পাঁশকুড়ায় বনাভাসি এলাকা পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: মুখ্যমন্ত্রীর ফেসবুক থেকে নেওয়া।
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় বানভাসি এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে আবারও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তিনি পাঁশকুড়ার প্লাবিত এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন। ডিভিসি যে ভাবে জল ছাড়ছে সেই প্রসঙ্গে উষ্মা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মানুষকে এ ভাবে ডোবালে ডিভিসির সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক রাখা হবে না।’’ শুধু তা-ই নয়, এই বিষয় নিয়ে বড় আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্লাবিত রাস্তায় নামেন তিনি। সেখানকার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। তার পরই জেলা এবং পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রীর গলায় আবার শোনা যায় ‘ম্যান মেড বন্যা’র কথা। তিনি বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ড থেকে জল ছাড়া হয়েছে। কেন কেন্দ্রীয় সরকার, ডিভিসি ড্রেজিং করে না? ডিভিসির জলে কেন বাংলা ডুববে, আমরা জানতে চাই। কৈফিয়ত চাই।’’
বাংলায় জল ছেড়ে দিয়ে ঝাড়খণ্ডকে নিরাপদ রাখা হয় বলেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘কাল রাতে আরও জল ছেড়েছে শুনেছি।’’ বার বার অন্য রাজ্যের ছাড়া জলে কেন বাংলা প্লাবিত হবে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মমতা। এর পরই তিনি হুঁশিয়ারি দেন, আগামী দিনে ডিভিসির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখবে কি না রাজ্য সরকার, সেটাও ভেবে দেখা হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের যে সব জেলা প্লাবিত হয়েছে, তা বৃষ্টির জলের কারণে নয়। ডিভিসির ছাড়া জলেই প্লাবিত হয়েছে। আর এই ঘটনা পুরোপুরি পরিকল্পিত বলেই মনে করেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আজ যে জায়গায় জল ঢুকেছে সেগুলি সকালেও শুকনো ছিল। এত বার বলার পরেও জল ছাড়া বন্ধ করছে না ডিভিসি।” তাঁর অভিযোগ, পাঁশকুড়ার পাশাপাশি হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা প্রভৃতি এলাকার বহু জায়গা আজ নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক ও পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে জানান, “যত দ্রুত সম্ভব দুর্গত এলাকার মানুষদের উদ্ধার করে ত্রাণশিবিরে নিয়ে আসুন। যত দিন পর্যন্ত না তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারবেন তত দিন রাজ্য সরকার তাঁদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করবে।”
ত্রাণকাজে কোনও রকম গাফিলতি সহ্য করবেন না বলেও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন তিনি। ত্রাণ নিয়ে নিজের কড়া অবস্থানও স্পষ্ট করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কোনও জায়গায় যেন ত্রাণ নিয়ে একটাও অভিযোগ না আসে। আমি সরাসরি জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেব।’’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “যথেষ্ট ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ দেওয়া হয়েছে। তাই কোনও অভিযোগ যেন নবান্ন পর্যন্ত না যায় তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এমন অভিযোগ উঠলে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের থেকে তার উত্তর জানতে চাওয়া হবে।” সেই সঙ্গে উদ্ধারকাজের জন্য প্রয়োজনীয় নৌকো ও অন্যান্য সামগ্রীরও দ্রুত ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে উদাসীনতার প্রশ্ন তুলে এরই পরই মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, বিষয়টি নিয়ে বড় আন্দোলনে যেতে হবে।
দু’দিন ধরে রাজ্যের বানভাসি এলাকা পরিদর্শন করছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার তিনি হাওড়া এবং হুগলির বানভাসি এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন। ওই দিনও মুখ্যমন্ত্রীকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শোনা গিয়েছে। ‘ম্যান মেড বন্যা’র প্রসঙ্গও উঠে এসেছে তাঁর মন্তব্যে। বৃহস্পতিবারও সেই একই অভিযোগ শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে।
নিম্নচাপের জেরে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু বিরাম নেই ডিভিসির জল ছাড়ার। বৃহস্পতিবারও দামোদর উপত্যকার বিভিন্ন বাঁধ ও জলাধার থেকে জল ছাড়া শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ডিভিসির বিবৃতি জানাচ্ছে, মাইথন এবং পাঞ্চেত থেকে মোট ৮০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। ডিভিসি নতুন করে জল ছাড়ার ফলে দক্ষিণবঙ্গের হাওড়া ও হুগলি জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডিভিসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আবহাওয়ার পরিস্থিতির কারণে জলস্তর ক্রমাগত বাড়তে থাকায় মাইথন এবং পাঞ্চেত বাঁধের উপর চাপ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে তাই মাইথন থেকে ১০ হাজার এবং পাঞ্চেত থেকে ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy