প্রতীকী চিত্র।
কেন্দ্র প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিকের সব পড়ুয়াকে দুপুরে রান্না খাবার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে। কারণ, ১৬ নভেম্বর নবম থেকে দ্বাদশ, এই চারটি শ্রেণির পড়ুয়াদের ক্লাস চালুর সিদ্ধান্ত হলেও প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের কাছে স্কুল বন্ধই থাকছে। অথচ ওই আটটি শ্রেণির পড়ুয়ারাই দুপুরে রান্না খাবার পায়। তাদের ক্লাস কবে চালু হবে, তার নির্দিষ্ট দিন ঘোষণা করেনি রাজ্য সরকার। প্রশ্ন উঠছে, দুপুরে রান্না খাবার দেওয়ার নির্দেশ পালন করা হবে কী ভাবে?
দীর্ঘায়িত অতিমারিতে অক্ষরজ্ঞান থেকে অঙ্ক পর্যন্ত শিক্ষার প্রায় সব কিছু ভুলে যাওয়ার পাশাপাশি রান্না করা মিড-ডে মিলের অভাবে অসংখ্য শিশু অপুষ্টির শিকার বলে শিক্ষা শিবিরের পর্যবেক্ষণ। এই অবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের বক্তব্য, অনেক রাজ্যেই প্রাথমিক স্কুল খুলে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও দ্রুত প্রাথমিক আর উচ্চ প্রাথমিকের ক্লাস চালু করে দেওয়া হোক। অন্যথায় ওই দুই স্তরের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষতির পাশাপাশি তাদের অপুষ্টির মাত্রাও ক্রমশ বাড়তেই থাকবে।
কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতর থেকে ‘প্রধানমন্ত্রী পোষণ শক্তি নির্মাণ’ নামে মিড-ডে মিল বিতরণ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়ারা যাতে আবার দুপুরে রান্না করা খাবার পায়, সেই বিষয়ে সব রাজ্য সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের পুষ্টির বিষয়টি যাতে অবহেলিত না-হয়, সেই ব্যাপারে নজর রাখতে হবে রাজ্যকেই।
প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, প্রায় দেড় বছর ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় পড়ুয়ারা রান্না খাবার পাচ্ছে না। মাসে এক দিন মিড-ডে মিলের সামগ্রী তুলে দেওয়া হচ্ছে তাদের অভিভাবকদের হাতে। রান্না খাবার নিশ্চিত করতে হলে অবিলম্বে তাদেরও ক্লাস চালু করা দরকার। লাভপুর সত্যনারায়ণ শিক্ষা নিকেতন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কোভিড বিধি মেনে প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। কারণ, ওই পড়ুয়ারা পড়াশোনা ও পুষ্টি দু’দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মনীষাদেবী বলেন, ‘‘এখন প্রতি মাসে পড়ুয়াদের চাল, ডাল দেওয়া হচ্ছে ঠিকই। তবে তা কোনও ভাবেই হতে স্কুলে রান্না করা মিড-ডে মিলের বিকল্প পারে না।’’ তাঁর প্রশ্ন, ওই চাল-ডাল-আলুর পুরোটাই কি পড়ুয়ারা পাচ্ছে, না তাদের পুরো পরিবারই তা ব্যবহার করছে? অভিযোগ উঠছে, স্কুল খোলা থাকা অবস্থায় পড়ুয়াদের মাঝেমধ্যে ডিম দেওয়া হত। সেটাও তারা পাচ্ছে না ওরা। গ্রামীণ এলাকার বহু পড়ুয়া, বিশেষত মেয়েরা অপুষ্টিতে ভুগছে। তাই করোনা বিধি মেনে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল খোলা জরুরি বলে জানাচ্ছেন শিক্ষকদের বড় অংশ।
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হণ্ডার অভিযোগ, সামগ্রিক শিক্ষার নিরিখে প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও তা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই। প্রায় দেড় বছর পড়াশোনা না-হওয়ায় বহু খুদে পড়ুয়া যে অক্ষরজ্ঞান পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে, সেটা ইতিমধ্যেই সমীক্ষায় প্রকাশিত। বহু পড়ুয়ার পুষ্টি তলানিতে ঠেকেছে বলেও তথ্য মিলছে। স্কুল না-খুললে রান্না খাবার দেওয়া সম্ভব নয়।
আনন্দবাবুদের বক্তব্য, শিক্ষার দৈনন্দিন প্রবাহে শিশুদের ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের পাতে রান্না খাবার পৌঁছে অবিলম্বে প্রাথমিক স্তর থেকে স্কুল চালু করা জরুরি। এই দাবিতে আজ, সোমবার সারা বাংলা ‘দাবি দিবস’ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, ডিআই, চেয়ারম্যানদের স্মারকলিপি পেশ, অবস্থান-মিছিলের মাধ্যমে দাবি দিবস পালন করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy