Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Supreme Court of India

রোগীর স্বাস্থ্য দেখবে কে, হাসপাতালের স্বাস্থ্যেরই ভগ্নদশা!

প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় জানান, চিকিৎসকদের জন্য বিশ্রামের কোনও ঘর নেই, ইন্টার্ণ, রেসিডেন্ট এবং নন-রেসিডেন্ট, প্রত্যেককে ৩৬ ঘন্টার মতো ডিউটি করতে হয় এমন এক পরিবেশে যেখানে স্বাস্থ্যের ন্যূনতম মাপকাঠিও পালন করা হয় না।

Representative Image

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৪ ০৮:২৭
Share: Save:

২০১১ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের এক রিপোর্ট জানিয়েছিল, ভারতের ‘টিয়ার-থ্রি’ শহরগুলিতে ‘লেবার রুম’ ও সদ্য প্রসূতিদের ওয়ার্ডগুলির মতো (পোস্ট নেটাল কেয়ার ওয়ার্ড) স্পর্শকাতর ওয়ার্ডেও শৌচালয়ের অবস্থা শোচনীয়। কারণ, ‘লেবার রুম’ ও ‘পোস্ট নেটাল কেয়ার ওয়ার্ড’-এ ব্যবহারযোগ্য শৌচালয়ের শতকরা হার যথাক্রমে ১৯.২ এবং ৩.২ শতাংশ!

রিপোর্টটি আরও জানায়, দেশের কমপক্ষে ১৫% রোগীর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাতেই নানা ধরনের সংক্রমণ হয়। আর এ সবের মূলই হল হাসপাতালের নিজস্ব স্বাস্থ্য সম্পর্কে চরম উদাসীনতা। মঙ্গলবার আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে শুনানির সময়ে মূল তদন্ত, হাসপাতালে ভাঙচুর, নিরাপত্তার পাশাপাশি এই ‘হসপিটাল হাইজিন’-এর প্রসঙ্গই একাধিকবার উঠে এল সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে।

প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় জানান, চিকিৎসকদের জন্য বিশ্রামের কোনও ঘর নেই, ইন্টার্ণ, রেসিডেন্ট এবং নন-রেসিডেন্ট, প্রত্যেককে ৩৬ ঘন্টার মতো ডিউটি করতে হয় এমন এক পরিবেশে যেখানে স্বাস্থ্যের ন্যূনতম মাপকাঠিও পালন করা হয় না। ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর প্রাক্তন অধিকর্তা অরুণাভ মজুমদার বলছেন, ‘‘হাসপাতাল-স্বাস্থ্যের প্রধান শর্তই হল, শৌচালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করার মতো পরিকাঠামোর ন্যূনতম মাপকাঠিগুলি।’’ তবে সেই ন্যূনতম মাপকাঠিগুলিই সরকারি হাসপাতালগুলিতে পালন করা হয় না বলে অভিযোগ করেন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দীপক ধর চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘কোভিড সংক্রমণের সময়ে অনেক চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে শুধু হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতার অভাবে। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি পাল্টায়নি।’’

অথচ চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, হাসপাতালের শৌচালয়, বিশেষ করে মহিলাদের শৌচালয়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শহরের প্রধান এক সরকারি হাসপাতালের এক স্ত্রী রোগ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘সাধারণত মহিলাদের দ্রুত সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। বিশেষত শৌচালয় পরিষ্কার না থাকলে সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়।’’

কোভিডের সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের তরফে গঠিত যৌথ কমিটি (জয়েন্ট মনিটরিং কমিটি) হাসপাতালের নিজস্ব স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য শুধুমাত্র তিনটি বিষয়ের উপরে গুরুত্ব দিয়েছিল।—পরিস্রুত জল সরবরাহ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শৌচালয় ও সাবান-জল দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস। কমিটির রিপোর্ট জানিয়েছিল, প্রতি পাঁচটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিকাশি, পানীয় জল সরবরাহের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার জন্য বিশ্বে প্রায় দেড়শো কোটি মানুষ সংক্রমণে আক্রান্ত হন।

তবে অপরিচ্ছন্নতার কারণে হাসপাতালজনিত সংক্রমণের (হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড ইনফেকশন) হার আগের থেকে কমেছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ন্যূনতম সচেতনতার অভাব ও সরকারি হাসপাতালে প্রতি দিন রোগীর বিপুল সংখ্যা, প্রতিবন্ধকতার মূলত এই দু’টো কারণ। এ ছাড়া অন্য কারণও রয়েছে। তবে আগের থেকে হাসপাতালজনিত সংক্রমণের হার ভাল হয়েছে। এ নিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর কর্মশালা হয়, সেখানে এ নিয়ে আলোচনা হয়।’’

কিন্তু তা কি পর্যাপ্ত? সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ তেমন আশ্বাস দিচ্ছে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Supreme Court of India CJI DY Chandrachud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy