Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
State News

‘শেষ মুহূর্তেও পিস্তল চালানোর চেষ্টা করেছিল রামুয়া’, স্ত্রীর বয়ান ঘিরে বাড়ছে সন্দেহ

নয়ের দশক থেকে অপরাধ জগতে উত্থান শুরু শিবপুরের বাসিন্দা রাম দেবর ওরফে মাদ্রাসি রামুয়ার। যদিও অপরাধ জগতে তাকে সবাই আন্না বলেই ডাকত। নয়ের দশকে গোটা হাওড়া জুড়ে একাধিক কুখ্যাত অপরাধীর রাজত্ব।

রবিবার রাতে রামুয়ার ফ্ল্যাটে ঢুকে দুষ্কৃতীরা তাকে গুলি করে চম্পট দেয়। —নিজস্ব চিত্র।

রবিবার রাতে রামুয়ার ফ্ল্যাটে ঢুকে দুষ্কৃতীরা তাকে গুলি করে চম্পট দেয়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদাদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ১৭:০৬
Share: Save:

প্রাণভয়টা বেশ কিছু দিন ধরেই তাড়া করে বেড়াচ্ছিল হাওড়ার আন্নাকে। আর তাই হাওড়ার অপরাধ জগত থেকে দূরে সরে এসে সোদপুরের ভাড়া ফ্ল্যাটে গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও কয়েকদিন আগেই কিনে এনেছিল একটি পিস্তল। সোমবার পুলিশের কাছে এমনটাই দাবি করেছেন নিহত ডনের স্ত্রী কাজল।

পুলিশ সূত্রে খবর, কাজল পুলিশকে জানিয়েছেন, রবিবার রাতে মুখ ঢাকা দুষ্কৃতীরা ফ্ল্যাটের মধ্যে ঢুকে পিস্তল ঠেকায় কাজল এবং তাঁর পাঁচ বছরের মেয়ের মাথায়। তখন বিছানায় ছিল রামুয়া। কাজলের দাবি, অবস্থা আঁচ করেই নিজের পিস্তলে গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন ঢুকিয়ে পাল্টা গুলি চালানোর চেষ্টা করছিল রামুয়া। কিন্তু তার আগেই আতাতায়ীরা রামুয়াকে গুলি করে তার পিস্তল নিয়ে চম্পট দেয়।

নয়ের দশক থেকে অপরাধ জগতে উত্থান শুরু শিবপুরের বাসিন্দা রাম দেবর ওরফে মাদ্রাসি রামুয়ার। যদিও অপরাধ জগতে তাকে সবাই আন্না বলেই ডাকত। নয়ের দশকে গোটা হাওড়া জুড়ে একাধিক কুখ্যাত অপরাধীর রাজত্ব। রেলের স্ক্র্যাপ ব্যবসা নিয়ে গ্যাং ওয়ার ছিল তখন রোজকার ঘটনা। সেই সময়েই ১৯৯৬ সালের ১৫ অগস্ট হাওড়া জুটমিলের মধ্যে ওই এলাকার অন্য এক কুখ্যাত দুষ্কৃতী মুন্না সাউকে খুন করে সবার সামনে তার মাথা কেটে দলবল নিয়ে ফুটবল খেলে রামুয়া। তখন থেকেই হাওড়ার বুকে সবচেয়ে নৃশংস অপরাধী হিসাবে কুখ্যাতি পায় রামুয়া

(আজকের তারিখে গুরুত্বপূর্ণ কী কী ঘটেছিল অতীতে, তারই কয়েক ঝলক দেখতে ক্লিক করুন— ফিরে দেখা এই দিন।)

হাওড়ায় সেই সময় কাজ করে আসা কয়েক জন পুলিশ কর্তার দাবি, অন্যদের পথে হেঁটে স্ক্র্যাপ ব্যাবসার দিকে খুব বেশি এগোয়নি রামুয়া। সে টার্গেট করে নেয় দক্ষিণ হাওড়ার নির্মাণ ব্যবসা। কারণ সেই সময় থেকে শিবপুর, বটানিক্যাল গার্ডেন, সাঁতরাগাছি-সহ সংলগ্ন এলাকায় তখন নির্মাণ ব্যাবসার রমরমা। সেই সময় রামুয়াকে তোলা না দিয়ে ব্যবসা করার ক্ষমতা দেখাতে পারেনি কোনও প্রোমোটারই।

আরও পড়ুন: ‘মাথা কেটে ফুটবল খেলা’ হাওড়ার সেই রামুয়া খুন! গভীর রাতে খড়দহের ফ্ল্যাটে ঢুকে গুলি

এরই মধ্যে বেশ কয়েক বার গ্রেফতার হয়েছে রামুয়া।কিন্তু কয়েক মাস কাটতে না কাটতেই ফের বেরিয়ে এসেছে জেল থেকে। কারণ আদালতে রামুয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার লোক জোগাড় করতে পারত না পুলিশ। এতটাই আতঙ্ক ছড়িয়েছিল ওই ডন। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, তার কারণও ছিল। হাওড়া জেলা জেল ছিল রামুয়ার নিজের বাড়ির মতই। সেখানে সে একবার খোদ জেলারকে পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দিয়েছিল।

আরও পড়ুন: ‘কুমারী মেয়ে ‘সিল্ড বটল’ বা ‘সিল্ড প্যাকেট’-এর মতো!’, বিতর্কিত পোস্ট শিক্ষকের

জেল থেকেই ব্যাবসা সামলাতো সে। রামুয়া জেলে থাকলে তার হয়ে গ্যাং দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল খুড়তুতো ভাই ভেঙ্কট রামান্না রাও ওরফে রাণার। এরই মধ্যে সাঁতরাগাছি ঝিল থেকে উদ্ধার হয় হাওড়ার দুই দুষ্কৃতী বিশু মণ্ডল এবং পিন্টু সাউয়ের ধড়হীন মুণ্ড। এরা দু’জনেই রামুয়ার বিরোধী হিসাবে পরিচিত ছিল। ওই ঘটনার চার মাস আগেই জামিনে মুক্ত হয়েছিল রামুয়া। তারপরই গা ঢাকা দেয়। সিআইডি ২০১০ সালে গ্রেফতার করে রাণাকে।

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ঘটনার পরই সিআইডি থেকে জেলা পুলিশ মরিয়া হয়ে ওঠে রামুয়াকে ধরতে। হাওড়া ছেড়ে দক্ষিণ ভারতে পালায় সে। চেন্নাইয়ে একটি মোবাইলের দোকানও খুলে বসে। সেখানেও পৌঁছে যায় পুলিশ কিন্তু ফস্কে যায় রামুয়া। বিভিন্ন জায়গায় গা ঢাকা দিয়ে থাকতে থাকতে শেষে ২০১২ সালে সোজা আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করে ওই ডন। ঘনিষ্ঠ মহলে সে বলেছিল, পুলিশ তাকে পেলে ‘এনকাউন্টার’ করে দিতে পারে। তাই সোজা আদালতে গিয়েছিল আত্মসমর্পণ করতে।

হাওড়ার অপরাধ জগতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কয়েক জনের দাবি, “রামুয়া দু’মাস আগে জামিনে মুক্ত হওয়ার কয়েক মাস আগেই হাওড়ার পাট চুকিয়ে সোদপুরের ভাড়ার ফ্ল্যাটে স্ত্রী এবং ছেলে মেয়েকে পাঠিয়ে দেয়। নিজেও জামিন পেয়েই আশ্রয় নেয় সোদপুরেই।” কিন্তু হাওড়ার অপরাধ জগতের অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ ছিল তার। অনেকেই নিয়মিত আসত ওই ফ্ল্যাটে। দক্ষিণ হাওড়ার বেশ কয়েক জন প্রোমোটারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখত সে। তাই হাওড়ার অপরাধ জগতের অনেকেই রামুয়ার নতুন ডেরার হদিশ জানত। কিন্তু রামুয়া কোনও দিন ভাবতে পারেনি তাকে ঘরে ঢুকে মারবে তার পরিচিতরাই।

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ নিশ্চিত, খুনের পেছনে আছে পরিচিতরা, যারা ওই ফ্ল্যাটে অনেকবার এসেছে। কারণ তারা জানত আবাসনের কোন কলিং বেলটা রামুয়ার ফ্ল্যাটের। আর পরিচিত না হলে কেন নীচে নেমে দরজা খুলে দিল রামুয়ার কলেজ পডুয়া ছেলে সমীর? তবে পুলিশকে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে রামুয়ার স্ত্রীর বয়ান এবং পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণ। রামুয়ার স্ত্রী দাবি করেছেন পুলিশের কাছে, নীচে ছেলেকে পিস্তলের মুখে আটকে রেখে ছিল বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতী। উপরে ফ্ল্যাটে উঠে এসেছিল সাত আটজন। আর এখানেই পুলিশ মেলাতে পারছে না। কারণ ছোট্ট ওই আবাসনে গভীর রাতে এত লোক এল, গুলি চালালো তারপরও রামুয়ার ঠিক পাশের ফ্ল্যাটের কেউ বা নিচের ফ্ল্যাটের কেউ কিছু টের পেলেন না! আর সেই কারণেই তদন্তকারীদের সন্দেহ রামুয়ার স্ত্রী কাজল হয়তো অনেক তথ্য লুকোচ্ছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ। এক পুলিশ কর্তা ২০০২ সালে বাগুইআটিতে কুখ্যাত অপরাধী আপেল খুনের উদাহরণ দেন। বাড়ির সামনে খুন হয়েছিল আপেল। পরে গোটা ঘটনায় উঠে এসেছিল আপেলের পরিবারের ভূমিকাও। সেই কারণেই কাজল এবং রামুয়ার পরিবারের বাকিদের ক্লিনচিট দিতে পারছে না পুলিশ।

(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেবাংলায় খবরজানতে পড়ুন আমাদেররাজ্যবিভাগ।)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Ramua Howrah রামুয়া Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy