Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Netaji Subhash Chandra Bose

সুভাষ কার, জোর টক্কর ভোট-বঙ্গে

১৯৪৩-এর সেই দিনগুলিতে জার্মানি থেকে জাপানের পথে সাবমেরিনে সঙ্গী সুভাষচন্দ্র এবং আবিদ হাসান।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৫৫
Share: Save:

সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৪তম জন্মজয়ন্তীতে তাঁর বীর সহযোদ্ধা আবিদ হাসানের ছায়া পড়বে এলগিন রোডের নেতাজি ভবনে। ২০২১ সালে নানা বিভাজনের শঙ্কায় দীর্ণ ভারত শুনবে দেশকে ভালবেসে এক অসামান্য বন্ধুতারও আখ্যান। জাতিধর্মের ঊর্ধ্বে একযোগে সবাই মিলে দেশের জন্য এই সংগ্রামই সুভাষচন্দ্রের আদর্শ বলে মনে করে তাঁর বাসভবনে স্থিত নেতাজি রিসার্চ বুরোও। আবিদ হাসানকে বুরোর তরফে মরণোত্তর নেতাজি সম্মান দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইতিহাসবিদ তথা সুভাষচন্দ্রের নাতি (ভ্রাতুষ্পুত্রের পুত্র) সুগত বসু। দেশের জন্য ওই লড়াই নেতাজিকে নিয়ে ভোটমুখী পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক দড়ি টানাটানির সম্পূর্ণ উল্টো মেরুতে।

১৯৪৩-এর সেই দিনগুলিতে জার্মানি থেকে জাপানের পথে সাবমেরিনে সঙ্গী সুভাষচন্দ্র এবং আবিদ হাসান। দেশের পরাধীনতার শিকল ভাঙাই দুই দুঃসাহসী তরুণের স্বপ্ন। সাবমেরিনে যেতে যেতে সুভাষ মহড়া দিচ্ছেন আসন্ন বক্তৃতার। আবিদ তাঁকে উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন। করোনাকালের ভারতে সুভাষ-জয়ন্তীর এই মুহূর্তটিতে কলকাতায় আসতে পারছেন না আবিদ সাহেবের ভাইঝি ইসমত মেহেদি। হায়দরাবাদে ইংরেজি সাহিত্যের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা ইসমত নেট-মারফত বক্তৃতা দেবেন। সুগতবাবুর কথায়, ‘‘আজকের ভারতে আবিদ হাসানকে স্মরণের মধ্যেও নেতাজির আদর্শকে খানিকটা বোঝার এই প্রয়াস তাৎপর্যপূর্ণ।’’

এই অনুষ্ঠান শেষে নেতাজি মূর্তির পাদদেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠানেও সুগত যাবেন। শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় থেকে শোভাযাত্রা করে তিনি ভূপেন বোস অ্যাভিনিউ, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, ধর্মতলা হয়ে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছবেন। একই দিনে কলকাতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অনুষ্ঠান। জাতীয় গ্রন্থাগার, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে মোদী থাকবেন। এলগিন রোডে নেতাজি ভবনেও তিনি থাকবেন বলে রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর। তবে এই বিষয়টি রাত পর্যন্ত তাঁরা অবগত নন বলে সুগতবাবু জানিয়েছেন। এমনকি কলকাতা ও

রাজ্য পুলিশের কর্তারাও জানান, বিষয়টি তাঁদের অবহিত করা হয়নি।

রবীন্দ্রনাথ বা বিবেকানন্দের পরে সুভাষচন্দ্রকে নিয়ে রাজনীতির এই টানাপড়েন যে ২৩ জানুয়ারি দেখা যাবে তা অবশ্য প্রত্যাশিত ছিল। সেই সঙ্গে ইতিহাসবিদেরা দিনটি পরাক্রম দিবস আখ্যা দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। রজতকান্ত রায় মনে করেন, “নেতাজির স্থান বাঙালি হৃদয়ে অনেক গভীরে। এই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন রাজনৈতিক। রবীন্দ্রনাথ, নেতাজিদের ব্যবহার করে বিজেপি ভোটে জিততে মরিয়া।” ‘পরাক্রম দিবস’ বলার মধ্যে নেতাজির ব্যক্তিত্বের প্রতি সুবিচার করা হয়নি বলেই মত ইতিহাসবিদ সুগত বসুরও। তিনি বলছেন, “নেতাজিকে সম্মান করা মানে তিনি যে ভারতবর্ষে বিশ্বাস করতেন, তাকে ভালবাসা। মনে রাখতে হবে, নেতাজি কোনও সঙ্কীর্ণ জাতীয়তাবাদী বা নিছকই পেশিবহুল জাতীয়তাবাদের ধারক ছিলেন না।”

এ দিনই দিল্লি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের নাম পাল্টে সুভাষচন্দ্রের নামে রাখবে বলে গুঞ্জন দানা বেঁধেছিল। এর কোনও সরকারি সমর্থন অবশ্য শুক্রবার রাত পর্যন্ত মেলেনি। তবে, বিষয়টি কানে যেতে ইতিহাসবিদেরাও বিরক্ত। "এমন ভাবনা উদ্ভট বিকৃতির শেষ কথা", বলে রজতবাবুর অভিমত। স্কুল ছাত্রছাত্রীদের বেলা ১২টা নাগাদ বাড়ি থেকে এ দিন শঙ্খধ্বনি করতে বলেছে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর।

অন্য দিকে, মোদী এ দিন বাংলায় টুইট করে তাঁর কলকাতায় আসার কথা জানিয়েছেন। ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে সুভাষচন্দ্র সংক্রান্ত এক আন্তর্জাতিক আলোচনাসভায় বক্তৃতা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে সুভাষচন্দ্রের উপরে একটি বইপ্রকাশের কথা তাঁর। এ দিন নেতাজি ও গুজরাতের হরিপুরার (যেখানে ১৯৩৮এ কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি হন সুভাষ) সম্পর্ক প্রসঙ্গেও টুইট করেন মোদী। বলেন, ‘‘আশা করব নেতাজির চিন্তাভাবনা ও আদর্শ শক্তিশালী, আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভর দেশ গড়তে সাহায্য করবে!”

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC Netaji Subhash Chandra Bose
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy