দমদমের জেসপ কারখানার অগ্নিকাণ্ডে অন্তর্ঘাতের ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিল সিআইডি। এ বার বারবার আগুন লাগা ও চুরির বিষয়ে কারখানার মালিক পবন রুইয়াকে ভবানীভবনে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত নিলেন তদন্তকারীরা। সিআইডি সূত্রে খবর, কালীপুজোর আগেই তদন্তকারীদের সামনে হাজির হওয়ার জন্য সমন পাঠানো হবে রুইয়াকে।
বুধবার সিআইডির তরফে অন্তর্ঘাতের ইঙ্গিত মেলার পরেই কারখানার মালিক পবন রুইয়াকে গ্রেফতারের দাবি তোলেন দমকলমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। ওই রাতে দমকলমন্ত্রীর বাড়িতেও যান পবন। কিন্তু জেসপ কারখানার ভিতরে একের পর আগুন ও চুরির প্রশ্নে সরকার যে কড়া অবস্থান থেকে সরছে না, তা রুইয়াকে তলবের সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট। বৃহস্পতিবার ওই কারখানায় যান শোভনবাবু। সেখানে তিনি সাফ জানান, এ বারের অগ্নিকাণ্ডের পিছনে স্পষ্ট অন্তর্ঘাতের প্রমাণ থাকায় রুইয়ার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশ ওই কারখানার পাহারায় থাকলেও জেসপ কর্তৃপক্ষ চুক্তিমাফিক তাদের খরচ দেননি বলেও অভিযোগ দমকলমন্ত্রীর। সোমবারের অগ্নিকাণ্ড ও চুরির ঘটনায় রাজ্য সরকার অভিযোগ দায়েরের পরেই পবন রুইয়া তাঁর সঙ্গে জেসপের সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছিলেন। জেসপ কারখানার মালিকানার তথ্য জানতে রেজিষ্ট্রার অব কোম্পানিজের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভবানী ভবনের গোয়েন্দারা। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘সামনের সপ্তাহে রুইয়াকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের আগে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব তথ্য একত্রিত করতে চাইছি।’’
সিআইডি জানিয়েছে, পবন রুইয়া দমদমের ওই কারখানার দায়িত্ব হাতে নেওয়ার সময়কার সম্পত্তির তালিকার সঙ্গে বর্তমানে ওই কারখানার ভিতর কত সম্পত্তি রয়েছে, তা মিলিয়ে দেখা হবে। তাতেই বেরিয়ে আসবে, রুইয়াদের হাতে থাকাকালীন চুরি বা আগুনে কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে? তদন্তকারীরা জানান, ২০১০-এর পরে রুইয়া ২০১৫-এ কারখানার সম্পত্তির একটি তালিকা করেছিলেন। সংস্থার অন্য আধিকারিকদের কাছ থেকে সেই হিসেব চাওয়া হয়েছে। অন্য দিকে আজ, শুক্রবার ব্যারাকপুরে শ্রম কমিশনারের দফতরে জেসপের কর্মী সংগঠন ও সেখানকার কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করবেন ডেপুটি শ্রম কমিশনার। শ্রম দফতরের বক্তব্য, রাজ্য সরকার এখন ৪৯৬ জন শ্রমিককে প্রতি মাসে দশ হাজার টাকা করে অনুদান দিচ্ছে। সেই অনুদান তাদের কাছে পৌঁছচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতেই এই বৈঠক।
ভবানী ভবন সূত্রে খবর, জেসপ-কাণ্ডে সিআইডির স্পেশাল সুপার শুভঙ্কর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) তৈরি হয়েছে। চুরির ঘটনায় দমদম থানার হাতে গ্রেফতার হওয়া চার দুষ্কৃতীর মধ্যে ছোট্টু রায় ও প্রশান্ত মণ্ডলকে এ দিন নিজেদের হেফাজতে নিয়েছেন তারা। ধৃত অন্য দুই দুষ্কৃতী সুমিত ভট্টাচার্য ও পালান অধিকারী রয়েছেন জেল হেফাজতে।
জেরার পরে তদন্তকারীরা জানান, ছোট্টু ও প্রশান্ত কারখানা থেকে মাল চুরি করে বাইরে বিক্রি করত। আদতে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা প্রশান্তর বাড়ি ওই এলাকাতেই। পেশায় মিস্ত্রি প্রশান্তকে কারখানার ভিতর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে তদন্তকারীদের দাবি, এই দু’জনকে ধরা হলেও তারা বড় মাপের চোর নয়। জেসপ কারখানায় লাগাতার চুরির পিছনে বড়সড় দুষ্কৃতী দল জড়িত বলে প্রাথমিক ভাবে জেনেছেন গোয়েন্দারা। এক তদন্তকারীর দাবি, ধৃতদের জেরায় তাঁরা জানতে পেরেছেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি চক্র এই মাল চুরি চক্রে জড়িত। চক্রের সদস্যরা বড় বড় লরি বা ট্রাক নিয়ে জেসপ কারখানার পাঁচিলের ভাঙা অংশ দিয়ে ভিতরে ঢুকত। সেখানে থাকা বেশ কয়েক জন তাদের গাড়িতে মাল তুলে দিত। সিআইডির অনুমান, চক্রে কারখানার বেশ কয়েক জনও রয়েছেন। মূলত তাঁদের সাহায্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই চক্রটি দিনের পর দিন কারখানা থেকে মাল সরিয়েছে। তার পরিমাণ কত, তা খতিয়ে দেখছেন সিআইডি কর্তারা।
এর পাশাপাশি সিআইডি জানায়, ওই কারখানার ভিতরে চারটি নির্দিষ্ট জায়গাতেই বারবার আগুন লাগে। সেই জায়গাগুলিতে নিরাপত্তা রক্ষী থাকা এবং কারখানার ভিতরে বিদ্যুৎ সংযোগ না-থাকা সত্ত্বেও যে ভাবে ক়়ড়িবরগা পুড়েছে, তাতে পরিষ্কার যে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই কর্মীদের নামের তালিকা তৈরি করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy