হাহাকার: বড় ছেলে আয়ুষকে জড়িয়ে ঋষভের (ইনসেটে) বাবা সন্তোষকুমার সিংহ। শনিবার। ছবি: দীপঙ্কর দে
খিদে পেয়েছে? ব্যথা লাগছে ঋষভ? এসএসকেএমের কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের চিকিৎসকের ডাক শুনে চোখ দিয়ে জল গড়িয়েছিল সাত বছরের শিশুর। এসএসকেএম সূত্রের খবর, বাবা, পরিজনেরা সকলে বাইরে রয়েছেন জানার পরে ঠোঁট নেড়ে সম্মতি জানিয়েছিল সে। গত সোমবার সেই মুহূর্তের পরে আশাবাদী ছিলেন ঋষভের চিকিৎসকেরা। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে একটু একটু করে সেই আশা ফুরোতে থাকে। ঋষভের আট দিনের যুদ্ধের সাক্ষী এসএসকেএমের এক চিকিৎসক শনিবার দুপুরে বলেন, ‘‘মারাত্মক সংক্রমণের শিকার হয়ে পড়েছিল। ওটা থেকে যদি বেরোতে পারত...।’’
পুলকার দুর্ঘটনায় নয়ানজুলির কাদাজল, পাঁক একরত্তি শিশুর শরীরে বিপজ্জনক মাত্রায় ঢুকে শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়াকে মারাত্মক জখম করে। এসএসকেএম সূত্রের খবর, শ্রীরামপুরের বাসিন্দাকে যখন ট্রমা কেয়ারে আনা হয়, তখন ফুসফুস কাজ করছে না। ভেন্টিলেটরেও শিশুকে রাখা যাচ্ছে না। এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন যুক্ত হাওয়া পাঠানো হয়। ফুসফুসে অবস্থিত আলভিয়োলো ক্যাপিলারি মেমব্রেনে অক্সিজেন ঢোকে। রক্ত থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেরিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়া ঋষভের ক্ষেত্রে কাজ করছিল না।’’ বাইরে থেকে শরীরে জল ঢুকে এবং শরীরের ভিতরের জল জমে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়। সাধারণত মানুষের শরীরে প্রতি লিটার রক্তে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ থাকা উচিত ৩০-৪০। ঋষভের ক্ষেত্রে তা ছিল ১৩০। অক্সিজেনের মাত্রা কিছুতেই ৪০-৫০-এর বেশি উঠছিল না। যা লিটারপ্রতি ১০০-র উপরে থাকার কথা।
এই অবস্থায় ইকমো (এক্সট্রা কর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজিনেশন) বা কৃত্রিম ফুসফুসের সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রথমে তা কতখানি কার্যকর হবে, সে বিষয়ে সন্দিহান ছিলেন চিকিৎসকদের একাংশ। কিন্তু কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের চিকিৎসকেরা ইকমো প্রক্রিয়ায় চিকিৎসার কথা বললে সবুজ সঙ্কেত আসতে দেরি হয়নি।
আরও পড়ুন: ‘আর কোনও ঋষভ যেন না হারায়’
বস্তুত, সেই মুহূর্ত থেকে ঋষভের চিকিৎসায় কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের পাশে সর্বতোভাবে থাকার আশ্বাস দেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের প্রধান গৌতম সেনগুপ্ত এবং শুভেন্দুশেখর মহাপাত্রের নেতৃত্বে শুরু হয় খুদের চিকিৎসা। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘কার্ডিওথোরাসিক তো বটেই, এসএসকেএমের অন্য বিভাগের চিকিৎসকদেরও যখন ডাকা হয়েছে চলে এসেছেন। সকলের একটা দলগত প্রচেষ্টা ছিল।’’
যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চিকিৎসার দরুণ রক্ত যাতে জমাট না বাঁধে তার ওষুধও দেওয়া হচ্ছিল। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যানে কিছু ছিল না। সে জন্য চিকিৎসকের ডাকে সাড়া দিয়েছিল। পুরোপুরি নিরাশার জায়গা ছিল না। অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করলে অনেক খারাপ রোগী ফিরে আসে। মৃত্যুমুখ থেকে ফিরলে স্বাভাবিক জীবনেও ফিরতে পারত।’’
কিন্তু তা সম্ভব হল না কেন? চিকিৎসকদের একাংশ জানান, খুদের শরীরে এমন ব্যাক্টিরিয়া ছিল যাদের কিছুতেই কাবু করা যায় না। ব্যাক্টিরিয়াজনিত দূষিত পদার্থ (টক্সিক) শরীরের যত্রতত্র ঢুকে পড়লে হাত-পা ফুলতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার থেকে সেপ্টিক শকের দিকে চলে যায় ঋষভ। শুক্রবার বিকেল থেকে অকেজো হতে শুরু করে কিডনি, লিভার। এই পরিস্থিতিতে ইনট্রা-অ্যাওর্টিক বেলুন পাম্প (আইএবিপি) বসিয়ে শুক্রবার বিকালে খুদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। রাতে রক্তচাপ কমতে শুরু করে। শেষে ভোর পাঁচটা নাগাদ ঋষভকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ঋষভের খবর পাওয়ার পর থেকে মন ভাল নেই দিব্যাংশু ভগতের পরিজনদের। এ দিন দিব্যাংশুর মায়ের পিসি গৌরী ভগত জানান, দিব্যাংশু মাকে দেখতে না পেলে কাঁদছে। বিকালে সে চিকেন স্টু খেয়েছে। বাবাকেও ডেকেছে সে। এরই মাঝে উদাস ভাবে বলেন, ‘‘আশা ছিল, দু’জনে সুস্থ হয়ে ফিরবে। তা আর হল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy