখে। মাইক হাতে সেখানে দাঁড়িয়েই উপস্থিত অফিসারদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সাত দিনের মধ্যে জলের বন্দোবস্ত করতে হবে।’’ আর রাস্তা না-থাকার কথা শুনে সংশ্লিষ্ট দফতরকে কী ভাবে এবং কত সময়ে তা করতে হবে সেই নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এখানেও ফের জানিয়েছেন, সুন্দরবনের উন্নয়নে ৬০০ কোটি টাকার মাস্টার প্ল্যান নিয়ে দিল্লিতে দরবার করতে যাচ্ছেন তিনি।
ঘণ্টাখানেক আগে যেমন জানিয়েছিলেন, ঠিক সেই মতো মুখ্যমন্ত্রী দাঁড়ালেন নমিতা মণ্ডলদের বাড়ির উঠোনে। সেখানে তখন মহিলাদের দুপুরের আড্ডায় চাটাই বোনা আর গল্পগুজব চলছিল। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে প্রাথমিক বিস্ময় কাটিয়ে বাড়ির লোকেরা এগিয়ে দেন প্লাস্টিকের চেয়ার। মুখ্যমন্ত্রী সেখানে বসে খেজুর পাতার চাটাই বোনেন। তারপর দুপুরের নাওয়া-খাওয়ার কথা উঠতেই প্রশ্ন, ‘‘আপনার খাওয়া হয়েছে দিদি?’’ মমতা বলেন, ‘‘নাহ্।’’ নমিতার আবদার, ‘‘আমাদেরও হয়নি। দুটো খাবেন দিদি?’’
হিঙ্গলগঞ্জে চব্বিশ ঘণ্টা আগের ‘গুমোট’ কাটিয়ে মমতা তখন পুরনো চেহারায়। থালায় ভাত এল। ওলের তরকারি আর খালে ধরা ট্যাংরা মাছের ঝোল এল। লঙ্কা-বাটা দিয়ে রান্নার কথাও উঠল মহিলা মহলে। পড়ন্ত বিকেলে মণ্ডল বাড়ির উঠোনে অতিথিকে ঘিরে পুলিশ, অফিসার আর পড়শিদের থিকথিকে ভিড়। কথায় কথায় অভাব-অভিযোগের কথাও এল বিস্তর। মমতা শুনলেন, নমিতা বার কয়েক দুয়ারে সরকারে দরখাস্ত করলেও কাজ হয়নি। আরও শুনলেন, কে কে ভাতা-র টাকা পাননি। পাশে দাঁড়ানো উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলা শাসককে প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর ঘিরে ধরা গ্রামের লোকেদের দিলেন পরামর্শ, কী করলে সে সব পাওয়া যাবে।
সেখান থেকে মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছিলেন টাকি কলেজে। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলাপ সেরে ফিরে যান টাকির অস্থায়ী ডেরায়। দিনভর রাজনীতির কথা মুখে আনেননি ঠিকই তবে প্রতিপদে ‘নিজের রাজনীতির’ অনুশীলনই করেছেন তৃণমূলনেত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy